মেয়েদের গল্প পর্দায় বলতে হলে, মেয়েদের বলাই ভালো– এমন সংকীর্ণ মনোভাবের সঙ্গেই লড়তে হবে বলে মনে করেন ‘রক্তবীজ’-এর চিত্রনাট্যকার জিনিয়া সেন।
Published : 20 Oct 2023, 06:55 PM
পূজায় মুক্তি পেয়েছে পশ্চিমবঙ্গের নির্মাতা জুটি নন্দিতা রায় ও শিবপ্রসাদ মুখার্জি পরিচালিত সিনেমা ‘রক্তবীজ’। সত্য ঘটনা অবলম্বনে নির্মিত এ সিনেমার গল্প যৌথভাবে লিখেছেন জিনিয়া এবং শর্বরী ঘোষাল।
আনন্দবাজার লিখেছে, সাসপেন্স থ্রিলার ‘রক্তবীজ’-এ নারী সম্পর্কিত গৎবাঁধা ধারণা ভাঙতে ময়দানে নেমেছেন নারীরাই।
পত্রিকাটি লিখেছে, গত কয়েক বছর ধরে একটা কথা খুব শোনা যাচ্ছে, মেয়েদের গল্প পর্দায় বলতে হলে, মেয়েদের বলাই ভালো; ছেলেরা হয়তো মেয়েদের দৃষ্টিভঙ্গি থেকে গল্প বলতে পারবেন না। তার অর্থ দাঁড়ায়, ‘বার্বি’ মানেই নারী পরিচালক আর ‘ওপেনহাইমার’ মানেই পুরুষ পরিচালক। তাই বলে কি নারীরা যুদ্ধের সিনেমা, বায়োপিক, সুপারহিরো সিনেমা, গুপ্তচরের সিনেমা বানাবেন না?
এই ধরনের সংকীর্ণ মনোভাবের সঙ্গে লড়তে হবে বলে মনে করেন ‘রক্তবীজ’-এর চিত্রনাট্যকার জিনিয়া সেন।
জিনিয়ার মতে, “মেয়েরা শুধু মেয়েদের গল্প বলবে– এই ধরনের চিন্তাধারাই আমাদের ভাঙতে হবে। যখন আমি লিখছিলাম, আমি খুব স্পষ্টভাবে বলেছিলাম, আমার গল্পে দুজন চরিত্র রয়েছে। একজন দলের নেতৃত্ব করবে। তার মাথা ঠাণ্ডা।
“তাকে অনেক কথা ভেবে কাজ করতে হয়। খুব প্রয়োজন না হলে সে গুলি চালানোর পক্ষপাতী নয়। অন্যজন হবে অনেক বেশি অ্যাগ্রেসিভ। তার মাথা চট করে গরম হয়ে যায়। গুলি চালাতে সে এক দণ্ডও ভাবে না।”
চিত্রনাট্যকার বলেন, “আমি প্রথম থেকেই বলেছিলাম, মেয়েটা হবে অ্যাগ্রেসিভ আর ছেলেটা শান্ত। তাতে লেখার সময় অনেকে সন্দেহ প্রকাশ করে, এতে ছেলেটার হিরোইজ়ম কমে যাবে না তো? এই ধরনের প্রচুর প্রচলিত ধারণা আমাদের চারপাশে রয়েছে। সেগুলো ভাঙাটাই আসল চ্যালেঞ্জ।”
সাধারণত থ্রিলারধর্মী সিনেমায় মুখ্য চরিত্রে নারী অভিনয়শিল্পী থাকলেও, সন্ত্রাসবাদ, দেশপ্রেমভিত্তিক সিনেমায় মুখ্য চরিত্রে একজন পুরুষ অভিনেতাকেই দেখা যায়। সেদিক থেকে ‘রক্তবীজ’ ব্যতিক্রম।
এ সিনেমায় এক ভয়াবহ ঘটনার তদন্ত এগিয়ে চলে দুজন পুলিশ অফিসারের যুগলবন্দিতে। একজন কেন্দ্রের (আবীর চট্টোপাধ্যায় অভিনীত), অন্যজন রাজ্যের (মিমি চক্রবর্তী অভিনীত)। সিনেমায় দুটি গুরুত্বপূর্ণ গুলির দৃশ্য রয়েছে, যা পর্দায় চালিয়েছেন মিমিই।
এ প্রসঙ্গে সিনেমার আরেক গল্পকার শর্বরী বলেছেন, লেখালেখির সময় নারী-পুরুষ নিয়ে আলাদা করে কখনো ভেবে দেখেননি তিনি।
শর্বরীর ভাষ্যে, “কিরণ বেদী যদি প্রজাতন্ত্র দিবসে অল মেন’স ক্যাভালরি লিড করতে পারেন, তা হলে মেয়েরা থ্রিলার লিখতে পারবে না কেন? জোইয়া আখতারকে দেখুন, কত ধরনের সিনেমা করছেন। মেয়েদের শুধু মেয়েদেরই গল্প বলতে হবে, এসব ধারণা এখন আর চলে না।’’
রক্তবীজ এর কাহিনী গড়ে উঠেছে একটি সত্য ঘটনা ঘিরে। ২০১৪ সালে বর্ধমানের খাগড়াগড়ে একটি দোতলা বাড়ি কেঁপে ওঠে ভয়াবহ বিস্ফোরণে। ঘটনাস্থলে পুলিশ পৌঁছালে ভেতরে থাকা দুই নারী জানিয়ে দেন, তাদের ধরার চেষ্টা করা হলে পুরো ভবন উড়িয়ে দেবেন বোমা মেরে।
পরে দুই নারীকে গ্রেপ্তার করে সেই বাড়ি থেকে পঞ্চাশটির বেশি বিস্ফোরক উদ্ধার করা হয়েছিল সেদিন। ওই ঘটনা অবলম্বনে সিনেমা বানিয়েছেন নন্দিতা ও শিবপ্রসাদ।
সিনেমায় রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায় হয়েছেন বর্ষীয়ান অভিনেতা ভিক্টর বন্দ্যোপাধ্যায়। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে কাজের সংখ্যা কমিয়ে দেওয়া এই অভিনেতা চিত্রনাট্যের বুনন দেখেই 'রক্তবীজ' করেছেন বলে নির্মাতা নন্দিতার ভাষ্য।
'রক্তবীজ' সিনেমায় গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে আরও অভিনয় করেছেন সত্যম ভট্টাচার্য, অম্বরীশ ভাট্টাচার্যসহ কয়েকজন।
বৃহস্পতিবার বাংলা ছাড়াও হিন্দি, ওড়িয়া, অসমিয়া ভাষায় মুক্তি পেয়েছে সিনেমা 'রক্তবীজ'।