নব্বই দশকে মাত্র একটি অ্যালবাম প্রকাশ করেই শ্রোতাদের মনে জায়গা করে নেয় ব্যান্ড পেপার রাইম এবং শিল্পী আহমেদ সাদ।
Published : 24 Apr 2024, 10:59 AM
দীর্ঘদিন ক্যান্সারের সঙ্গে লড়াই করে হার মানলেন পেপার রাইম ব্যান্ডের গায়ক আহমেদ সাদ।
‘অন্ধকার ঘরে’র মত গানের জন্য ৯০ এর দশকের শ্রোতাদের কাছে পরিচিতি পাওয়া এই গায়ক মঙ্গলবার রাত ১২টার দিকে ঢাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালে মারা যান। তার বয়স হয়েছিল ৫২ বছর।
সাদের স্কুলজীবনের বন্ধু ও পেপার রাইম ব্যান্ডের সদস্য অনিন্দ্য কবির অভিক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “অনেক বছর ধরেই তো সাদ ক্যান্সারের সঙ্গে লড়াই করছিল। মাঝখানে ক্যান্সার কিছুটা ভালোও হয়েছিল। কিন্তু মাস কয়েক হল ক্যান্সার শরীরে ছড়িয়ে পড়ে।
“তিন দিন আগে একটা হার্ট অ্যাটাক হয়, তখন ওকে ইউনাইটেড হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। মঙ্গলবার সকালে আবার হার্ট অ্যাটাক হয়। পরে রাতে কর্তব্যরত চিকিৎসক ওকে মৃত ঘোষণা করেন।”
বৃহস্পতিবার সাদের দাফন হতে পারে জানিয়ে অভিক বলেন, পারিবারিকভাবে বিষয়গুলো চূড়ান্ত করা হবে।
নব্বই দশকে মাত্র একটি অ্যালবাম প্রকাশ করেই শ্রোতাদের মনে জায়গা করে নেয় ব্যান্ড পেপার রাইম এবং শিল্পী আহমেদ সাদ।
মিলু আমান ও হক ফারুকের লেখা ‘বাংলার রক মেটাল’ বইয়ে ‘পেপার রাইম’ সম্পর্কে বলা হয়েছে– ১৯৯৬ সালে সাউন্ডটেকের ব্যানারে ব্যান্ডের নামেই পেপার রাইমের প্রথম অ্যালবাম প্রকাশ হয়।
হার্ডরক, মেলোরক, সফট রক ধারার গানগুলোর কথা ও কম্পোজিশন শ্রোতারা বেশ পছন্দ করে। বিশেষ করে 'অন্ধকার ঘরে', 'আকাশের কী রং', 'এলোমেলো' গানগুলো অনেকের প্রিয় গানের তালিকায় চলে আসে। কিন্তু ব্যান্ডের সদস্যদের নানা ব্যস্ততার কারণে সে বছরই পেপার রাইমের কার্যক্রম থমকে যায়।
২০০৯ সালে পেপার রাইমকে আরও একবার সচল করার উদ্যোগ নেওয়া হয়। তখন ব্যান্ডে যোগ দেন মিরাজ ও লনি। ২০১১ সালে ড্রামার অভিক দেশে ফিরে এসে ব্যান্ডে যোগ দেন। নতুন উদ্যমে চলতে থাকে ব্যান্ডের অনুশীলন। ব্যান্ডের নতুন অ্যালবাম প্রকাশের উদ্যোগও নেওয়া হয়। কিন্তু পেপার রাইমের ভোকালিস্ট সাদের হঠাৎ অসুস্থতায় সব আটকে যায়। ২০১২ সালে পেপার রাইমের পথচলা সমাপ্ত হয়।
'আবার' নামের একটি মিক্সড অ্যালবামে পেপার রাইমের সবশেষ গান প্রকাশ হয়। গানটির শিরোনাম 'দাঁড়াও বন্ধু'। আশিক মিউজিকের ব্যানারে ওই মিক্সড অ্যালবামটি প্রকাশিত হয় ২০১৭ সালে।
মূলত স্কুল বন্ধুরা মিলে ১৯৯২ সালের ২৪ জানুয়ারি প্রতিষ্ঠা করেন ব্যান্ড পেপার রাইম।ব্যান্ডের লাইনআপ ছিল- ভোকালে সাদ, গিটারে রাশেদ, কিবোর্ডে নাসের, বেইস গিটারে সুমন ও ড্রামসে অভিক।
অভিক বলেন, “সাদের সঙ্গে আমার বন্ধুত্ব স্কুলজীবনের। সাদ তখন উদয়ন স্কুলে পড়ত, আমি পড়তাম ইউনিভার্সিটি ল্যাবরেটরি স্কুলে। ব্যান্ডের সবাই আমরা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় থাকতাম। ব্যান্ডের তিনজন ছিল উদয়ন স্কুলের, আর দুজন ইউনিভার্সিটি ল্যাবরেটরি স্কুলের। তবে আমরা ভালো বন্ধু ছিলাম।”
‘বাংলার রক মেটাল’ বইয়ে লেখা হয়েছে: “সাদ, নাসের, রাশেদ, সুমন, অভিক তখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসকেন্দ্রিক গানের চর্চাতেই নিমগ্ন। শিক্ষক কোয়াটার্সও তাদের গানে গানে মেতে থাকত। বন্ধুরা প্রথমবারের মত একত্রে শো করেন ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজে। সেদিনই তারা একটি ব্যান্ড গঠন করার সিদ্ধান্ত নেন। নাম রাখেন 'পেপার রাইম'। সেই দিনটি ছিল ১৯৯২ সালের ২৪ জানুয়ারি।
“ব্যান্ড গঠনের পরই কঠিন অনুশীলনে নিজেদের আরও সিদ্ধহস্ত করতে থাকে পেপার রাইম বাহিনী। চলতে থাকে লাইভ শো। বছর দেড়েক ব্যান্ডের ম্যানেজার ছিলেন বিল্লাল, তারপর শাকিল। কনসার্টে তারা গান গেয়ে প্রশংসা কুড়াতে থাকেন। তার মধ্যে শিল্পকলা একাডেমির মাঠে বামবার কনসার্ট আর ইউনিভার্সিটি ল্যাবরেটরির কনসার্ট দুটি বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।”