যন্ত্রে-ছাপা স্বাক্ষরের জন্য বব ডিলানের দুঃখ প্রকাশ

২০১৯ সাল থেকে ‘অটোপেনে’ ডিলানের সই করা বই ও শিল্পকর্ম বিক্রির কথা তার প্রকাশক স্বীকার করেছেন।

গ্লিটজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 28 Nov 2022, 02:48 PM
Updated : 28 Nov 2022, 02:48 PM

বই ও অন্য শিল্পকর্মে যন্ত্রের মাধ্যমে ছাপা নিজের স্বাক্ষরের অনুলিপি ব্যবহারের জন্য দুঃখ প্রকাশ করেছেন নোবেলজয়ী গীতিকার ও শিল্পী বব ডিলান।

২০১৯ সাল থেকে এই যন্ত্রের মাধ্যমে ডিলানের সই করা বই ও শিল্পকর্ম বিক্রির কথা তার প্রকাশক স্বীকার করেছেন, যার পরিপ্রেক্ষিতে বিবৃতি দিয়ে ডিলান দুঃখ প্রকাশ করেন বলে বিবিসি জানিয়েছে।

বিরল ওই বিবৃতিতে বব ডিলান জানান, ‘নিজ হাতে সই করা’- হিসেবে এই যন্ত্রে-স্বাক্ষর ব্যবহার করার সিদ্ধান্ত একটি ‘বিবেচনা বোধের ভুল’ ছিল এবং এজন্য তিনি অনুতপ্ত।

শুক্রবার প্রকাশিত ওই বিবৃতিতে এই কিংবদন্তি শিল্পী বলেন, ২০১৯ সাল থেকে ‘ভার্টিগো’ বা ‘মাথা ঝিমঝিম করা’ রোগে আক্রান্ত হওয়ার পর তিনি স্বাক্ষর করার জন্য একটি ‘অটোপেন’ ব্যবহার করা শুরু করেন।

ডিলানের লেখা বই ‘দ্য ফিলোসফি অব মডার্ন সং’র একটি সীমিত-সংস্করণ ৬০০ ডলারে কেনার পর সেখানে থাকা শিল্পীর স্বাক্ষর এবং শিল্পীর নিজ হাতের স্বাক্ষর মিলিয়ে দেখার পর একটি ছবি একজন ভক্ত প্রকাশ করলে বিষয়টি আলোচনায় আসে।

বইয়ের প্রকাশনা সংস্থা সিমন অ্যান্ড শুসটার প্রথমে সীমিত-সংস্করণ হিসেবে আদায় করা বাড়তি দাম দিতে রাজি হয়নি। তারা দাবি করছিল, বইয়ে লেখকের স্বাক্ষরটি আইনসিদ্ধ এবং একটি ‘লেটার অব অথেনটিসি’র মাধ্যমে যাচাই করা আছে।

তবে বারবার চাপ দেওয়ার পর, তারা স্বীকার করতে বাধ্য হয় যে বইয়ে ডিলানের যে সইটি রয়েছে, তা একটি ‘অটোপেনের মাধ্যমে করা অনুলিপি’, স্বহস্তে সই নয়। ‘লেখকের স্বহস্তে সই করা’ হিসেবে বিক্রি করা ৯০০ কপি বই যারা কিনেছেন, তাদের সবাইকেই পুরো অর্থ ফেরত দেওয়ারও প্রস্তাব দিয়েছে প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানটি।

তবে আলোচনা এখানেই থামছে না, বরং এ ধরনের স্বাক্ষর ব্যবহার করে বিক্রি করা ডিলানের শিল্পকর্মগুলো নিয়েও এখন প্রশ্ন উঠেছে, যেগুলোর দাম ১৫ হাজার ডলার পর্যন্ত হতে পারে।

শুক্রবারের বিবৃতিতে ডিলান বলেছেন, “আমার প্রতিটি শিল্পকর্মে আমি বছরের পর বছর নিজেই সই করে আসছি এবং কখনোই সমস্যা হয়নি।

“কিন্তু ২০১৯ সালে আমার ভার্টিগো হয় এবং মহামারীর বছরগুলোতেও এই রোগে কাবু ছিলাম। যার কারণে ওই সময় পাঁচজন সহকারীর একটি দল আমাকে ওই সময় এই স্বাক্ষরগুলো করার কাজে সহযোগিতা করে। মহামারীর পরিস্থিতির কারণে স্বাক্ষর করার এরচেয়ে নিরাপদ ও কার্যকর কোনো উপায় তখন আমরা খুঁজে পাইনি।  

“সুতরাং, মহামারীর সময়, সশরীরে সামনাসামনি উপস্থিত হয়ে কোনো কিছুতে স্বাক্ষর করা ছিলো দুরূহ একটি বিষয় এবং ভার্টিগোর কারণেও তা সম্ভব হচ্ছিলো না। এদিকে প্রকাশনা সংস্থার সঙ্গে চুক্তির মেয়াদ শেষ হয়ে আসতে থাকায় আমার কাছে ‘অটো-পেন’ ব্যবহারের বিকল্পটি তুলে ধরা হয়, এবং আমাকে জানানো হয় শিল্প ও সাহিত্য কর্মে এই ধরনের স্বাক্ষরের চল ‘সব সময়’ই চলে আসছে।”

“যন্ত্র ব্যবহার করে স্বাক্ষর করার সিদ্ধান্তটি আমার বিবেচনা বোধের ভুল ছিল এবং আমি তাৎক্ষণিকভাবে এটা শুধরে নিতে চাই। সিমন অ্যান্ড শুসটারের সঙ্গে এবং আমার গ্যালারি পার্টনারদের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে আমি কাজ করছি,” বলেন তিনি।

ডিলানের চিত্রকর্ম বিক্রি করা প্রতিষ্ঠান যুক্তরাজ্যের ক্যাসল ফাইন আর্ট এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, তারা এই ‘অটোপেনের ব্যবহারের বিষয়টি নিয়ে একদমই জানতো না’। প্রতিষ্ঠানটি বলছে, ২০২২ সালে প্রকাশ করা মাত্র দুটো চিত্রকর্ম সংগ্রহের মধ্যে এই স্বাক্ষর-সংক্রান্ত জটিলতা দেখা দিতে পারে। বাকি চিত্রকর্মগুলোতে ডিলান নিজের হাতেই সই করেছেন।

যারা অটোপেনের স্বাক্ষর যুক্ত চিত্রকর্ম কিনেছেন তাদের অর্থ ফেরত দেওয়ার কথাও জানিয়েছে ক্যাসল ফাইন আর্ট। সেক্ষেত্রে ক্রেতাকে ওই চিত্রকর্মটি ফেরত দিতে হবে।

১৮০৩ সালে যুক্তরাষ্ট্রে প্রথম এই ‘অটোপেন’ এর পেটেন্ট নিবন্ধন করা হয় এবং এরপর থেকে যন্ত্রের মাধ্যমে ব্যক্তির সইয়ের নকল ব্যবহার করার বিষয়টি অনুমোদন পায়। যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট টমাস জেফারসন ছিলেন শুরুর দিককার একজন ব্যবহারকারী, যিনি হোয়াইট হাউজ ও তার মন্টিসেলোর বাড়িতে সই করার জন্য দুটো যন্ত্র কিনেছিলেন।

বর্তমানে এ ধরনের স্বাক্ষর অনুলিপি তৈরির ব্যবস্থায় ‘রোবট হাত’ ব্যবহার করা হয়। যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা প্রথম প্রেসিডেন্ট হিসেবে নতুন প্রযুক্তির এই অটোপেন ব্যবহার করে এ সংক্রান্ত বিলে সই করেন যা সেদেশে এখন আইনে পরিণত হয়েছে। অটোপেন এখন শিল্প ও সংস্কৃতির দুনিয়ায় একটি প্রচলিত প্রযুক্তি।