সুজাতা আজিম ও অঞ্জনার উদ্দেশে মিশা সওদাগর বললেন, “তোমরা শুধু এই প্যানেলেই বসে থেকো না। ওইদিকেও যেও।”
Published : 17 Apr 2024, 10:01 PM
বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির দ্বিবার্ষিক নির্বাচন ঘিরে রেখে জমে উঠেছে ভোটের প্রচার, প্রার্থী ও সমর্থকদের পদচারণায় বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন করপোরেশনে (বিএফডিসি) তৈরি হয়েছে উৎসবমুখর পরিবেশ।
বিএফডিসির প্রধান ফটকের সামনেই চোখ পড়ে দুই পরিষদের শিল্পীদের নির্বাচনী প্রচারের বড় বড় ব্যানার। পুরো এফডিসিই ছেয়ে গেছে পোস্টার আর তারকা প্রার্থীদের বড় বড় ছবিতে।
প্রধান ফটক থেকে বিএফডিসির প্রশাসনিক ভবন পার হয়ে শিল্পী সমিতির সামনে গেলে দেখা যায় দুই পাশে দুটি প্যানেল করে বড় পর্দায় গান বাজিয়ে চলছে ভোটের প্রচার। শিল্পী সমিতির এই নির্বাচন ঘিরে শিল্পী, নির্মাতা, প্রযোজক ও কলা কুশলীদের আনাগোনায় বিকেলটা বিএফডিসি থাকছে মুখরিত।
মঙ্গলবার সন্ধ্যায় শিল্পী সমিতির সামনের বাগানে দেখা গেল মাহমুদ কলি-নিপুণ আক্তার পরিষদের বড় পর্দায় বাজছে ‘কই গেলা নিঠুর বন্ধুরে’ গানটি। সেখান চেয়ারে বসে গান উপভোগ করছেন অভিনেত্রী সুজাতা আজিম ও অঞ্জনা রহমান। তারা দুজনেই মাহমুদ কলি-নিপুণ প্যানেল থেকে কার্যকরী পরিষদের সদস্য পদে নির্বাচন করছেন।
হঠাৎ উপস্থিত সেখানে হলেন আরেক প্যানেলের সভাপতি পদপ্রার্থী মিশা সওদাগর। হাসির সুরে সবার সঙ্গে কুশল বিনিময় করে সুজাতা ও অঞ্জনাকে বললেন, “তোমরা শুধু এই প্যানেলেই বসে থেকো না। ওইদিকেও যেও।”
একটু সামনে এসেই মিশা সওদাগরকে বলতে শোনা যায়, “আরে কচি ( নাসিমা আক্তার কচি), তুই শুধু ভোট চাইছিস খোকন (খোকন রাজ) ভাইয়ের কাছে! শুধু খোকন ভাইয়ের ভোট চাইবি? আমার কাছে চাইবি না? আমার ভোটও তো চাইতে পারিস, আমি কি ভোট দেব না? সেই নওগাঁ থেকে এসে আমাকে ভুলে গেছিস কচি? কতো সিনেমায় আমরা গান গেয়েছি, নেচেছি ভুলে গেছিস?”
কচি উত্তর দিলেন “না ভাই ভুলিনি।”
মিশার উত্তর, “তাহলে ভোটটা দিস বোন আমাকেও।”
এমনভাবেই মজার ছলে ভোট চাইছিলেন মিশা সওদাগর। এই প্যানেলে সাধারণ সম্পাদক হিসেবে তার সঙ্গে আছেন আরেক দাপুটে অভিনেতা মনোয়ার হোসেন ডিপজল।
জয়ের আশাবাদ জানিয়ে মিশা সওদাগর গ্লিটজকে বললেন, “আমাদের এবারের নির্বাচন সরকার পক্ষের নজরে আছে। তারা বিশ্বাসযোগ্য, সুষ্ঠ, সুন্দর, অবাধ নিরপেক্ষ নির্বাচন চান। আমরা সেই লক্ষ্য নিয়েই কাজ করছি। নির্বাচনটা একটা প্রতিযোগিতা। যে কোনো একদল আসবে। স্বতন্ত্র মিলিয়ে আমরা ৪৭ জনের মত দাঁড়িয়েছি। ২১ জন নির্বাচিত হবে। আমি আমার প্যানেল নিয়ে শতভাগ আশাবাদী।”
জয়ী হলে কী কী কাজ করবেন মিশা সওদাগর? উত্তরে এই অভিনেতা বললেন, “আমাদের নির্বাচনী ইশতেহারে আছে শিল্পীদের সর্বোচ্চ স্বার্থ সংরক্ষণ করব। কমার্শিয়াল চলচ্চিত্রকে ৭৫% অনুদান দেওয়ার অনুরোধ করব, যে দেশের কমার্শিয়াল সিনেমা যত চলবে সে দেশের ইন্ড্রাস্ট্রি তত ঘুরে দাঁড়াবে।
“এফডিসিভিত্তিক সিনেমা যেন বেশি হয়, সেটা করার জন্য যতদূর যাওয়া প্রয়োজন আমরা যাব। নির্মাতা, প্রযোজকদের এমন শর্ত থাকবে তারা ৫০ ভাগ টাকা যেন সরকারকে ফেরত দেয়। আর একটা জিনিস নিয়ে কাজ করব, শিল্পী সমিতির সদস্যরা যেন আজীবন সদস্য থাকতে পারে। এবার নির্বাচনে সদস্য যাচাই বাছাই করে ১০৩ জন সদস্য পাওয়া গেছে।”
শিল্পীদের সবাইকে এক করার লক্ষ্য নিয়ে কাজ করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে মিশা সওদাগর-ডিপজল প্যানেলের এই নেতা বলেন, “আমাদের এবার স্লোগান হচ্ছে ‘আমরা সবাই এক, জাগ্রত হউক বিবেক’। এই ‘এক’ বলতে সবাই, চলচ্চিত্র সংশিষ্ট প্রতিটা ব্যক্তি। সবাইকে একসাথে নিয়ে আমরা চলতে চাই।”
মিশা-ডিপজল পরিষদ
সভাপতি মিশা সওদাগর, সাধারণ সম্পাদক মনোয়ার হোসেন ডিপজল, সহ-সভাপতি মাসুম পারভেজ রবেল, সহ-সভাপতি ডি এ তায়েব, সহ-সাধারণ সম্পাদক আরমান, সাংগঠনিক সম্পাদক জয় চৌধুরী, আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক আলেকজান্ডার বো, দপ্তর ও প্রচার সম্পাদক জ্যাকি আলমগীর, সংস্কৃতি ও ক্রীড়া সম্পাদক ডন এবং কোষাধ্যক্ষ পদপ্রার্থী কমল।
এ প্যানেল থেকে কার্যকরী পরিষদের সদস্য পদে নির্বাচন করছেন অভিনেত্রী সুচরিতা, রোজিনা, আলীরাজ, সুব্রত, দিলারা ইয়াসমিন, শাহনূর, নানা শাহ, রত্না কবির, চুন্নু, সাঞ্জু জন, ফিরোজ মিয়া।
মাহমুদ কলি-নিপুণ পরিষদ
সভাপতি মাহমুদ কলি, সাধারণ সম্পাদক নিপুণ আক্তার, সহ-সভাপতি পদে ড্যানি সিডাক ও অমিত হাসান, সহ-সাধারণ সম্পাদক বাপ্পি সাহা, সাংগঠনিক সম্পাদক অঞ্জনা রহমান, আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক মারুফ আকিব, দপ্তর ও প্রচার সম্পাদক কাবিলা, সংস্কৃতি ও ক্রীড়া সম্পাদক মামনুন হাসান ইমন ও কোষাধ্যক্ষ পদের প্রার্থী অভিনেতা আজাদ খান।
এ প্যানেলে কার্যকরী পরিষদের সদস্য পদের প্রার্থীরা হলেন- সুজাতা আজিম, নাদের চৌধুরী, পীরজাদা হারুন, পলি, জেসমিন আক্তার, তানভীর তনু, মো.সাইফুল, সাদিয়া মির্জা, সনি রহমান, হেলেনা জাহাঙ্গীর, সাইফ খান।
এদিকে, ‘দেখাবো আলোর অথ, রাখিব নিরাপদ’ স্লোগান নিয়ে প্রচার চালাচ্ছে মাহমুদ কলি ও নিপুণ আক্তার পরিষদ। এই পরিষদের নির্বাচনী ইশতেহারে চলচ্চিত্র শিল্পীদের স্বার্থ সংরক্ষণ করা; অসহায় শিল্পী ও তার পরিবারের জন্য সাহায্যের ব্যবস্থা করা; চলচ্চিত্র শিল্পের সংশ্লিষ্ট সকলের মধ্যে শ্রদ্ধা, সোহার্দ্য ও সহযোগিতার ব্যবস্থা করা; দেশের ও সমাজের কাছে চলচ্চিত্র শিল্পীদের ও শিল্পের সুনাম উন্নতি করার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে।
এসব প্রতিশ্রুতি বড় ব্যানারে লিখে দেয়ালে দেয়ালে ঝুলিয়েও দিয়েছেন মাহমুদ কলি ও নিপুণ পরিষদের প্রার্থীরা।
নিজের প্যানলকে বিজয়ী করার ব্যাপারে কতোটুকু আশাবাদী মাহমুদ কলি? গত শতকের সত্তর-আশির দশকের এই জনপ্রিয় অভিনেতা গ্লিটজকে বলেন, “আমি যেদিন নিশ্চিত করলাম আমি নির্বাচন করছি, সেদিন থেকেই সকলকে বলছি, আমি চাই এফডিসিতে যেন সকল শিল্পীর মিলনমেলা হয়, উৎসবমুখর পরিবেশে সকলের উপস্থিতিতে নির্বাচন হয়।
“কারো মধ্যে যেন ভুল বোঝাবুঝি, রাগারাগি না থাকে এটিই আমার পরম চাওয়া। আর নির্বাচনের ব্যাপারে আমি শিল্পীদের সঙ্গে যোগাযোগ করছি, কারো কারো সঙ্গে দেখা হচ্ছে, সবার কাছেই আমি আবেদন করেছি মাহমুদ কলি ও নিপুণ পরিষদ থেকে যেহেতু আমি নির্বাচনে দাঁড়িয়েছি, এই প্যানেলের সবাইকে ভোট দিয়ে যেন বিজয়ী করে। আমরা যেন একসঙ্গে ভালো ভালো কাজ করতে পারি।”
আগামী শুক্রবার শিল্পী সমিতির ২০২৪-২৬ মেয়াদের নির্বাচন হবে। নির্বাচনে দুটি প্যানেল থেকে ২১টি পদে মোট ৪২ জন প্রার্থী হয়েছেন। প্রধান নির্বাচন কমিশনা হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন খোরশেদ আলম খসরু। তার সঙ্গে সদস্য হিসেবে আছেন এ জে রানা ও বিএইচ নিশান।
খসরু বলেন, “এবার ভোটার আছেন ৫৭০ জন। নির্বাচনে যেন কোনো ঝামেলা না হয়, সুষ্ঠু পরিবেশে ও নিরপেক্ষ নির্বাচন নিশ্চিত করব। গতবারের কোনো প্রভাব যেন এই নির্বাচনে না পড়ে সেটাও খেয়াল রাখছি।”