“বেঠিক কাজ বা কথার আমরা অবশ্যই সমালোচনা করব, কিন্তু অভিনয় কেন বন্ধ করা হবে? আশা করি, তিনি আবার মঞ্চে সক্রিয় হবেন।”
Published : 01 Dec 2024, 01:01 PM
মামুনুর রশীদকে শিল্পকলা একাডেমির মঞ্চে অভিনয় থেকে ‘বিরত রাখার সিদ্ধান্ত’ কোনোভাবেই ‘গ্রহণযোগ্য নয়’ বলে মন্তব্য করেছেন অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ।
তিনি বলেন, "সারাজীবনের ভূমিকা বাদ দিয়ে কারও এক দুই-দিনের কথা বা কাজ দিয়ে সামগ্রিক সিদ্ধান্ত টানা খুবই ভুল।"
শিল্পকলার মঞ্চে অভিনেতা মামুনুর রশীদকে ‘কিছুদিন অভিনয় না করতে’ পরামর্শ দিয়েছেন শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক সৈয়দ জামিল আহমেদ। এই পরামর্শের পেছনে দেশের ‘বর্তমান বাস্তবতাকে’ কারণ হিসেবে ব্যাখ্যা দিয়েছেন তিনি।
এছাড়া এটি কোনো ‘অফিসিয়াল সিদ্ধান্ত নয়’ বলে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানিয়েছেন শিল্পকলার মহাপরিচালক।
এ ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ‘তোপের মুখে পড়েন’ জামিল আহমেদ। নাট্যকর্মীদের অনেকেই তার এই আচরণের নিন্দা জানিয়ে সরব হন সোশাল মিডিয়ার পাতায়।
এবার এই ঘটনা নিয়ে মন্তব্য করেছেন আনু মুহাম্মদ। রোববার সকালে ফেইসবুকে দেওয়া এক পোস্টে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক এই অধ্যাপক লেখেন, "মামুনুর রশীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি একটি স্লোগানের বিরোধিতা করেছেন, তিনি শিল্পকলা একাডেমি মঞ্চে সুন্দরবনবিনাশী প্রকল্প নিয়ে ‘বাহাস’ এর বিরোধিতা করেছেন।
"কিন্তু এটাও তো ঠিক যে, তিনি জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শরিক হয়েছিলেন, তিনি বিভিন্ন সময় ফুলবাড়ি, সুন্দরবন আন্দোলনের পক্ষে কথা বলেছেন। সর্বোপরি মুক্তিযুদ্ধ থেকে শুরু করে নাট্যকার, অভিনেতা, সংগঠক হিসেবে তিনি বাংলাদেশের নাট্যজগতে খুবই শক্তিশালী এক ব্যক্তিত্ব।"
এ বিষয়ে মামুনুর রশীদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেছেন, “রাঢ়াঙ নাটকটিতে আমি যেন ‘কিছুদিন অভিনয় না করি’, সেটি আমাকে বলেছেন শিল্পকলার মহাপরিচালক।”
মহাপরিচালক সৈয়দ জামিল আহমেদের ভাষ্য, ব্যক্তিগত সম্পর্কের জায়গা থেকেই মামুনুর রশীদকে এই কথা বলেছেন তিনি। এটা নিয়েও এরকম ‘ইস্যু তৈরি হওয়ায়’ মর্মাহত তিনি।
মামুনুর রশীদ বলেন, “সৈয়দ জামিল আহমেদ একই সঙ্গে যেমন ব্যক্তি, আবার তিনি শিল্পকলার মহাপরিচালকও। ফলে তিনি যখন শিল্পকলাকেন্দ্রিক কোনো বিষয়ে আমাকে ফোন করেন, তখন সেটি তো মহাপরিচালকের জায়গা থেকেই বলেছেন বলে ধরে নেব।”
অভিনয়ে মানা কেন?
শিল্পকলা একাডেমিতে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, একাডেমি থেকে আরণ্যক প্রযোজিত ‘রাঢ়াঙ’ নাটকটি প্রদর্শনীর ব্যবস্থা করতে চায় শিল্পকলা একাডেমি। কিন্তু এই নাটকে মামুনুর রশীদ অভিনয় করার কারণে কিছু লোকের ক্ষোভ রয়েছে।
সম্প্রতি দেশ নাটকের ‘এহসানুল আজিজ বাবু’কে আওয়ামী লীগের দোসর আখ্যা দিয়ে কিছু লোক ‘নিত্যপুরাণ’ নাটকের প্রদর্শনী বন্ধ করার দাবি তোলে। এরকম কোনো পরিস্থিতি যেন না হয়, তার জন্য মামুনুর রশীদকে ফোন করেছিলেন শিল্পকলার মহাপরিচালক।
জামিল আহমেদের কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “মামুনুর রশীদ আমার কাছে ভীষণ সম্মানের জায়গায় আছেন। তাকে নিষিদ্ধ করার আমি কে? আমি কেবল পরিস্থিতি জানানোর জন্য তাকে ফোন করেছিলাম। জুলাই আন্দোলনের সময় মামুনুর রশীদসহ কয়েকজন একটা বিবৃতি দিয়েছিলেন। তাতে কিছু লোক তার উপর ক্ষুব্ধ হয়ে আছেন। মামুনুর রশীদের মতো একজন গুণি শিল্পী যেন কোথাও অসম্মানিত না হন, এজন্য ব্যক্তিগত জায়গা থেকে তাঁকে পরিস্থিতিটা বলেছি।
“আমি চেয়েছি আরণ্যক প্রযোজিত 'রাঢ়াঙ' নাটকটি সারা দেশে মঞ্চায়ন হোক, এটি আমারও খুবই পছন্দের নাটক। সম্প্রতি ‘নিত্যপুরাণ’ নাটক নিয়ে যা হয়েছে, মামুনুর রশীদকে নিয়ে যেন এরকম কিছু না হয়। তাঁর মতো গুণি শিল্পীকে ঘিরে কোনো রকম বিতর্ক যেন না আসে।”
জামিল আহমেদ বলেন, “মামুনুর রশীদকে ভালোবাসার জায়গা থেকেই আমি বলেছিলাম, কিছুদিন আপনি অভিনয় না করলে ভালো হয়। কিছুদিন পর পরিস্থিতি ঠিক হলে, আপনি আবার অভিনয় করেন। তাকে নিষিদ্ধ করা হয়নি।”
মামুনুর রশীদ বলেন, “কারো ভয়ে তো নাটক বন্ধ হতে পারে না। ‘নিত্যপুরাণ’ নাটকের প্রদর্শনী বন্ধ হয়েছিল। আমরা সবাই মিলে প্রতিবাদ করেছি, ‘নিত্যপুরাণ’ নাটকের প্রদর্শনী আবার হয়েছে।। নাটকে কেউ বাধা দিতে আসলে সবাই মিলেই প্রতিবাদ করবো।”
আগের খবর