সাধারণ রঙ্গালয়ের ১৫০ বছর

সাধারণ রঙ্গালয়ের দেড়শ বছর পূর্তিতে দুই বাংলার নগরনাট্যে চলছে বিশেষ আয়োজন। ঢাকা ও কলকাতায় নানা আয়োজন রাখেন দুই দেশের নাট্যকর্মীরা।

পাভেল রহমানবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 9 Dec 2022, 04:14 AM
Updated : 9 Dec 2022, 04:14 AM

ঔপনিবেশিক যুগে সমাজের বিশেষ শ্রেণির মনোরঞ্জন করত মন্দির বা জমিদার বাড়ির উঠানের চিত্তবিনোদন অনুষ্ঠান, সার্ধশত বছর আগে সেই ধারা ভেঙে শুরু হয়েছিল নতুন অধ্যায়, জন্ম হয় সাধারণ রঙ্গালয়ের।

ব্রিটিশ আমলে নীল চাষ আর কৃষকদের ওপর জুলুম-নিপীড়নের পটভূমিতে দীনবন্ধু মিত্রের নীল দর্পণ নাটকের মঞ্চায়ন দিয়েই ১৮৭২ সালের ৭ ডিসেম্বর সেই ধারা শুরু হয়েছিল। সামাজের সাধারণ দর্শকদের সুযোগ হয় রঙ্গালয়ে প্রবেশের, এরপরে কেটে গেছে দেড়শ বছর।

ঐতিহাসিক সেই দিনটিকে ঘিরেই দুই বাংলার নগরনাট্যে চলছে বিশেষ আয়োজন। কলকাতায় বঙ্গ নাট্য সংহতি বছরব্যাপী আয়োজন সাজিয়েছে। আর ঢাকায় আলোচনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে ‘ঢাকা থিয়েটার’ ও ‘বাংলাদেশ গ্রাম থিয়েটার’।

বুধবার কলকাতার তপন থিয়েটারে ‘নীল দর্পণ’ মঞ্চায়ন দিয়ে আনুষ্ঠানিক সূচনা হয় বঙ্গ নাট্য সংহতির বছরব্যাপী আয়োজনের। ওই নাটকে নির্দেশনা দেন বাংলাদেশের নাট্যকার মামুনুর রশীদ।

গ্লিটজকে তিনি বলেন, “আমাদের নাট্যশিল্পীদের জন্য এটি আনন্দের দিন। কারণ ১৫০ বছর আগে ‘নীল দর্পণ’ মঞ্চায়নের মধ্য দিয়েই সাধারণ রঙ্গালয়ে জনসাধারণের প্রবেশ উন্মুক্ত হয়েছিল। ১৮৭২ সালের ৭ ডিসেম্বর নীল দর্পণ মঞ্চায়নের মধ্য দিয়ে সাধারণের জন্য নাট্য মঞ্চায়নের সূচনা হয়।

“তাই দিনটিকে উদযাপন করতে ভারত ও বাংলাদেশে নানা আয়োজন করা হয়েছে। কলকাতায় নাট্যোৎসবে আমার নির্দেশনায় ‘নীল দর্পণ’ মঞ্চায়ন হয়েছে। এটি ভালো লাগার মতো ঘটনা।”

সাধারণ রঙ্গালয়ের স্বার্ধশত বার্ষিকী উদযাপনে দুটি উৎসব হবে জানিয়ে মামুনুর রশীদ বলেন, কলকাতায় উৎসব হবে ৭ ডিসেম্বর, আর ঢাকায় ১৭ ডিসেম্বর। দুই দেশের নাট্যশিল্পীরা এ উৎসবে অংশ নিচ্ছেন।

কলকাতায় দিনটি উদযাপনের অংশ হিসাবে মঙ্গলবার দুপুরে একটি বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা বের হয়। বাগবাজারে গিরিশচন্দ্র ঘোষের বাড়ি থেকে মিনার্ভা থিয়েটার এবং রাসবিহারী মোড়ের তপন থিয়েটারে গিয়ে সেটি শেষ হয়। শোভাযাত্রায় বাংলাদেশের রামেন্দু মজুমদার ও মামুনুর রশীদ অংশ নেন। এছাড়া কলকাতার নাট্যব্যক্তিত্ব দেবাশিস মজুমদার, বিভাস চক্রবর্তী, চন্দন সেন, অংশুমান ভৌমিকসহ অনেকেই ছিলেন।

শোভাযাত্রার একটি ছবি ফেইসবুকে শেয়ার করে অংশুমান ভৌমিক লিখেছেন, “আমরা ভাষায় এক, ভালোবাসায় এক। আজ বাঙ্গালা সাধারণ রঙ্গালয়ের দেড়শ বছর পেরোনোর উৎসবের সূচনা। শোভাযাত্রায় শোভাবাজারের পথে সামিল বাংলা প্রসেনিয়াম থিয়েটারের পাঁচ মুখ - রামেন্দু মজুমদার, দেবাশিস মজুমদার, বিভাস চক্রবর্তী, চন্দন সেন, মামুনুর রশীদ। এমন বিজ্ঞাপন ইতিহাসের পাতায় একবারই হয়।”

বুধবার সন্ধ্যায় তপন থিয়েটার মিলনায়তনে ‘নীল দর্পণ’ মঞ্চস্থ করে ঢাকার রেপার্টরি নাট্যদল ‘বাঙলা থিয়েটার’। মিলনায়তনে দর্শকের উপচে পড়া ভিড় হয়।

কলকাতায় নীল দর্পণ মঞ্চায়নের পর দর্শকদের উদ্দেশে মামুনুর রশীদ বলেন, “এই নাটক যদি আপনাদের হৃদয়কে এতটুকু স্পর্শ করে থাকে। তাহলে আমাদের পরিশ্রম স্বার্থক হবে। এটা আমাদের জন্য একটা বড় ধরনের সুযোগ ছিল। আমাদেরকে এই সুযোগ করে দিয়েছে বঙ্গ নাট্য সংহতি। তাদেরকে ধন্যবাদ জানাই।”

বঙ্গ নাট্য সংহতির বছরব্যাপী আয়োজনে ১৭টি পুরনো নাটকের নব মঞ্চায়ন, পঞ্চরঙ্গ নাটিকা, আলোচনা সভা, গবেষণা গ্রন্থ, স্মরণিকা প্রকাশের কথা রয়েছে।

অপরদিকে ঢাকার নাটক সরণির মহিলা সমিতির আইভি রহমান মিলনায়তনে বুধবার সন্ধ্যায় আলোচনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিল ‘ঢাকা থিয়েটার’ ও ‘বাংলাদেশ গ্রাম থিয়েটার’। ‘ন্যাশনাল থিয়েটার : ইতিহাসের পুনর্ভাষ’ শীর্ষক এই আলোচনা সভায় মুখ্য আলোচক ছিলেন অধ্যাপক রতন সিদ্দিকী।  আলোচক ছিলেন পশ্চিমবঙ্গের অধ্যাপক পবিত্র সরকার, বাংলাদেশের নাট্যব্যক্তিত্ব রামেন্দু মজুমদার, অধ্যাপক লুৎফর রহমান, সাধনা আহমেদ।

পাঠ-অভিনয় ও আলোচনা করেন শিমুল ইউসুফ। আলোচনার আগে রতন সিদ্দিকী রচিত ‘ন্যাশনাল থিয়েটার’ গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন করা হয়।

Also Read: সাধারণ রঙ্গালয়ের ১৫০ বছর, ঢাকা ও কলকাতায় উৎসব