আন্দোলন চালিয়ে গেলেও আলোচনার পথ খোলা আছে বলে জানিয়েছেন কৌশিক, অঞ্জন, রাজ চক্রবর্তীরা।
Published : 30 Jul 2024, 05:23 PM
কলকাতার পরিচালক রাহুল মুখার্জিকে ‘বয়কট’ করা নিয়ে টেকনিশিয়ান ফেডারেশনের অবস্থান পরিবর্তন না হওয়ায় কর্মবিরতি ‘চালিয়ে যাওয়ার’ ঘোষণা দিয়েছেন পরিচালকরা।
তবে আলোচনার পথও খোলা রাখার কথা বলেছেন পরিচালক কৌশিক গাঙ্গুলি, অঞ্জন রায় এবং রাজ চক্রবর্তীরা। এই সংকট সমাধানে তৃতীয় কোনো পক্ষকে মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকায় দেখতে চাইছে পরিচালকদের সংগঠন ডিরেক্টরস গিল্ড।
গিল্ডের সদস্যরা সোমবার রাত ৮টায় বৈঠকে বসেন। সেখানে উপস্থিত ছিলেন ১৩০ জন পরিচালক। বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন তারা।
সংবাদ সম্মেলনে সামনের সারিতে ছিলেন সৃজিত মুখোপাধ্যায়, কৌশিক গাঙ্গুলি, অঞ্জন দত্ত, শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়, অরিন্দম শীল, রাজ চক্রবর্তী, হরনাথ চক্রবর্তী, অনির্বাণ ভট্টাচার্যসহ কয়েকজন।
কৌশিক গাঙ্গুলি বলেন, “আমরা এবং টেকনিশয়ানরা যে আলাদা, সেটা আজ প্রথম জানলাম! এখানে আমরা-তারা এই তত্ত্ব নিয়ে নয়, সমস্যার সমাধান খুঁজে পেতে একজোট হয়েছি। সেখানে স্লোগান থাকবে না!”
অঞ্জনের কথায়, “রাহুলকে (পরিচালক রাহুল মুখোপাধ্যায়) কেন্দ্র করে যে সমস্যার সূত্রপাত ঘটেছিল, সেটা আজকে ৪০০ জন পরিচালকের সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। ফেডারেশন তাদের নিজেদের ইচ্ছে মত একতরফা আইন তৈরি করে। ফলে কাজের পরিসর ক্রমশ কমছে।”
সংকট সুরাহার জন্য পরিচালকেরা চাইছেন ‘নিরপেক্ষ’ তৃতীয় পক্ষের হস্তক্ষেপ। সেই তালিকায় অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি, বা সরকারি কোনো আমলাও থাকতে পারেন বলে পরিচালকদের ভাষ্য।
পরিচালক ইন্দ্রনীল রায়চৌধুরী বলেন, “সিনেমার সঙ্গে যুক্ত অথচ আইন বোঝেন এমন কাউকেই আমরা চাইছি।”
টেকনিশিয়ান ফেডারেশনের সভাপতি স্বরূপ বিশ্বাস পরিচালকদের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে বলেছেন, নির্মাতাদের একাংশ ‘ষড়যন্ত্র’ করে শুটিং বন্ধ করেছেন।
এই প্রসঙ্গে অনির্বাণ ভট্টাচার্য বলেন, “পরিচালকেরা কাজে আসেননি। কিন্তু আমরা অন্য কোনো বিভাগকে কাজে না আসার জন্য অনুরোধ করিনি।”
পরিচালক রাজ চক্রবর্তী বলেন, “এক দিন, দুদিন থেকে সাত দিন হতে পারে। কিন্তু সমস্যা না মিটলে এই কর্মবিরতি চলবে।”
রাতের বৈঠকের আগে সকালে অভিনেতা প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়ের বাড়িতে বৈঠকের পর ফেডারেশনের কাছে আলোচনার আহ্বান জানিয়েছিলেন পরিচালকরা।
এর প্রেক্ষিতে বিকেলে এক সংবাদ সম্মেলনে এসে ফেডারেশনের সভাপতি স্বরূপ বিশ্বাস বলেন, “আলোচনার জন্য আমরাও প্রস্তুত। কিন্তু রাহুল পরিচালনায় থাকলে কেউ কাজে যোগ দেবেন না।”
এ সময় ‘রাহুল মুখার্জিকে পরিচালক হিসেবে মানি না’ বলে স্লোগান ধরেন স্বরূপ। পরে তার সঙ্গে গলা মিলিয়ে টেকনিশিয়ানরা ‘মানছি না, মানব না’ বলে স্লোগান দেন।
‘সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অনুমতি না নিয়ে’ ঢাকার মাটিতে পরিচালক রাহুল মুখোপাধ্যায়ের ‘লহু’ নামের ওয়েব সিনেমার শুটিং করা নিয়ে এক সপ্তাহের বেশি সময় ধরে উত্তপ্ত টালিগঞ্জ।
পরিচালক, ডিরেক্টরস গিল্ড ও টেকনিশিয়ান ফেডারেশন বিষয়টি নিয়ে গত এক সপ্তাহ ধরে কয়েকবার আলোচনায় বসলেও ঐকমত্যে পৌঁছাতে পারেনি। এই মতবিরোধের জের ধরে সোমবার থেকে ধর্মঘটে নামেন পরিচালকরা।
টেকনিশিয়ান ফেডারেশনের অভিযোগ, রাহুল কাউকে না জানিয়ে ঢাকায় এসে ‘লহু’র শুটিং করেছেন এবং কলকাতার ওই সিরিজের শুটিংয়ের বকেয়া মেটাননি। সেজন্য রাহুলকে ‘বয়কট’ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ফেডারেশন।
ডিরেক্টরস গিল্ড প্রথমে রাহুলের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে গেলেও পরে তারা অবস্থান পরিবর্তন করে পরিচালকের পাশে দাঁড়ায়। এরপর শনিবার রাহুল তার পূজার সিনেমার শুটিং করতে সেটে পৌঁছালে টেকনিশিয়ানরা সেট থেকে বেরিয়ে যান। এতে সমস্যা আরো দানা বাঁধে।
আর পরিচালকদের বক্তব্যের সঙ্গে একাত্মতা জানিয়ে তাদের সঙ্গে জোট বেঁধেছে ছোট পর্দার প্রযোজকদের সংগঠন ডব্লিউএটিপি ও আর্টিস্ট ফোরাম।
পুরনো খবর