আবুল হায়াত, শম্পা রেজা, দিলারা জামান ও ডলি জহুরের কাছে শৈশবের ঈদ উৎসবের স্মৃতি অমলিন।
Published : 31 Mar 2025, 04:47 PM
চল্লিশ বা পঞ্চাশের দশকে জন্ম নেওয়া যে মানুষগুলো ছেলেবেলায় ঈদের জামা-জুতো লুকিয়ে রাখতেন বা চাঁদ দেখার প্রতিযোগিতায় নামতেন, বয়সের ভারে বা সময় বদলের দাপটে সেই মানুষগুলোর কাছে ঈদের আনন্দ এখন অনেকটাই ফিকে।
তাদের কাছে ঈদ মানে স্মৃতি হাতড়ে বেড়ানো অথবা একাল-সেকালের পার্থক্য খুঁজে ফেরা। জীবনের বেশিরভাগ সময় পাড়ি দিয়ে আসা দেশের বিনোদন জগতের অভিনয় শিল্পী আবুল হায়াত, দিলারা জামান, ডলি জহুর ও শম্পা রেজার কাছেও শৈশব কৈশোরের ঈদ উৎসবের স্মৃতি অমলিন এবং আনন্দের; কিন্তু ঈদ উদ্যাপনের পারিবারিক ও সামাজিক পার্থক্যে মনবেদনায় ভোগেন তারা। চেষ্টা করেন কেবল মানিয়ে নিতে।
এই চারজনের মধ্যে আবুল হায়াত ও শম্পা রেজা পরিবারের সঙ্গে থাকলেও দিলারা জামান ও ডলি জহুরের ছেলেমেয়েরা দেশের বাইরে থাকায়, ঈদের দিনটি সাধারণত একা কাটাতে হয় তাদের।
গ্লিটজের সঙ্গে কথোপকথনে তারা ভাগ করে নিয়েছেন শৈশবের ঈদের বিশেষ স্মৃতি, আনন্দ-বেদনার কাব্য। তাদের স্মৃতিতে উঁকি দিয়েছে মায়ের হাতের রান্না বা নিজেদের ছেলেমেয়েদের সঙ্গে নিয়ে উৎসব উদ্যাপনের ফেলে আসা আনন্দ।
আবুল হায়াতের ঈদের দিন কাটে অতিথির অপেক্ষায়
জীবনের নানা স্মৃতিতে চড়া পড়লেও, ঈদের স্মৃতি আজও জ্বলজ্বলে আশি পেরুনো অভিনেতা আবুল হায়াতের মনে।
গ্লিটজকে তিনি জানিয়েছেন, এখনকার শিশুদের মধ্যে ঈদ নিয়ে তেমন কোনো উৎসাহ তার চোখে পড়ে না, তবে এর ঠিক উল্টো ছিলেন তারা।
হায়াত বলেন, “ঈদের জামা-কাপড় আগে থেকেই কিনে লুকিয়ে রাখা হত, যাতে কেউ দেখে না ফেলে। সকালে দল বেঁধে ফুল কুড়িয়ে এনে ঘর সাজানো হত। বাবার সঙ্গে নামাজ পড়ে বাড়ি ফিরে বন্ধুদের সঙ্গে দল বেঁধে বাড়ি বাড়ি সেমাই খেতে যেতাম।”
নামাজ ও ঘোরাঘুরি শেষ করে বাড়ি ফিরতে ফিরতে প্রায় সকাল দশটা বেজে যেত বলে জানিয়েছেন বর্ষীয়ান এই অভিনেতা।
শৈশবের সঙ্গে এখনকার ঈদ উৎসবের পার্থক্য তাকে বেশ কষ্ট দেয় বলে জানিয়েছেন তিনি।
আবুল হায়াতের কথায়, “শৈশব মানুষের জীবনের সবচেয়ে নিষ্পাপ আর আনন্দময় অধ্যায়। সেই সময় মা-বাবা, বন্ধু-বান্ধব, ভাই-বোন সবাই ছিল। এখনও ঈদের দিন স্মৃতিতে ডুবে যাই। কিন্তু এখন ছেলেমেয়ে, নাতি-নাতনীদের মধ্যে সেই উন্মাদনাটা দেখি না।
“জামাকাপড় কিনে দিলে ওরা পরল কি পরল না, ঘুম থেকে উঠল কি উঠল না, এমন একটা উদাসীন ভাব।”
একাল-সেকালের পার্থক্যে তার মন খারাপ হলেও অভিনেতা মেনে নিয়েছেন, মনকে বুঝিয়েছেন যে সময়ের পরিবর্তন তো আর ঠেকানো যাবে না।
ঈদে আবুল হায়াতের প্রিয় খাবারের তালিকায় ছিল মায়ের হাতের লাচ্ছা সেমাই, জর্দা, হালুয়া, পরোটা, পোলাও, মুরগির মাংস।
বিশেষ করে হালুয়ার কথা খুব মনে পড়ে তার।
“মায়ের বাড়ি ছিল মুর্শিদাবাদে, সেখানকার ঐতিহ্য ছিল নানা পদের হালুয়া বানানো।”
কিছুটা মন খারাপ করে আবুল হায়াত জানিয়েছেন, এখন ঈদের দিনটা কাটে বাড়িতে অতিথির জন্য অপেক্ষা করে।
“যদি কেউ আসে, তাদের আপ্যায়ন করা হয়, গল্পগুজব করে।”
কোনো কোনো ঈদ কেবল অপেক্ষাতেই চলে যান বলে জানিয়েছেন তিনি।
“আজকাল তো আর কেউ সেভাবে আসেও না, টেলিফোনেই ঈদের শুভেচ্ছা জানায়।”
তবে এখনও মায়ের সময়ের ঐতিহ্য ধরে রেখে ঈদের দিনে কিছু বিশেষ খাবার আবুল হায়াতের বাড়িতে তৈরি হয়।
যেমন মায়ের সময়ের মুরগির মাংস, লাচ্ছা সেমাই, জর্দা, হালুয়া, পরোটা, পোলাওয়ের পাশাপাশি এ সময়ের চলতি খাবার চটপটি, ফুচকা, দইবড়া যোগ হয়েছে বলেও জানিয়েছেন তিনি।
তিনি বলেন, “মিষ্টি এখন তেমন খেতে পারি না, তবে ঈদের দিন একটু একটু করে সবই চেখে দেখি।”
ঈদের আগে রাত অর্থাৎ চাঁদরাত এখনো স্মৃতিতে অমলিন বলে গ্লিটজের কাছে জানিয়েছেন হায়াত।
ঈদের চাঁদ দেখার স্মৃতি তুলে ধরে তিনি বলেছেন, ইফতারের পর চাঁদ দেখার জন্য মসজিদে যেতেন। সবাই আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকতেন। চাঁদ দেখা মাত্র দৌড়ে বাড়ি ফিরে মা ও বাড়ির সবাইকে সেই খবর দিতেন। আগে রাতে ঘুম প্রায় হতই না, কখন সকাল হবে, কখন নতুন জামা পরবেন, এই অপেক্ষায় নির্ঘুম রাত কাটাতেন।
এখনও ঈদের পোশাক কেনার আনন্দ পান তিনি।
হায়াত বলেন, "নতুন কাপড় তো সবসময়ই আনন্দের। তবে ছোটবেলার সেই আনন্দটা হারিয়ে গেছে। এখন অনেক কাপড়ের ভিড়েও ঈদের পাঞ্জাবির আনন্দটা ধরে রাখতে চাই।”
সেলাই মেশিনের শব্দ এখনো কানে বাজে শম্পা রেজার
সত্তর, আশি, নব্বই দশকের জনপ্রিয় অভিনেত্রী শম্পা রেজাও তাদের সময়ের সঙ্গে এখনকার ঈদের পার্থক্যের কথা জানিয়েছেন আবুল হায়াতের মত করেই।
তার কথায় পার্থক্য ‘আকাশ-পাতাল’।
শম্পা রেজা গ্লিটজের সঙ্গে ঈদের স্মৃতি ভাগাভাগি শুরু করেন চাঁদ দেখার গল্প নিয়ে।
"তখন তো এত বেশি উৎসব ছিল না। আমি বলছি বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার আগের কথা। ঈদের পর্ব শুরু হত চাঁদরাত থেকে। সবাই মিলে ছাদে যেতাম, কে আগে চাঁদ দেখতে পাবে, এটাই ছিল প্রতিযোগিতা। আকাশে বাঁকাচাঁদ দেখে প্রস্তুতি নিতাম পরের দিন ঈদ উদযাপনের।"
এই অভিনেত্রীর কথায় ফুটে উঠেছে তাদের সময়ের সীমিত সামর্থ্যের মধ্যেও আনন্দ খুঁজে পাওয়ার কথা।
"আমাদের শৈশবে অত কাপড়ের বাহার ছিল না। পাড়ায় মহল্লায় এত দর্জির দোকানও ছিল না। মায়েরা, ফুপুরা, খালারা ঈদের জামা বানাতেন। দুই ঈদে ওই দুই জামাই ছিল সারা বছরের বাইরে পরার পোশাক। সঙ্গে ছিল একজোড়া জুতো। বছরজুড়ে আমরা ঈদের জামা আর জুতোর অপেক্ষায় থাকতাম।”
সময়ের পার্থক্য তুলে ধরতে তিনি বলেন, “তখন লোকদেখানো ব্যাপারগুলো কম ছিল। মানুষের ভেতরে একধরনের পরিমিতিবোধ ছিল, আয়োজন-উদযাপনে। আনন্দগুলো বেশ স্বচ্ছ ছিল। মানুষের ভেতরে লোভটা অনেক কম ছিল। এখন কেমন যেন মানুষের প্রবণতাগুলো লোভী ও প্রদর্শনবাদী হয়ে উঠেছে।"
ঈদের বিশেষ কোনো স্মৃতি আছে কী না জানতে চাইলে শম্পা রেজা বলেন, "একবার ঈদে আমার খালারা সিদ্ধান্ত নিলেন পরিবারের সব মেয়েরা একই রকম কাপড় পরবেন। ওই স্মৃতি আমাকে এখনও আনন্দিত করে। সবার জন্য সবুজ রঙের একই রকম কাপড় কিনে আনা হল বাড়িতে। বাড়িতে কাপড় বানানোর উৎসব লেগে গেল যেন। নিচে লেইস লাগানো হলো, ওটাকে বলা হত গুলশান নেট।
“বাড়িতে ছোট যারা আছে তাদের জন্য বানানো হচ্ছে ফ্রক আর বড়দের জন্য সালোয়ার কামিজ। সারাদিন বাড়িতে সেলাই মেশিনের সেই শব্দ এখনও কানে বাজে। তো জামা বানানো হল, সবাই একই রঙের জামা পরে ঈদের দিন ঘুরে বেড়ালাম। যেন চোখের সামনে দেখতে পাচ্ছি সেদিনের সেই ঈদ।"
শৈশবের ঈদের খাবারের স্মৃতিও মনে করে এই অভিনেত্রী বলেছেন, তখন পোলাও কোরমাও রোজ রোজ কোনো বাড়িতে রান্না হত না।
“কেবল ঈদ এলেই বাড়িতে মা পোলাও রাঁধতেন, কোরমা রাঁধতেন, মাংস রাঁধতেন। সারা বাড়ি খাবারের গন্ধে মৌ মৌ করতো। বছরের ওই দুই ঈদের আমরা খাবারের জন্য প্রতীক্ষায় থাকতাম। পোলাওয়ের চালের সেই ঘ্রাণটাও মনে হয় এখন আর নেই।"
অভিনেত্রীর ভাষ্য, শৈশবের আনন্দের সাথে তো কৈশোর, যৌবন, বার্ধক্যের আনন্দের পার্থক্য তৈরি হতে থাকে। তাই সময়ের সঙ্গে নিজেকে মানিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেন তিনি।
এখন ঈদের দিনে কী করেন জানতে চাইলে বলেছেন, এখন ঈদের সকালে ছেলের বাসায় চলে যান তিনি। পুত্রবধূ, বেয়াইনের হাতের মাংস পোলাও খান। নাতি-নাতনীদের সাথে জমজমাট ঈদ কাটানোর চেষ্টা করেন।
তিনি বলেন, "ওই যে দুই ঈদের দুই জামা আমাদের যেমন প্রাপ্তিসুখে ভোগাত, এখন এক ঈদের ১০ জামাতেও কি আমাদের বাচ্চারা সেই আনন্দ পাচ্ছে? আমরা কি আনন্দের মাপকাঠি কোনো একটা জায়গায় ভেঙে ফেলেছি? এখনকার ঈদের দিনে এই সমস্ত আমাকে ভাবায়।
“আমাদের সময়ে মানুষ হিসেবে বেড়ে ওঠার একটা মানদণ্ড ছিল। আমরা ত্যাগ করা শিখতাম। আমার মনে হয় আমাদের সামগ্রিক শিক্ষা ব্যবস্থায় প্রকৃত ত্যাগের শিক্ষাটা মুখ্য করে তোলা উচিত। ঈদের দিনে এটাই আমার চাওয়া।"
তবে সময়ের সাথে সাথে মানুষের অর্থনৈতিক বাস্তবতাও বদলেছে জানিয়ে শম্পা রেজা বলেছেন এই বাস্তবতায় এটা বলা যায় না যে যে বছরে দুটো বা চারটে জামা কিনে কাটাতে হবে, তাহলে তো তাদের ব্যবসাও লাটে উঠবে।
“আমার চাওয়া হল যতটুকু দরকার আমরা যদি ঠিক ততটুকু নিজের জন্য কিনে বাকিটা যাদের কেনার সামর্থ্য নেই তাদের জন্য কিনি তাহলে পৃথিবীটা অনেক আনন্দের হয়ে উঠতে পারে।"
সময়ের সঙ্গে দিলারা জামানের ঈদ আনন্দ বদলে গেছে
একুশে পদক, জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত অভিনেত্রী দিলারা জামান। মঞ্চ, রেডিও, টেলিভিশন ও চলচ্চিত্রে ছয় দশকেরও বেশি সময় ধরে অভিনয় করছেন।
৮৩ বছর বয়সেও এখনও নিয়মিত কাজ করে চলেছেন তিনি। দুই মেয়ে দেশের বাইরে থাকায় উত্তরার বাসায় ঈদের দিনটি তাই একাই কাটে তার। তবে এবারের ঈদ আনন্দ নিয়ে এসেছে অভিনেত্রীর কাছে। কারণ ছোট মেয়ে যুক্তরাষ্ট্র থেকে ঢাকায় আসছেন তার সঙ্গে ঈদ করতে।
ঈদ নিয়ে দিলারা জামানের কথা হল, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সবকিছু ‘বদলে যায়’।
“আগে ভোররাতে সেহরির সময় গান গেয়ে ঘুম ভাঙানো হত, তারপর সাইরেন বাজত। এখন এসব কিছুই হয় না। ঘড়ি, মোবাইল দেখে মানুষ জেগে ওঠে। পাড়ায় পাড়ায় কেউ আর ঘুম ভাঙাতে যায় না। যারা রোজা রাখেন, তারা নিজের তাগিদেই ওঠেন। ইফতারসহ সবকিছুই বদলে গেছে, স্বাদও নষ্ট হয়ে গেছে। তেমনি ঈদের দিনটিও আগের মত নেই।"
গ্লিটজের কাছে শৈশবের চাঁদরাতের স্মৃতিকথা পাড়েন এই অভিনেত্রী।
কথায় কথায় তিনি জানালেন, পুরান ঢাকার লালবাগে তাদের বাড়ি ছিল, সবাই ছাদে উঠে চাঁদ দেখা গেলে পটকা ফোটানো শুরু হত। চারপাশে মাইকে গান বাজত, ঈদের ঘোষণা শোনা যেত। অন্যরকম আনন্দ ছিল।
ঈদের মজার স্মৃতি কি ছিল জানতে চাইলে তিনি বলেছেন, ঈদের জামা কেনা হলে সেই লুকিয়ে রাখতেন।
“এখন তো একটা কাপড়ে কেউ খুশি হয় না, কিন্তু আমাদের সময় একটা কাপড় হলেই খুব যত্নে রাখা হত। একবার ঈদে আমার বড় ভাই জুতা লুকিয়ে রেখেছিলেন, যাতে অন্যরা দেখে না ফেলে। ঈদের দিন সকালে জুতা না পেয়ে সবাই খোঁজাখুঁজি করে হয়রান, তারপর তিনি পুরান জুতা পরে নামাজ পড়তে গিয়েছিলেন। দুইদিন পর আলমারির পেছন থেকে সেই জুতা পাওয়া গিয়েছিল। এরকম অনেক মজার ব্যাপার আছে।”
ঈদের দিনটি কীভাবে কাটে, জানতে চাইলে দিলারা জামান বলেন, "আগে সবাই কাছে ছিল, এখন বাচ্চারা কেউ কাছে নেই। আত্মীয়স্বজন আসেন, বাসায় রান্না করে খাওয়ানোর চেষ্টা করি। তেমন আয়োজন করি না, একাই কাটে দিনটি।
“প্রতিবেশিরা খুব ভালো, তাদের বাসায় দুপুরে খেতে বলেন। মেহমান থাকলে তাদের খাইয়ে তারপর যেতে বলেন। এই মায়া, ভালোবাসার জন্যই এই দেশে একা থাকা।"
অভিনেত্রীর ভাষ্যমতে, এটাই তার শেকড়। মেয়েরা যুক্তরাষ্ট্রে থাকে, কিন্তু দেশের জন্য তাদের কাছে গিয়ে থাকতে পারেন না।
আর দশটা দিনের সঙ্গে পার্থক্য পাই না: ডলি জহুর
অভিনেত্রী ডলি জহুর, যিনি বিনোদন জগতে 'ডলি মা' নামে পরিচিত, সময়ের পরিবর্তনের সাথে ঈদের চিত্রটা কীভাবে বদলে গেছে, সেই কথা গ্লিটজের কাছে তুলে ধরেছেন।
ছোটবেলার ঈদ স্মৃতি হাতড়ে ডলি জহুর বলেছেন, আগে ঈদ মানে ছিল ছেলেদের আনন্দ, হইহুল্লোড়। আর মেয়েদের ঈদ মানে ছিল রান্নাঘরে সারাদিন কাজ করা।
“আগে ঈদ নিয়ে অন্যরকম একটা অনুভূতি কাজ করত, এখন আর করে না। অন্য দশটা দিনের মতই এই দিনটাও কাটে।"
শৈশবের ঈদ নিয়ে তিনি বলেন, "ভূতের গলিত বাসা ছিল, সেখানেই বেড়ে ওঠা। ছোটবেলা থেকেই দূরন্ত ছিলাম, ডানপিটে মেয়ে ছিলাম। ঈদের দিন বাবা-মা একটু ছাড় দিতেন, বিভিন্ন জায়গায় চলে যেতাম, গাছে চড়ার প্রতিযোগিতা করতাম।"
ছোটবেলার ঈদের আরেকটি স্মৃতির কথা বলতে গিয়ে তিনি বলেন, "পাড়ায় বড় ভাই-বোনেরা মিলে একটা অনুষ্ঠানের আয়োজন করত। পর্দায় সিনেমা দেখাত, বিভিন্ন খবর, ডকুমেন্টারি দেখতাম। খোলা মাঠে বসে, চৌকি বিছিয়ে স্টেজ বানানো হত, সেখানে আমরা পারফর্ম করতাম। পেছনে দেওয়ার জন্য শাড়ি নিয়ে আসতাম। মাইকে গান বাজত। এখন সব বদলে গেছে। তাছাড়া ৫০-৬০ বছর আগের স্মৃতি খুব একটা মনেও নেই।"
বিয়ের পর স্বামী ও ছেলেকে নিয়ে উত্তরার বাসায় ঈদের দিন বেশ আনন্দেই কেটেছে ডলি জহুরের। এখন স্বামী প্রয়াত, ছেলেও অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী। তাই ঈদের দিনটা দিলারা জামানের মত তারও একাই কাটে। তবে এই অভিনেত্রীরও এবারের ঈদ একা করতে হচ্ছে না। অস্ট্রেলিয়া থেকে ছেলে ও তার পরিবার ঢাকায় আসছে মায়ের সঙ্গে ঈদ করতে।
ঈদের দিন কি করেন জানতে চাইলে ডলি জহুর বলেন, "আগে খুব রান্না করতাম, যখন জহুর সাহেব (জহুরুল ইসলাম) ছিলেন। এখন আর অত রান্না করা হয় না। কার জন্য করব, আমি তো এখন একা। অতিথি এলে একটু রান্না করি। ছেলে, বউ, নাতিরা সবসময় ঈদে আসতে পারে না।"
ছেলে কত বছর পর পর আসে, জানতে চাইলে তিনি বলেন, "ছেলে খুব একটা আসতে পারে না, আসলে এক মাসের জন্য আসে। আমারই যাওয়া হয়। গত বছরের জুলাইয়ে গিয়েছিলাম, কয়েক মাস থেকে কিছুদিন আগে ফিরেছি।এবার এসেছে।"
ঈদের দিন বিনোদন জগতের অনেকেই তাকে দেখতে আসেন, তাদের নিয়েও অনেকটা সময় কাটে বলে জানিয়েছেন ডলি জহুর।
তিনি বলেন, "সবাই আসে দেখতে, এটা সেটা নিয়ে। মা তুমি কী খাবে, তোমার জন্য এটা নিয়ে আসব, ওটা নিয়ে আসব, এমন করে সবাই অস্থির করে দেয়।"