পর্দায় মৃণাল সেনের চরিত্রে আসতে যাওয়া চঞ্চল চৌধুরী একটি ছবি দিয়েছেন ফেইসবুকে; জানিয়েছেন, নিজের ছবি তাকেও ফেলেছে ধন্দে।
মঙ্গলবার ছবিটি পোস্ট করে চঞ্চল লিখেছেন, “ছবিটা দেখে প্রথমে আমি নিজেও অবাক হয়ে যাই। এটা কি মৃণাল সেন, নাকি আমি! সত্যটা বুঝতে একটু সময় লেগেছে, সেই সাথে অনেকখানি ভালোও লেগেছে।”
এবছর চলচ্চিত্রকার মৃণাল সেনের জন্মশতবার্ষিকী। এ উপলক্ষে বছরব্যাপী নানা কর্মসূচি হাতে নিয়েছে চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সংগঠন।
তার মধ্যে কিংবদন্তি এই চলচ্চিত্র নির্মাতাকে নিয়ে ‘পদাতিক’ সিনেমা বানাচ্ছেন ভারতের বাঙালি চলচ্চিত্রকার সৃজিত মুখার্জি। তাকে মৃণালের চরিত্রে তিনি নিয়েছেন বাংলাদেশের চঞ্চলকে।
এই অভিনেতা বলেন, “ধন্যবাদ ও অশেষ কৃতজ্ঞতা সৃজিতদার প্রতি, এ রকম একটি চ্যালেঞ্জিং চরিত্রে অভিনয়ে আমাকে নির্বাচন করার জন্য।”
সিনেমাটিতে মৃণাল রূপে চঞ্চলকে সাজিয়েছেন মেকআপ আর্টিস্ট সোমনাথ কুন্ডু।
নিজের লুক এমন পালটে দেওয়ার কৃতিত্ব তাকে দিয়ে চঞ্চল লিখেছেন, “মেকআপ আর্টিস্ট সোমনাথ কুন্ডুর কী অসাধারণ কাজ।”
চঞ্চল বলেন, মৃণাল সেনের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে ‘ভ্যারাইটি’ সাময়িকীতে এই ছবিটি দিয়ে তার এবং পরিচালক সৃজিত মুখার্জী ও প্রযোজক ফেরদৌসুল হাসানের একটা সাক্ষাৎকার ছেপেছে।
বাবার মৃত্যু শোক নিয়েই ‘পদাতিক’ সিনেমার শুটিং শেষ করেছেন জানিয়ে চঞ্চল বলেন, “এ বছরেই ছবিটি মুক্তি পাবে সিনেমা হলে। প্রযোজকের ইচ্ছা একইসাথে দুই বাংলাতেই তিনি পদাতিক মুক্তি দিতে চান।”
মৃণাল চরিত্রে কেন চঞ্চল- উত্তরে সৃজিত এর আগে বলেছিলেন, “প্রথমত দুজনের মুখের মিল আছে। সেটা কাকতালীয়। কিন্তু মৃণাল সেনের মতই চঞ্চলের চোখের দৃষ্টি অত্যন্ত ধারালো এবং সজাগ। তা ছাড়াও তার রাজনীতি সচেতনতা, জীবনযাপন এবং দৃষ্টিভঙ্গির সঙ্গেও চঞ্চলের প্রচুর মিল পাওয়া যায়। সেটা কাকতালীয় হতে পারে। কিন্তু মিলটা আছে।”
বায়োপিকে মৃণালের স্ত্রী গীতা সেনের চরিত্রে দেখা যাবে পশ্চিমবঙ্গের অভিনেত্রী মনামী ঘোষকে।
মৃণাল সেন একাধারে চলচ্চিত্র পরিচালক, চিত্রনাট্যকার ও লেখক। ১৯২৩ সালের ১৪ মে বাংলাদেশের ফরিদপুরের ঝিলটুলিতে তার জন্ম। ফরিদপুর থেকেই এই বাঙালি নির্মাতার মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পর্যন্ত পড়াশোনা। এরপর তিনি থিতু হন কলকাতায়।
রুপালি জগতে নির্মাতা হিসেবে মৃণালের অভিষেক ঘটে ১৯৫৫ সালে ‘রাতভোর’ সিনেমায়। এরপরের দুই চলচ্চিত্র ‘নীল আকাশের নীচে’ ও ‘বাইশে শ্রাবণ’ তাকে এনে দেয় আন্তর্জাতিক পরিচিতি।
১৯৬৯ সালে মুক্তি পায় তার পরিচালিত ‘ভুবন সোম’। সেই সিনেমায় উৎপল দত্ত অভিনয় করেছিলেন। অনেকের মতে, এটাই মৃণাল সেনের শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র।
মৃণাল সেনের অন্যতম কাজ বলা হয় কলকাতা ট্রিলজি। ১৯৭১ থেকে ১৯৭৩ সালের মধ্যে মুক্তি পাওয়া ‘ইন্টারভিউ’ (১৯৭১), ‘ক্যালকাটা ৭১’ (১৯৭২) এবং ‘পদাতিক’ (১৯৭৩)-ওই তিন সিনেমায় কলকাতার তখনকার ‘অস্থির’ সময়কে তুলে ধরেছিলেন তিনি।
মধ্যবিত্ত শ্রেণির নীতিবোধকে তুলে ধরা মৃণালের প্রশংসিত দুটি সিনেমা ‘এক দিন প্রতিদিন’ (১৯৭৯) এবং ‘খারিজ’ (১৯৮২)। এছাড়া তার ‘মৃগয়া’, ‘আকালের সন্ধানে’ এবং ‘খণ্ডহর’ সিনেমাটিও প্রশংসিত।
১৮টি সিনেমার জন্য তিনি পেয়েছেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার। তার ঝুলিতে গেছে ১২টি আন্তর্জাতিক পুরস্কারও। ২০০৫ সালে ভারতের চলচ্চিত্র বিষয়ক সর্বোচ্চ সম্মাননা ‘দাদাসাহেব ফালকে’ পুরস্কার পান মৃণাল।
২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর প্রয়াত হন মৃণাল সেন।