নির্মাতারা চরিত্রের জন্য প্রসেনজিৎকে জুতসই মনে করলে তারাই তার আছে আসেন বলে ভাষ্য প্রসেনজিতের।
Published : 21 Oct 2023, 12:14 PM
নব্বই দশকের একেবারে গোড়ায় ডেভিড ধাওয়ানের 'আঁধিয়ান' দিয়ে বলিউডে অভিষেক হয় কলকাতার তারকা অভিনেতা প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়ের। চলতি বছর ওয়েব সিরিজ 'স্কুপ' ও ‘জুবলি’ দিয়ে ব্যাপক আলোচনায় আসেন তিনি। এই অভিনেতার ভাষ্য, বলিউউ তাকে কাজের বড় একটি জায়গা দিলেও যেনতেন চরিত্র এলেই তিনি করবেন না।
ওটিটিতে পা রাখা প্রসেনজিৎ বলিউড নিয়ে এখন কতটা মনোযোগী প্রশ্নে হিন্দুস্তান টাইমসকে এই অভিনেতা বলেছেন, বেছে বেছে এবং বুঝেশুনে কাজ করতে চান তিনি। তবে কাজের জন্য তার বলিউডে নিজে থেকে এগিয়ে যাওয়ার কিছু নেই বলেও জানান।
তিনি বলেন, "আমার ৪০ বছরের কেরিয়ারে আমি 'আঁধিয়ান' করেছিলাম ডেভিড ধাওয়ান, দিবাকর বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে। তারপর বিক্রমাদিত্য মোতওয়ানের সঙ্গে 'জুবিলি' আর হংসল মেহতার সঙ্গে 'স্কুপে' কাজ করি। কিন্তু তার মানে এটা নয় যে, আমাকে সেখানে যেতে হয়েছিল কিছু করার জন্য।"
নির্মাতারা চরিত্রের জন্য প্রসেনজিৎকে জুতসই মনে করলে তারাই তার আছে আসেন বলে ভাষ্য তার।
"তারা যখন বোঝেন যে আমার জন্য কোনও চরিত্র আছে তাদের কাছে আসে, তখন তারা আমার কাছে আসেন। বিশেষ করে যখন একটু আলাদা ধরনের চরিত্র থাকে।"
প্রসেনজিতের সোজাসাপ্টা কথা হল "আমি যদি এখন বলিউডে কিছু করি সেটাকে শক্তিশালী চরিত্র হতে হবে। যা খুশি চরিত্র এলেই করব না। সেটাকে একটা শক্তিশালী চরিত্র হতেই হবে। সেখানে দেখাতে হবে গত ৪০ বছরে আমি কী কী শিখেছি।"
একটা সময়ে প্রসেনজিৎ বলেছিলেন, বলিউড 'আঞ্চলিক অভিনেতাদের কাজ দেয় না'। সেই ভাষ্য থেকে তিনি সরে এসেছেন কী?
প্রসেনজিতের উত্তর, "ব্যাপারটা এরকম একদমই না যে তারা আমাদের কাজ দেন না। আমরাও সেখানে গিয়ে কাজের খোঁজ করি না। আমি তখন সেই সাক্ষাৎকারে বলতে চেয়েছিলাম যে, একটা সময় ছিল যখন বাঙালি অভিনেতা হিসেবে আমরা জানতাম না যে মারাঠি অভিনেতারা সেখানে কী কাজ করছেন। এমনকি পঞ্জাব, তামিল বা মালায়লি ছবির ক্ষেত্রেও। সেখানে ট্যালেন্ট থাকতেই পারে।"
হালের ওটিটি মাধ্যমে কাজের পরিসর 'বেড়েছে' মন্তব্য করে এর মন খুলে প্রশংসা করে প্রসেনজিৎ বলেন, "এখন আমরা বিভিন্ন জায়গা থেকে লেখক, অভিনেতাদের উঠে আসতে দেখা যাচ্ছে। সেটা হচ্ছে ওটিটির বদৌলতে। নতুন প্রজন্মের জন্যই এটা হচ্ছে। এটা একটা দারুণ এক্সপোজার, সুযোগও অনেক বেশি।"
কয়েক প্রজন্ম দর্শক প্রসেনজিতের সিনেমা দেখছে। ১৯৬৮ সালে শিশুশিল্পী হিসেবে হৃষিকেশ মুখার্জির ‘ছোট্ট জিজ্ঞাসা’ সিনেমায় প্রথম পর্দায় আসেন প্রসেনজিৎ। আর ১৯৮৭ সালে সুজিত গুহের ‘অমর সঙ্গী’তে অভিনয় করে ব্যাপক পরিচিতি পান তিনি। এরপর আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি এই নায়ককে, একের পর এক হিট সিনেমা উপহার দিয়েছেন ভক্তদের।
তবে প্রসেনজিৎকে 'অভিনেতা' হিসেবে তুলে ধরেন প্রয়াত নির্মাতা ঋতুপর্ণ সেনগুপ্ত ২০০৩ সালে 'চোখের বালি' সিনেমায়। এর পর থেকে ধীরে ধীরে বাণিজ্যিক সিনেমা থেকে দূরে সরে যান অভিনেতা।
২০১০ সালে নির্মাতা সৃজিত মুখার্জির হাত ধরে 'অটোগ্রাফ' সিনেমা এবং পরবর্তীতে একের পর এক গল্প ও চরিত্র নির্ভর সিনেমা করে নিজেকে 'অন্য মাত্রায়' তুলে ধরেছেন এই অভিনেতা।
এই দুর্গাপূজায় মুক্তি পেয়েছে সৃজিতের নির্মাণে 'দশম অবতার' সিনেমা। '২২শে শ্রাবণ' সিনেমার প্রিক্যুয়েলটিতে পুলিশ কর্মকর্তার চরিত্রে প্রসেনজিৎ মুল ভূমিকা করেছেন।
'দশম অবতার'কে বাংলার কপ ইউনিভার্স সিনেমা বলা হচ্ছে। অন্যদিকে বলিউডে পুলিশদের নিয়ে 'সিংহাম' ফ্র্যাঞ্চাইজির কপ ইউনিভার্স বানিয়ে নজর কেড়েছেন নির্মাতা রোহিত শেঠি।
দুটোর মধ্যে তুলনা টেনে প্রসেনজিৎ বলেন, "দুই দুনিয়া আলাদা। একজন পুলিশ যদি মাইলের পর মাইল দৌড়ায় সে হাঁপাবেই। সেটাই সৃজিত তার ছবিতে দেখিয়েছেন। আমাদের চরিত্রগুলো আমার শহরের পুলিশের মতোই। জীবনে তারা রাগ, দুঃখ, হতাশা, আক্ষেপ নিয়েও কাজ করে যান। অন্যদিকে রোহিত শেঠির কপ ইউনিভার্সের দুনিয়াটা অনেক বড়। সেখানে বড় বড় ক্রাইম এসেছে, রাজনীতিও।"
সবশেষে প্রসেনজিৎ বলেন, তার জীবনে সিনেমাই সবকিছু।
" সিনেমাকে ঘিরে আমার বাঁচা, খাওয়া, ঘুমানো সব। আমি আমাদের ঘরানার সিনেমা করেই বেশি খুশি।"