কোম্পানিটির বিক্রি ১৩০ কোটি ডলার কমছে বলে শঙ্কা করা হচ্ছে।
Published : 11 Feb 2023, 12:03 PM
আমেরিকান র্যাপার কানিয়ে ওয়েস্টের পোশাক ব্র্যান্ড ‘ইয়েজি’র সঙ্গে ব্যবসায়িক সম্পর্ক ছিন্নের কারণে বিপাকে পড়েছে ক্রীড়া সামগ্রী নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ‘অ্যাডিডাস’।
এই প্রতিষ্ঠানটির শঙ্কা, ‘ইয়েজি’ ব্র্যান্ডের পোশাক ও জুতা বিক্রি করতে না পারায় চলতি বছরে তাদের বিক্রি ১৩০ কোটি ডলার কমবে।
গানের পাশাপাশি ওয়েস্ট অল্প সময়েই সাড়া তুলেছিলেন ফ্যাশন ডিজাইনার হিসাবে। তার ব্র্যান্ড ‘ইয়েজি’ নাইকি, লুই ভিতো, দ্য গ্যাপ, ব্যালেন্সিগায়ার মতো বড় বড় ব্র্যান্ডের সঙ্গে কাজও করেছে। কিন্তু সমস্যার সূত্রপাত অন্য জায়গায়।
টুইটারে ইহুদিবিদ্বেষী পোস্টের কারণেই ওয়েস্টের প্রতিষ্ঠান এখন নামীদামি ব্র্যান্ডগুলো থেকে বিতাড়িত। হাত তুলে নেয় জার্মান প্রতিষ্ঠান অ্যাডিডাসও। গত বছরের অক্টোবরে এই র্যাপারের সঙ্গে তাদের নয় বছরের অংশীদারিত্বের অবসান ঘটিয়েছে।
গত বছর অ্যাডিডাস জানিয়েছিল তারা ‘ইহুদীবিদ্বেষ’সহ কোন ধরনের বিদ্বেষমূলক মন্তব্য বরদাশত করে না। এবং ওয়েস্টের মন্তব্যগুলো ছিল ‘অগ্রহণযোগ্য, ঘৃণ্য এবং বিপজ্জনক’। তাই ‘ইয়েজি’র সঙ্গে ব্যবসায়িক সম্পর্ক থেকে বেরিয়ে আসে তারা।
অ্যাডিডাস ওয়েস্টের কর্মকাণ্ডকে এইভাবে বিশ্লেষণ করে যে, এই র্যাপার-ফ্যাশন ডিজাইনার ‘বৈচিত্র্য এবং অন্তর্ভুক্তি, পারস্পরিক শ্রদ্ধা এবং ন্যায্যতার মূল্যবোধ’কে লঙ্ঘন করেছে।
তবে অ্যাডিডাসও কম সমস্যায় নেই বলে জানিয়েছে সিএনএন।
বৃহস্পতিবার এক বিবৃতিতে অ্যাডিডাস বলছে, তাদের ২০২৩ সালে আর্থিক নির্দেশিকায় বলা হচ্ছে, বিদ্যমান স্টক বিক্রি না হওয়ায় অর্থনৈতিকভাবে বিরূপ প্রভাব তৈরি হয়েছে।
অ্যাডিডাস আরও জানিয়েছে, যদি তারা ‘ইয়েজি’ পোশাকের অবশিষ্ট কোনটিই আর নতুন করে তৈরি করতে না পারে তাহলে চলতি বছরে প্রতিষ্ঠান পরিচালন মুনাফায় ৫৩ কোটি ডলার ক্ষতি হতে পারে।
কানিয়ের সঙ্গে অংশীদারিত্ব ভেঙে যাওয়ার কিছুদিন পরেই অ্যাডিডাস জানিয়েছিল যে তারা ‘ইয়েজি’ নাম ও ব্র্যান্ডিং বাদ দিয়ে তৈরি পোশাক বিক্রির চেষ্টা করবে।
এখন জার্মান প্রতিষ্ঠানটির ভাষ্য হল, অ্যাডিডাসের নিজস্ব ব্র্যান্ডিংয়ে থাকা স্নিকারগুলো বিক্রি করলে রয়্যালিটি পেমেন্ট ও বিপণন ফি বাবদ তাদের ৩০০ মিলিয়ন ডলার সাশ্রয় হবে।
তবে বাস্তবতা হল সেই প্রচেষ্টা সত্ত্বেও অ্যাডিডাসের পোশাকগুলো নতুন করে তৈরি করতে সমস্যা হচ্ছে বলে একজন বিশ্লেষক সিএনএনকে জানিয়েছে।
‘রিটেইল কনসালটেন্সি স্ট্রাটেজিক রিসোর্স গ্রুপের রিটেইল বিশেষজ্ঞ ও ম্যানেজিং ডিরেক্টর বার্ট ফ্লিকিংগার বলেন, “মর্যাদা ও বিলাসিতা নিয়ে গড়ে ওঠা এই দুর্দশাগ্রস্ত ব্র্যান্ডের (আ্যাডিডাস) জন্য সত্যিই কোনো ভালো বিকল্প নেই।”
এক হতে পারে অ্যাডিডাস কানিয়ের ইয়েজি ব্র্যান্ডের পোশাকগুলো নষ্ট করে ফেলবে বা বিক্রি না হওয়া পোশাকগুলো দান করে দেবে।
অ্যাডিডাস জানিয়েছে, প্রতিষ্ঠানটি বর্তমানে কৌশলগত পর্যালোচনার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। এবং আশা করা হচ্ছে এজন্য তারা ২১ কোটি ডলার এককালীন ব্যয় করতে পারবে।
অ্যাডিডাসের সিইও বিয়র্ন গুলডেন এক বিবৃতিতে বলেন, “এখন আমাদের আসলে যেভাবে কাজ করা উচিৎ ছিল, সেভাবে আমরা করছি না।“
বিয়র্ন গুলডেন গত জানুয়ারিতে অ্যাডিডাসের প্রধান নির্বাহী এসে যোগ দিয়েছেন। তিনি এর আগে ‘পুমা’ কোম্পানিতে ছিলেন।
গত বছর অ্যাডিডাস ‘হোয়াইট লাইভস ম্যাটার টি-শার্ট’ ‘অংশীদারিত্ব পর্যালোচনার আওতায় রেখেছিল। কিন্তু ‘অ্যান্টি ডিফেমেশন লিগ’ এই লেখাটিকে (হোয়াইট লাইভস ম্যাটার) শ্বেতাঙ্গ আধিপত্যবাদী গোষ্ঠীগুলির ব্যবহৃত ‘ঘৃণার স্লোগান’ হিসাবে তুলে ধরে।
অ্যাডিডাস ওয়েস্টের ‘ইয়েজি’ নিয়ে সমস্যার কথা জানালেও মার্কিন সংগীত তারকা বিয়ন্সের স্পোর্টসঅয়্যার ব্র্যান্ড ‘আইভি পার্ক ব্র্যান্ড’ নিয়ে সম্ভাব্য সমস্যার কথা তুলে ধরেনি।
শেষ সপ্তাহে ওয়াল স্ট্রিটের জার্নালের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, এক সময়ের ট্রেন্ডি ‘স্ট্রিটওয়্যার’র এর বিক্রিবাটা গত বছর ৫০ শতাংশ কমে ৪ কোটি ডলারে এসে দাঁড়িয়েছে।
তবে ‘স্ট্রিটওয়্যার’ সঙ্গে অংশীদারিত্বের ব্যবাসার এই হলহকিকতকে অ্যাডিডাস মনে করছে ‘শক্তিশালী এবং সফল’।
এদিকে ফ্রাঙ্কফুর্ট ট্রেডিংয়ে অ্যাডিডাসের শেয়ারের দর পড়েছে শতকরা ১১ শতাংশ। আর অ্যাডিডাসের শেয়ার দর গত এক বছরে ৪৫ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে।