কেন রাজ কাপুরের সঙ্গে পর্দায় ছিলেন না শর্মিলা?

বলিউড অভিনেতা রাজ কাপুরের সাথে শর্মিলার কাজের সূত্রে ঘনিষ্ঠতা না হলেও পারিবারিকভাবে তারা আত্মীয়।

গ্লিটজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 9 Dec 2022, 05:54 AM
Updated : 9 Dec 2022, 05:54 AM

আটাত্তর বছরের জীবনে ৬৩ বছরই অভিনয়ের সাথে চলেছেন ভারতীয় অভিনেত্রী শর্মিলা ঠাকুর। দীর্ঘ ক্যারিয়ারে অমিতাভ বচ্চন, রাজেশ খান্না, সুনীল দত্তের মত তারকাদের সঙ্গে জুটি বাঁধলেও তার বিপরীতে বলিউড কিংবদন্তী রাজ কাপুরকে দেখা যায়নি কখনও।

কিন্তু কেন? শর্মিলা ঠাকুরের ৭৮তম জন্মবার্ষিকীতে টাইমস অব ইন্ডিয়া এক প্রতিবেদনে সেই কারণটি খোঁজার চেষ্টা করেছে।

সেই প্রতিবেদন বলছে, কাজের সুযোগ তৈরি হয়েছিল অভিনেতা পরিচালক ও প্রযোজক রাজ কাপুর ও শর্মিলার। রাজ কাপুর পরিচালিত ‘মেরা নাম জোকার’ সিনেমার একটি অংশে অভিনয়ের কথা ছিল শর্মিলার।

তিনভাগে বিভক্ত ওই সিনেমার নির্মাতা রাজকাপুর ছবিটির দ্বিতীয় অধ্যায়ে এক সার্কাস কন্যার চরিত্রে ভেবে রেখেছিলেন শর্মিলাকে। সেইমত এই অভিনেত্রীর সঙ্গে কথাও সেরেছিলেন তিনি।

কিন্তু পরে বদলে যায় চিত্রনাট্য। কারণ সিনেমার সার্কাসের অংশটি নির্মাণে রাশিয়ার সহযোগিতা নিয়েছিলেন রাজকাপুর। এবং শেষমেশ শর্মিলাকে বাদ দিয়ে তার জায়গায় কাজ করেন ব্যালেরিনা কেসেনিয়া রায়বিঙ্কিয়ানা নামের এক শিল্পী।

রাজ কাপুরের সাথে শর্মিলার কাজের সম্পর্ক গড়ে ওঠেনি ঠিকই। তবে ছেলে সাইফ আলী খানের সাথে রাজ কাপুরের নাতনি কারিনা কাপুরের বিয়ে সুত্র ধরে তাদের মাঝে পারিবারিক সম্পর্ক গড়ে ওঠে। 

শর্মিলা ঠাকুরের জন্ম ১৯৪৬ সালের ৮ ডিসেম্বর ভারতের হায়দ্রাবাদে। বাবা গীতিন্দ্রনাথ ঠাকুর ছিলেন জোড়াসাঁকোর বিখ্যাত ঠাকুর পরিবারের সন্তান, গুণেন্দ্রনাথ ঠাকুরের বংশধর এবং অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের আত্মীয়। মা ইরা বড়ুয়া ছিলেন আসামের বিখ্যাত লেখক জ্ঞানদাভিরাম বড়ুয়ার কন্যা।

১৯৫৯ সালে সত্যজিৎ রায়ের ‘অপুর সংসার’ সিনেমার মাধ্যমে চলচ্চিত্রে তিনি পা রাখেন। ছবিতে তার অভিনীত চরিত্রের নাম ছিল অপর্ণা। তার নায়ক ছিলেন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়। 

১৯৬০ সালে মুক্তি পায় ‘দেবী’। সত্যজিৎ রায়ের এ চলচ্চিত্রে কেন্দ্রীয় চরিত্রে অভিনয় করেন তিনি। দয়াময়ী চরিত্রের মানসিক টানাপড়েন, অতিপ্রাকৃত প্রভাবের সংকট সার্থকভাবে পর্দায় তুলে ধরে সমালোচকদের বিপুল প্রশংসা পান।

১৯৬৩ সালে মুক্তি পায় তার তিনটি সিনেমা। ‘শেষ অঙ্ক’ ছবিতে অভিনয় করেন উত্তম কুমারের বিপরীতে। তপন সিংহ পরিচালিত ‘নির্জন সৈকতে’ চলচ্চিত্রেও তিনি ছিলেন কেন্দ্রীয় চরিত্রে। দুটি সিনেমাই বাণিজ্যিক সফলতা পায়।

‘ছায়া সূর্য’ ছবিতে ঘেঁটু নামে এক ভাগ্যবিড়ম্বিত তরুণীর চরিত্রে তার অভিনয় ছিল অনবদ্য। যদিও শিল্পধারার সিনেমা বলে সেটি বাণিজ্যিক সফলতা পায়নি।

১৯৬৪ সালে পরিচালক শক্তি সামন্তর ‘কাশ্মির কি কলি’ সিনেমার মাধ্যমে শর্মিলা প্রবেশ করেন হিন্দি সিনেমার জগতে।

বুদ্ধিদীপ্ত সৌন্দর্যের সুবাদে তিনি রাতারাতি তারকা বনে যান। একের পর এক মুক্তি পায় ‘ওয়াক্ত’, ‘অনুপমা’, ‘দেবর’ ‘শাওয়ান কি ঘাটা’। সবগুলোই বাণিজ্যিকভাবে সফল।

১৯৬৬  সালে মুক্তি পায় সত্যজিৎ রায়ের ‘নায়ক’। উত্তম কুমারের বিপরীতে অদিতি নামে এক সাংবাদিকের চরিত্রে অভিনয় করেন শর্মিলা ঠাকুর।

১৯৬৭তে মুক্তি পায় ‘অ্যান ইভিনিং ইন প্যারিস’। শক্তি সামন্ত পরিচালিত এ চলচ্চিত্রে বিকিনি পরে রীতিমতো হৈচৈ ফেলে দেন শর্মিলা। রক্ষণশীলরা সমালোচনা করলেও লাস্যময়ী নারীর ভূমিকায় দুর্দান্ত সফল হন তিনি।

ফিল্মফেয়ার ম্যাগাজিনের প্রচ্ছদেও বিকিনি পরা অবস্থায় দেখা যায় ঠাকুর পরিবারের এ মেয়েকে। সে সময় শর্মিলা ঠাকুর মানেই সিনেমার বাণিজ্যিক সফলতা ছিল নিশ্চিত।

‘আমনে সামনে’, ‘মেরে হামদাম মেরে দোস্ত’, ‘হামসায়া’, ‘সত্যকাম’, ‘তালাশ’- তার সব কটি ছবিই সফল। তবে সব সাফল্য ছাড়িয়ে যায় ১৯৬৯ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত সুপার-ডুপার হিট ‘আরাধনা’।

বাংলা-হিন্দি দুটি ভাষায় মুক্তি পাওয়া সিনেমাটি বাণিজ্যিকভাবে দারুণ সফল হয়। আর এ ছবির সুবাদে ফিল্মফেয়ারে সেরা অভিনেত্রীর পুরস্কার ঘরে তোলেন শর্মিলা ঠাকুর। তার বিপরীতে নায়ক ছিলেন রাজেশ খান্না। এ ছবির মাধ্যমে রাজেশ-শর্মিলা জুটির জয়যাত্রা শুরু হয়।

বাংলার পাশাপাশি হিন্দিতে পুরোপুরি বাণিজ্যিক সিনেমায় শর্মিলা ছিলেন দারুণ সফল। রাজেশ খান্নার বিপরীতে ‘সফর’, ‘অমর প্রেম’, ‘রাজারানি’, ‘দাগ’, শশী কাপুরের বিপরীতে ‘আ গালে লাগ যা’, দিলিপ কুমারের বিপরীতে ‘দাস্তান’ দারুণ ব্যবসাসফল হয়।

১৯৭৫ সালে মুক্তি পায় গুলজার পরিচালিত ‘মওসুম’। এ সিনেমায় মা ও মেয়ের দ্বৈত ভূমিকায় অসামান্য অভিনয় করেন শর্মিলা। তার বিপরীতে নায়ক ছিলেন সঞ্জীব কুমার। এ সিনেমার সুবাদে সেরা অভিনেত্রী হিসেবে ভারতের জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পান শর্মিলা ঠাকুর।

১৯৭৭ সালে শক্তি সামন্ত নির্মাণ করেন ‘অমানুষ’ ও ‘আনন্দ আশ্রম’ নামে দুটি দ্বিভাষিক ছবি। প্রধান চরিত্রে ছিলেন উত্তম কুমার ও শর্মিলা ঠাকুর। দুটি ছবিই বাণিজ্যিকভাবে সফল হয়।

১৯৬৯ সালে ক্যারিয়ারের মধ্যগগনে ভারতীয় ক্রিকেট দলের অধিনায়ক মনসুর আলি খান পতৌদির সঙ্গে বিয়ের পিঁড়িতে বসেন শর্মিলা ঠাকুর। সেজন্য ধর্ম পরিবর্তন করে মুসলমান হতে হয় তাকে। নাম গ্রহণ করেন বেগম আয়শা সুলতানা।

এই দম্পতির তিন সন্তান। ছেলে সাইফ আলি খান বলিউডের প্রতিষ্ঠিত নায়ক। মেয়ে সোহা আলি খানও অভিনেত্রী। আরেক মেয়ে সাবাহ আলি খান গয়নার ডিজাইনার। শর্মিলার পুত্রবধূ কারিনা কাপুর, আর কুনাল খেমু জামাতা।