আগামী শুক্রবার কিংবা তার পরের শুক্রবার মুক্তির চিন্তাভাবনা করছেন নির্মাতা।
Published : 21 Jan 2023, 09:39 PM
গুলশান হামলা নিয়ে চার বছর ধরে আটকে থাকা ‘শনিবার বিকেল’র ছাড় পাওয়ার খবর শুনে তা দ্রুত সময়ের মধ্যে মুক্তি দেওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করলেন চলচ্চিত্রটির নির্মাতা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী।
শনিবার সন্ধ্যায় তিনি ফেইসবুকে লেখেন, “আপনাদের মতো আমিও পত্রিকা মারফত জেনেছি, আপিল বোর্ড ‘শনিবার বিকেল’ ছবিটা ছেড়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। উনারা হয়তো উনাদের ছোট কিছু অবজারভেশন জানাবেন যেটা ডিটেইল এখানে আলোচনা করতে চাচ্ছি না।
“আমরা আশা করি, উনারা দ্রুতই আমাদের এই বিষয়ে চিঠি দিবেন; যাতে আগামী শুক্রবার বা তার পরের শুক্রবার ছবিটা মুক্তি পায়। মোট কথা ফারাজের সাথে বা আগেই ছবিটা মুক্তির ব্যবস্থা করবো ইনশাল্লাহ।”
হলি আর্টিজান বেকারিতে হামলা নিয়ে ভারতে নির্মিত সিনেমা ‘ফারাজ’ আগামী ৩ ফেব্রুয়ারি মুক্তি দেওয়া হবে বলে সম্প্রতি ঘোষণা আসে।
এরপর নতুন করে ‘শনিবার বিকেল’ নিয়ে সরব হন অনেকেই। এর মধ্যে ফারুকীর করা আপিল আবেদন নিয়ে শনিবার শুনানিতে বসে আপিল বোর্ড।
শনিবারে ছাড়পত্র পেল ‘শনিবার বিকেল’, চিঠির অপেক্ষায় ফারুকী
এ নিয়ে সেন্সর বোর্ড আনুষ্ঠানিক বক্তব্য না দিলেও আপিল কমিটির সদস্য শ্যামল দত্ত গ্লিটজকে বলেছেন, “সেন্সর বোর্ড যে সমস্যাগুলোর কথা বলেছে, আমরা তার সাথে একমত হইনি। এখন আর কোনো বাধা নেই। আমরা রিলিজ করে দিয়েছি ছবিটা। খুব শিগগিরই মুক্তি পাবে।”
গুলশানের হলি আর্টিজানে ২০১৬ সালের ঝড় তোলা জঙ্গি হামলার প্রেক্ষাপটে ‘শনিবার বিকেল’ সিনেমাটি বানিয়েছেন জনপ্রিয় নির্মাতা ফারুকী। এতে জাহিদ হাসান, পরমব্রত, তিশা, ইরেশ যাকেরের সঙ্গে ফিলিস্তিনি অভিনেতা ইয়াদ হুরানিও অভিনয় করেছেন।
২০১৯ সালে সেন্সর বোর্ডের সদস্যরা দুবার দেখার পর এটি আটকে দেন মূলত বোর্ডে থাকা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধির আপত্তিতে। তখন বলা হয়েছিল, ‘স্পর্শকাতর’ বিষয়টি নিয়ে নির্মিত চলচ্চিত্রটি মুক্তি পেলে দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হতে পারে।
যদিও এই নির্মাতা বরাবরই বলে আসছিলেন, চলচ্চিত্রটি হলি আর্টিজান বেকারিতে হামলার ঘটনা নিয়ে নয়, ওই ঘটনার ‘অনুপ্রেরণায়’ নির্মিত একটি কাহিনীচিত্র।
বাংলাদেশ-ভারত-জার্মান এই তিন দেশের যৌথ প্রযোজনায় সিনেমাটি বানাতে টানা ১৫ দিন মহড়ায় মাত্র ৭ দিনেই শুটিং শেষ করেন ফারুকী।
এরপর বিদেশের বিভিন্ন চলচ্চিত্র উৎসবে সিনেমাটি প্রদর্শিত এবং প্রশংসিত হলেও দেশে সেন্সর বোর্ড এটি আটকে দেয়।
শুক্রবার পোস্টের শুরুতে সেই বেদনার কথা প্রকাশ করতে গিয়ে ফারুকী লিখেছেন, “কেমন অনুভূতি হয় যখন আপনি দেখেন সারা দুনিয়া ছুটে চলেছে, আর আপনি একাই থেমে? ভীষণ অপ্রয়োজনীয় লাগে নিজেরে! এই কয় বছর তাই লাগছিলো!
“বাইরে থেকে কি মনে হয় জানি না, ভেতরে ভেতরে শিল্পীদের মতো একাকী মানুষ আর কেউ নাই! গত চারবছর ধরে শনিবার বিকেল নিয়ে যখন স্ট্রাগল করতেছিলাম, তখন নিজেরে অদরকারী ভাবার সাথে যে অনুভূতিটা আমাকে গ্রাস করতো সেটা হলো একাকীত্ব।
”সিনেমাটির মুক্তির লড়াইয়ে যারা ছিলেন, তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে ‘ব্যাচেলর’ নির্মাতা বলেন, “কিন্তু এই কয় মাস শনিবার বিকেলের মুক্তির দাবিতে ফিল্ম অ্যালায়েন্স বাংলাদেশের কলিগ, আমাদের দর্শক ভাই-বোন এবং সমাজের সব স্তরের মানুষ যেভাবে কণ্ঠ উঁচু করেছেন, তাতে আমি আর একা বোধ করি নাই।
“মনে হয়েছে- আমি অনেকের সাথে আছি, মাঝে আছি। আপনাদের সবার কাছে আমি কৃতজ্ঞ। ছবিটার মুক্তির জন্য নেপথ্যে যে ভাই-বোনেরা কাজ করেছেন, তাদের সবাইকে সালাম। পত্র-পত্রিকা, ফেসবুক পেজ বা গ্রুপ সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা।”সেন্সর বোর্ডের আপিল বিভাগের সদস্যদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানানোর পাশাপাশি দেশের সেন্সর ব্যবস্থাপনা নিয়েও কথা বলেছেন ফারুকী।“
এই সুযোগে আমি আপিল বিভাগের বিজ্ঞ সদস্যদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাতে চাই। শেষে একটা কথা বলতে চাই, আমার মতো এই অভিজ্ঞতার ভিতর দিয়ে যেনো কোনো ফিল্মমেকার না যায়। আমরা বাঁচি আর কয় দিন। কাজের সময় খুব কম। এইভাবে তা অপচয়ের কোনো মানে নাই।”
শেষে প্রশান্তি প্রকাশ করে ফারুকী লিখেছেন, “সবাই ভালো থাকবেন। আমি এখন একটু ঘুমাবো।”