ঢাকায় সংস্কৃতিকর্মীরা স্মরণ করলেন ১১ বছর আগের রানা প্লাজা দুর্ঘটনায় নিহতদের।
Published : 25 Apr 2024, 12:02 AM
সংলাপহীন নাটকে নীরবতাও এক ধরনের ভাষা হয়ে ওঠে। বলে যায় সেই দুঃসহ বেদনার স্মৃতি। ’সুঁই-সুতার সংসারে কে দেবে আশা’?
এমন প্রশ্ন ছুড়ে দিয়ে সংস্কৃতিকর্মীরা স্মরণ করলেন ১১ বছর আগের রানা প্লাজা দুর্ঘটনায় নিহতদের।
বুধবার সন্ধ্যায় লালমাটিয়া হাউজিং সোসাইটি কলোনি মাঠে রানা প্লাজা দিবসে এ স্মরণ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এ সাংস্কৃতিক সমাবেশের আয়োজন করে নাট্যসংগঠন বটতলা।
বটতলার নাট্যশিল্পী সামিনা লুৎফা বলেন, প্রতি বছরই তারা এ আয়োজন করতে চান।
শুরুতেই বটতলা মঞ্চস্থ করে নাটক 'জুতুগৃহ'। কারখানায় মানুষ হত্যা এবং কারখানা কেন বন্দিশিবির? এমন প্রশ্ন ছুঁড়ে দেওয়া হয় নাটকে।
পরে নব-আনন্দের শিশুরা আবৃত্তি করে সুকুমার রায়ের 'ছায়াবাজি' এবং শামীমা শওকতের লেখা 'পৃথিবীর ফেরেশতা'।
প্রাচ্যনাট মঞ্চস্থ করে শাহানা সুমির নির্দেশনায় নাটক 'সুঁই-সুতা'। মেহেদী হাসান আকাশ আবৃত্তি করেন 'শ্রমের মূল্য দাও' এবং 'রানা প্লাজা' শিরোনামে দুটি কবিতা।
সাংস্কৃতিক পরিবেশনার ফাঁকে চলে বক্তব্য পর্ব। অধিকারকর্মী শহিদুল ইসলাম সবুজ বলেন, "তাজরিনের ঘটনা বা রানা প্লাজার ঘটনার সাক্ষী শত শত মানুষ। কিন্তু সাক্ষীর অভাবে বাকি বিচার সম্ভব হচ্ছে না। এসব ঘটনায় জড়িতরা সমাজে বুক ফুলিয়ে ঘুরছেন। তারা নানাভাবে পুরস্কৃতও হচ্ছেন।"
২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল সাভার বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন ১০ তলা রানা প্লাজা ভবন ধসে পড়ে। ওই ভবনে থাকা কয়েকটি পোশাক কারখানার ৫ হাজারের মতো শ্রমিক নিচে চাপা পড়েন।
কয়েকদিনের উদ্ধার তৎপরতায় ১ হাজার ১৩৬ জনের লাশ তুলে আনা হয়। ধ্বংসস্তূপের নিচ থেকে ২ হাজার ৪৩৮ জনকে জীবিত উদ্ধার করা হয়। তার মধ্যে প্রায় দুই হাজার শ্রমিক আহত ও পঙ্গু হন।
সাংস্কৃতিক সমাবেশে গান পরিবেশন করে গানের দল সমগীত। গানে গানে তারা শ্রমিক নিপীড়নের প্রতিবাদ জানায়।
পাখিদের অধিকার নিয়ে নাটক মঞ্চস্থ করে অপেরা নাটকের দল। নগরায়ন ও অপরিকল্পিত উন্নয়নে কীভাবে পাখিরা হারাচ্ছে তাদের ঘর, তা তুলে ধরা হয় এ নাটকে।
বক্তব্য পর্বে লালমাটিয়া স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ আকমল হোসেন বলেন, "যে মানুষগুলো সেদিন মারা গেলেন, তাদের পরিবারের কী অবস্থা? আমরা কতটুকু খোঁজ রাখছি। কারখানা মালিকদের কাছে আহ্বান জানাই তারা যেন শ্রমিকদের অধিকার নিশ্চিত করেন।"
মঞ্চের পাশেই টাঙানো ছিল আলোকচিত্র, বাচ্চাদের আঁকা ছবি এবং রানা প্লাজার ঘটনার শিকারদের সংগৃহীত ছবির প্রদর্শনী। আলোকচিত্রী শুভ্রকান্তি দাশ, রাহুল তালুকদার ও তাসলিমা আখতারের ছবিতে উঠে এসেছে সেই ভয়বহতা।
আলোকচিত্রী তাসলিমা বলেন, "প্রদর্শনীতে যে ছবিগুলো রয়েছে, তা আমাদের মনে করিয়ে দেয় সেই দু:সহ স্মৃতি। তারা হয়তো আমাদের মাঝে বেঁচে থাকতেন। সবশেষে বলতে চাই, মৃতদের স্মরণ কর, জীবিতদের জন্য লড়াই কর।"
অনুষ্ঠানে গান পরিবেশন করেন ফারজানা ওয়াহিদ শায়ান। 'লাশটা তবুও দিও' এবং 'শুনেছি তুমি মজুরি এখনো দাও নি' গানের কথায় শ্রমিকের অধিকার তুলে ধরেন। গানের ফাঁকে নিন্দা জানান ফিলিস্তিনে গণহত্যারও।
সবশেষে নাটক মঞ্চস্থ করে নাটনন্দন ও থিয়েটার ৫২। আবৃত্তি করেন পঙ্গজ মজুমদার এবং আয়োজন শেষ হয় শিল্পী কূয়াশার গানে।