Published : 17 Aug 2024, 03:59 PM
বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সময় গানে গানে প্রতিবাদ জানিয়েছেন বাংলাদেশের র্যাপ শিল্পীরাও। এই আন্দোলনকে ঘিরে প্রকাশিত হয়েছে এসব শিল্পীদের বহু র্যাপ গান।
এর মধ্যে 'তানজ প্রোডাকশন' নামের ইউটিউব চ্যানেল থেকেই প্রকাশিত হয়েছে প্রায় বিশটির মতো গান। যে গানগুলোতে কণ্ঠ দিয়েছেন নয়জন র্যাপ সঙ্গীত শিল্পী।
গানগুলোর মধ্যে তানজ অর্থাৎ তানজিম নূর ও ইমতিয়াজ আকিব গেয়েছেন 'ছাত্র' শিরোনামের গানটি। তাছাড়াও ইমতিয়াজ আকিবের কণ্ঠে শোনা গেছে আরও পাঁচটি গান। সেগুলো হল 'অসুস্থ বাংলাদেশ', 'প্রশ্ন', 'স্বাধীন বাংলা', 'পালাইছে', 'মায়ের অভিশাপ'।
ড. সাইট্রিড, যার মূল নাম আহাদ রহমান, তার কণ্ঠে শোনা গেছে 'সময়ের গান' ও 'সুবিচার চাই'। অন্যান্যদের মধ্যে নিরব খান গেয়েছেন 'রক্তের বন্যা' ও 'বারি মার'। ব্ল্যাক জূবূর গেয়েছেন ' দমায় দেখা', তানজের 'ভাঙচুর' এবং এমসি ট্রেনের 'কেরা রে' প্রকাশ হয়েছে।
এছাড়া শিল্পী বার্লিন গেয়েছেন 'ধ্বংস', রাফসান আহমেদ সিয়াম গেয়েছেন 'আমি কে?' ও 'এক দফা'। তানজ ও আহমেদ শুভ গেয়েছেন 'রক্ত'। তাছাড়া তানজ ও সিয়ামের 'কি করলি' এবং হাসান তিমন 'বিভ্রম' শিরোনামের গান গেয়েছেন।।
এই গানগুলো প্রকাশ হয়েছে জুলাইয়ে আন্দোলনের শুরু থেকে অগাস্ট পর্যন্ত। গানগুলো সৃষ্টির অনুপ্রেরণা কিভাবে তৈরি হল জানতে কথা হয় 'তানজ প্রোডাকশনের’ প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা তানজিম নূরের সঙ্গে।
তিনি গ্লিটজকে বলেন, "বাস্তবতা নিয়ে গান তৈরি করার ইচ্ছে থেকে কাজ করা হয়েছে। যেটা আমরা অনেক আগে থেকেই করে আসছিলাম। গানের মাধ্যমে সমাজের কাছে বার্তা পৌঁছে দেওয়ার পরিকল্পনা থেকে কিছু শিল্পী খুঁজছিলাম অনেক বছর ধরেই। মনে হয়েছে র্যাপ গানের মাধ্যমে আমরা সমাজের পরিবর্তন আনাতে পারি। মানুষকে সচেতন করতে পারি। আমাদের গানগুলো দিয়ে মানুষের বিবেককে প্রশ্ন করা হয়। কোটা আন্দোলনের সময় বাংলাদেশের পরিস্থিতি গুলো আমরা গানের মাধ্যমে তুলে ধরেছি।
“এতোগুলো শিক্ষার্থী রাস্তায় অবস্থান করেছে, তাদের ওপর হামলা হয়েছে, এসব মেনে নেওয়া যায় না। তাই গানের মাধ্যমে প্রতিবাদ এবং মানুষকে সজাগ করে তুলতেই এই গানগুলো তৈরি।"
২০১২ থেকেই র্যাপ সংগীতের প্রতি আগ্রহ থেকে গান তৈরি করতেন তানজিম। যার ডাক নাম ‘তানজ’। নিজের প্রোডাকশন থেকে 'মানুষ অমানুষ এক' গান প্রচারের পর দর্শকের বেশ ইতিবাচক সাড়া পান তিনি। তারপর থেকেই এই র্যাপ গান নিয়ে কাজ করার অনুপ্রেরণা তৈরি হয় বলে জানান এই শিল্পী।
তবে ‘বিপ্লবী গান’ করে কিছুটা আতঙ্কের মধ্যে থাকতে হচ্ছে জানিয়ে এই শিল্পী বলেন, "নির্বাচনের সময় থেকেই দেশের অনিয়ম ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে গান তৈরি করছিলাম। সেময় আমাদের শিল্পীদের অনেকে হুমকির মুখে পড়েছে। 'অসুস্থ বাংলাদেশ' গানটি প্রায় এক বছর আগে তৈরি করা হয়েছিল কিন্তু আমরা গানটি প্রচার করতে পারছিলাম না। কারণ দেশের পরিস্থিতি নিয়ে গান ছাড়লে, সমালোচনা করলেই ঝামেলা হত। অনেক হুমকি-ধামকির সম্মুখীন হতে হত। গান তৈরি করেও ওই রকম আলোচনা বা সামনে আনতে পারিনি। তবে কোটা আন্দোলনের সময়টায় আর চুপ থাকা যায়নি। অনেকগুলো গান আমরা প্রচার করি।”
আন্দোলনের সময় ইমতিয়াজ আকিবের কণ্ঠে শোনা গেছে প্রায় সাতটি গান।
গ্লিটজকে তিনি বলেন, "আমরা তো মাঠে যেতে পারিনি, কিন্তু আমরা গানে গানে প্রতিবাদ করেছি। মানুষদেরকে গানের মাধ্যমে সাহস যুগিয়েছি। বিজয়ের পর একটা অন্যরকম শান্তির ও সুখের অনুভূতি পেয়েছি।"
গান প্রচারের পর হুমকি পেয়েছেন জানিয়ে এই শিল্পী বলেন, "অনেক আতঙ্কে দিন কাটাতে হয়েছিল আমাদের। অনেক হুমকি এসেছে, একটা ভয়ের মধ্য দিয়ে সময় কাটিয়েছি। গান রিলিজের পর বাসায় থাকতে পারছিলাম না। বারবার ঝামেলা হচ্ছিল। তবে সেসব কাটিয়ে এই স্বাধীনতার আমাদের।"
‘ড. সাইট্রিড’ খ্যাত আহাদ রহমান পেশায় একজন চিকিৎসক, পাশাপাশি র্যাপ গান করেন। আন্দোলনের সময় হাসপাতালের চিকিৎসার দায়িত্বে ছিলেন তিনি। সহিংস ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ছিলেন তিনি নিজেই।
সেই সময় প্রতিবাদের ভাষা হিসেবে গানকে বেছে নেন জানিয়ে এই শিল্পী বলেন, "আমার গানগুলো ছিল নিজেদের অধিকার নিয়ে সচেতন হওয়ার বার্তা। আমার মত সাধারণ মানুষ যদি রাস্তায় দাঁড়িয়ে বক্তৃতা বা কবিতার মত কিছু বাস্তববাদী কথা বলে কেউ শুনবে না। তাই প্রতিবাদের ভাষায় শৈল্পিক মাধ্যমে গানগুলো রিপ্রেজেন্ট করার চেষ্টা করেছি।
“আমি নিজেও একজন চিকিৎসক। আমি আমার ডিউটি টাইমে যে ঘটনাগুলো দেখেছি, যেহেতু মাঠে যেতে পারিনি তাই মিউজিকের মধ্য দিয়ে প্রতিবাদ করে মানুষের মধ্যে কানেকশন তৈরি করার চেষ্টা করেছি। সবাই যেন নিজ নিজ জায়গা থেকে সরব হয়। মানুষের বাক স্বাধীনতা যেন ফিরে আসে।"