রেডিওর কাজ ছেড়ে দেওয়া নিয়ে মীর বলেন, “কয়েক পক্ষের কথাবার্তার মধ্যে আমার নিজস্ব মান-অভিমান তৈরি হল। খারাপ লাগল। ছেড়ে দিলাম।“
Published : 16 Apr 2024, 12:11 PM
রেডিওতে সংবাদ পাঠক, অনুষ্ঠান পরিচালক বা কমেডি শোয়ের সঞ্চালক হিসেবে নয়, মীর মনে করেন, তার অনুরাগীরা তাকে গল্পকার হিসেবে দেখতে চায়। তাই অনলাইনে গল্পের আসর ‘গপ্পো মীরের ঠেক’ পরিচালনায় আনন্দ পাচ্ছেন মীর।
আড়াই দশক ধরে চালিয়ে নিয়ে যাওয়া রেডিও মির্চির কাজ ছেড়ে মীর ২০২২ সালে গড়ে তুলেছেন গপ্পো মীরের ঠেক। ইউটিউবে এই অনুষ্ঠানে বাংলা সাহিত্য এবং বাংলা সাহিত্যের বাইরের লেখকদের গল্প, উপন্যাস ও নাটক পরিবেশন করা হয়।
রিয়েলিটি শো 'মীরাক্কেল'র সঞ্চালনা করার সুবাদে ঢাকা-কলকাতা দুই জায়গাতেই দারুণ জনপ্রিয় মীরের পুরো নাম মীর আফসার আলী। এবারের ঈদুল ফিতরে তার একটি সাক্ষাৎকার প্রকাশ করেছে আনন্দবাজার।
কেন রেডিও ছাড়লেন- এই প্রশ্নে গত দুই বছর ধরে জর্জরিত হয়েছেন মীর। ছাড় মেলেনি এবারও।
মীরের উত্তর, “রেডিওতে পরিবর্তন। কোথাও মনে হচ্ছিল, একই পঞ্জাবি গান ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে বাজছে। বাংলা গান বাজবে না। ভিডিও আর রিল করতে করতেও আমি ক্লান্ত হয়ে পড়ছিলাম। বিষয়টা এমন নয় যে, আমি নতুন কিছুকে গ্রহণ করতে চাই না। আমি সারাক্ষণ নতুন কিছুকেই গ্রহণ করে চলেছি। বাড়িতে একুশ বছরের মেয়ে আছে। সে বলে দেয়, কী করব, কী করব না। কিন্তু ভাবনার দিক থেকেই সমস্যা হল।
“দুদিকেরই মন্তব্য আছে। যারা গানবাজনা করেন তারা বলেন, রেডিও গান বাজাতে চাইছে না। আর যারা রেডিওর দেখভালের দায়িত্বে, তারা বলেন, তেমন গানই তৈরি হচ্ছে না। এসবের মধ্যে আমার নিজস্ব মান-অভিমান তৈরি হল। খারাপ লাগল। ছেড়ে দিলাম।“
রেডিওতে কাজ ছাড়ার পরের সময়ের সংগ্রাম উঠে আসে মীরের কথায়।
“রেডিও ছাড়ার পার খারাপ লেগেছিল খুব। বুঝেছিলাম এই ছাড়ার পরিণামের যে অভিঘাত বা চাবুক, তা সবচেয়ে বেশি নিজেকে আঘাত দেবে। সহ্য করতে হবে। কেউ কিছু করতে পারে না। কাঁধে কাঁধ রেখে লোকে ‘আছি’ বললেও, আঘাত শুধু আমার।
“চাকরি ছাড়ার পরের ছয় মাস ভয়ঙ্কর ছিল। এক দিন খেয়াল করলাম, মোবাইলে শুধু রিলস দেখে যাচ্ছি দীর্ঘ সময় ধরে! মনে হল, কী করছি এ সব? ছয়মাস পরে নিজেই নিজেকে ধাক্কা মেরে ফেলে দিলাম জলে। একা সাঁতার কাটতে হবে।“
এই কাজে পরিবারকে সবসময় পাশে পাওয়ার কথাও বলেন মীর। নিজেকে নতুনভাবে গড়ে তোলার সংগ্রাম তুলে ধরে তিনি বলেন, “নিজেকে খুঁজলাম। মানুষ কী ভাবে আমায় দেখেছে? এক জন সংবাদপাঠক। রেডিওর মানুষ। ১০টা সিজ়ন ধরে চলা কমেডি শোয়ের সঞ্চালক। বুঝলাম, মানুষ আমায় গল্পকার হিসেবেই পেতে চাইবে।”
বাংলা গান ও ভাষার গুরুত্ব আজকাল নেই-এ কথার সঙ্গে একমত মীর।
তিনি বলেন, “মানুষ বাংলা লিখতে চায় না এটা সত্যি। শুনতে কিন্তু ভালবাসে। মানুষ এক ঘণ্টার বেশিই গল্প শুনতে চাইছেন। বাঙালি বাড়িতে যে অডিও নাটক শোনার রীতি ছিল, তা আজও বহমান। তবে প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে বাংলা ভাষা চর্চা নিয়ে। নতুন প্রজন্মের মধ্যে আগ্রহই তৈরি করতে পারছি না আমরা।“
আনন্দাবাজারের প্রশ্ন ছিল, মীরের কাছে ধর্মের অর্থ কী?
মীর বলেন, “ধর্ম মানেই মন্দিরে গিয়েই পুজো করতে হবে বা মসজিদে গিয়েই নামাজ পড়তে হবে, এমনটা আমি মানি না। আমি প্রকৃতির মাঝে গিয়েও মানসিক ভাবে অন্য জায়গায় পৌঁছে যেতে পারি।
“মসজিদে গিয়ে ইমাম সাহেবের পিছনে বসে যখন নামাজ পড়ি, সেই সময় মুখে কোরান থেকে কী বলছি, তার চেয়ে বেশি জরুরি মনে হয় সবার সিজদাহ করার দৃশ্য দেখতে পাওয়া। এটা দেখতে আমার খুব ভাল লাগে। এটাই আমার অধ্যাত্মবাদ। অনেকে আমায় বলেন যে, আমাকে নাকি মুসলমান-মুসলমান মনে হয় না।“
রাজনীতিতে আগ্রহ থাকলেও এ পর্যন্ত কোনো প্রস্তাব আসেনি বলে আক্ষেপ আছে মীরের।
“আমায় কেউ বলেনি, জানেন। আমি কিন্তু খুব চাই, কেউ প্রস্তাব দিক।“