চিত্রনায়িকার জন্মদিনে তাকে নিয়ে প্রশস্তি সংগীতশিল্পীর।
Published : 17 Dec 2022, 02:55 PM
‘মিষ্টি মেয়ে’ কবরীর পরে ঢাকাই চলচ্চিত্রে শাবনূরকে ‘ভার্সেটাইল মহানায়িকা’ অভিহিত করেছেন জনপ্রিয় কণ্ঠশিল্পী রুমানা মোরশেদ কনকচাঁপা।
শাবনূরের জন্মদিনে নিজের ফেইসবুক পেইজে এই নায়িকাকে নিয়ে একটি দীর্ঘ পোস্ট দিয়েছেন এই কণ্ঠশিল্পী।
কনকচাঁপার ভাষায়, “শাবনূরের মতো প্রতিভার অধিকারী শত জনমে একজনই হয়। তার সমসাময়িক অনেকেই আছেন কিন্তু কাছাকাছি কেউ নেই।”
এই কণ্ঠশিল্পীর শুরুটা এভাবে, “শাবনূর,একটি পরিপূর্ণ প্রতিভাময় শিল্পীর নাম যাকে বাংলাদেশ কখনোই ভুলতে পারবে না!”
এরপর লেখার স্তবকে স্তবকে চলেছে শাবনূরের সুখ্যাতি। কনকচাঁপা মনে করেন, “দর্শকমনে তাঁর (শাবনূর) অভিনয় শৈলী, তার উচ্চারণ, তার দৈহিক সৌন্দর্য, তার চাঁদপানা মুখশ্রী, গোলাপের মতো হাসি এবং তার নয়নযুগল পুরো যুবসম্প্রদায়কে বুঁদ করে রেখেছে কয়েক যুগ। তার রেশ এখনো কাটেনি, কাটবেও না কখনও।”
কনকচাঁপার সঙ্গে শাবনূরের যে খুব বেশি দেখা সাক্ষাৎ হয়েছে, তাও নয় জানিয়ে তিনি বলেন, “আমি বলা যায় প্রথম থেকেই তাঁর জন্য গাইছি। আশ্চর্যজনক কথা যে তার সাথে আমার খুবই কম দেখা হয়েছে।”
চলচ্চিত্রে শাবনূরের ঠোঁট মেলানো বেশিরভাগ গানই ছিল কনকচাঁপার গাওয়া। বিষয়টি সামনে এনে শিল্পী লেখেন, “আমি আমার মতো গেয়েছি তিনি তার মতো অভিনয় করেছেন। কিন্তু যখন পিকচারাইজেশন দেখেছি তখন আমারই বিশ্বাস হয়নি যে এটা আমি গেয়েছি, মনে হয়েছে এটা যেন তারই কণ্ঠ! আমি খুবই গর্বিত তার চলচ্চিত্র ক্যারিয়ারের প্রায় পুরো সময়ই আমি সাথে ছিলাম। তার অভিনীত একশো ভাগের নিরানব্বই ভাগ গানই আমার গাওয়া। আমাদের দুইদেহ এক প্রাণ বলা যায়।”
সাথে এই নায়িকার অভিনয় দক্ষতার কথা বলতে গিয়ে আরও বলেন, “এই যে একাকার হয়ে যাওয়া এই ক্রেডিট আমি শাবনূরকেই দিতে চাই। তিনি আসলে আমাদের কবরীর পরে ভার্সেটাইল যাকে বলে সেই উঁচুমানের মহানায়িকা। সিরিয়াস অভিনয়, হাসির অভিনয়, ছটফটে দুরন্ত কিশোরীর অভিনয় সবই দুর্দান্ত তবে তার ভয়ংকর সুন্দর চোখে যখন অশ্রু ঝরে তখন একটা কথাই মাথায় আসে ‘ফুল নেবো না অশ্রু নেবো ভেবে হই আকুল’!”
এক পর্যায় কনকচাঁপার একটি ইচ্ছার কথা উঠে আসে লেখায়। তিনি লেখেন, “জীবনে কখনো কোনো চ্যানেলকে বলিনি আমাকে এমন একটা অনুষ্ঠান দেন। কিন্তু কয়েকটি চ্যানেলে স্বপ্রনোদিত হয়ে বলেছি শাবনূর ও আমাকে নিয়ে একটা প্রোগ্রাম সাজাতে, কিন্তু কোনো চ্যানেলই গা করে নাই।”
কনকচাঁপা-শাবনূর জুটি নিয়ে একদিন গবেষণা হবে বলেও প্রত্যাশা রেখেছেন এই সংগীতশিল্পী।
“এই বাংলাদেশে মূল্যায়ন পাওয়া খুবই কঠিন তবে আমার বিশ্বাস একদিন আমার গান আর শাবনুরের অভিনয়ের সমন্বয় নিয়ে গবেষণা হবে তখন হয়ত তা দেখার জন্য হয়ত কোনো একজন থাকব না।”
পোস্টের শেষে বাংলা চলচ্চিত্রের গানের জনপ্রিয় এই শিল্পী শাবনূরের জন্য শুভ কামনা জানিয়ে লেখেন, “আমি আমাদের এই মহানায়িকার আনন্দিত সুখী সুদীর্ঘ জীবন কামনা করছি। শাবনূরের জন্মদিন উপলক্ষ্যে আমার পক্ষ থেকে রইলো অগণন শুভেচ্ছা ও শুভকামনা।”
যশোরের শার্শার নাভারণে ১৯৭৯ সালের ১৭ ডিসেম্বর শাবনূরের জন্ম। তার আসল নাম কাজী শারমিন নাহিদ নূপুর। নির্মাতা এহতেশাম চলচ্চিত্রের জন্য তাকে শাবনূর নামটি দিয়েছিলেন।
১৯৯৩ সালে ‘চাঁদনি রাতে’ সিনেমা দিয়ে ঢালিউডে আত্মপ্রকাশ শাবনূরের। চলচ্চিত্রটি ব্যবসায়িকভাবে ব্যর্থ হলেও পরে সালমান শাহের সঙ্গে জুটি বেঁধে উপহার দেন একের পর এক ব্যবসাসফল ছবি।
এছাড়া নায়ক মান্না, রিয়াজ, ফেরদৌস, শাকিল খান, শাকিব খানসহ সময়ের জনপ্রিয় সব নায়কের সঙ্গেও সিনেমায় দেখা গেছে তাকে।
‘তোমাকে চাই’, ‘আনন্দ অশ্রু’, ‘স্বপ্নের পৃথিবী’, ‘বিয়ের ফুল’, ‘ভালোবাসি তোমাকে’, ‘নারীর মন’, ‘ফুল নেবে না অশ্রু নেবে’, ‘প্রেমের তাজমহল’, ‘হৃদয়ের বন্ধন’, ‘মাটির ফুল’, ‘ব্যাচেলর’সহ প্রায় দুইশ সিনেমায় অভিনয় করেন।
একটি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার, তিনটি বাচসাচ ও ১০টি মেরিল প্রথম আলো পুরস্কার রয়েছে তার চলচ্চিত্র ক্যারিয়ারে।
২০১২ সালে বিয়ে করে অস্ট্রেলিয়াতে প্রবাসী হন শাবনূর। চলচ্চিত্রে হয়ে পড়েন অনিয়মিত।
পর্দায় কনকচাঁপার গাওয়া ‘তুমি আমার এমনই একজন’, ‘অনেক সাধনার পরে আমি’, ‘তুমি মোর জীবনের ভাবনা’, ‘ছোট্ট একটা জীবন’, ‘তোমাকে চাই শুধু তোমাকে চাই’, ‘ভাল আছি ভাল থেক’, ‘আমার নাকেরই ফুল বলে’, ‘তোমায় দেখলে মনে হয়’সহ অসংখ্য গানে ঠোঁট মিলিয়েছেন শাবনূর।
এদিকে তিনটি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার, চারটি মেরিল প্রথম আলো পুরস্কারসহ বেশ কিছু পুরস্কার পেয়েছেন তিন হাজারের বেশি চলচ্চিত্রের গান গাওয়া শিল্পী কনকচাঁপা।
গানের পাশাপাশি লেখালেখি ও ছবি আঁকা নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন নিজেকে কণ্ঠশ্রমিক দাবি করা কনকচাঁপা।