এ বছর সম্মাননা জানানো হয় একুশে পদকপ্রাপ্ত নৃত্যশিল্পী ও নৃত্যগুরু শামীম আরা নীপাকে। এছাড়া বুলবুল চৌধুরী স্মৃতি পদক-২০২২ পান ইলিয়াস হায়দার এবং ২০২৩ পান নিগার চৌধুরী।
Published : 29 Apr 2024, 09:55 PM
নাচের ছন্দে শান্তির বার্তা আর অভয় বাণী শুনিয়ে এবার আন্তর্জাতিক নৃত্য দিবস উদযাপন করেছে বাংলাদেশ নৃত্যশিল্পী সংস্থা।
সোমবার মঙ্গল নৃত্য, আনন্দ শোভাযাত্রা, পদক বিতরণ ও আলোচনাসহ নানা আয়োজনে দিবসটি উদযাপন করা হয়।
সকালে আনন্দ শোভাযাত্রার পর সন্ধ্যায় ঢাকার জাতীয় নাট্যশালা মিলনায়তনে আয়োজন করা হয় ‘বিশ্ব নাচে ছন্দময়-আসবে শান্তি কাটবে ভয়’ প্রতিপাদ্য নিয়ে এবারের অনুষ্ঠান।
এ বছর সম্মাননা জানানো হয় একুশে পদকপ্রাপ্ত নৃত্যশিল্পী ও নৃত্যগুরু শামীম আরা নীপাকে। এছাড়া বুলবুল চৌধুরী স্মৃতি পদক-২০২২ পান ইলিয়াস হায়দার এবং ২০২৩ পান নিগার চৌধুরী।
অনুভূতি জানিয়ে শামীম আরা নীপা বলেন, “আমি ভীষণভাবে আপ্লুত। পুরস্কার বিভিন্ন জায়গা থেকে পাওয়া যায়। তবে নিজের লোকেরা যখন সম্মান জানায়, এর চেয়ে বড় পুরস্কার আর নাই। সত্য, সুন্দর ও মানবিকতার লক্ষ্যে নৃত্য নিয়ে কাজ করে যাব, এই আমার ইচ্ছা।”
সন্ধ্যায় কিছুটা বিলম্বে শুরু হয় অনুষ্ঠান। আমন্ত্রিত প্রধান অতিথি সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী নাহিদ ইজাহার খানও আসেননি অনুষ্ঠানে।
অনুষ্ঠানের শুরুতেই জাতীয় সঙ্গীত এবং সৈয়দ শামসুল হকের লেখা ‘আমার পরিচয়’ কবিতার সঙ্গে একটি নাচের কোরিওগ্রাফি মঞ্চস্থ করেন বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির নৃত্যশিল্পীরা।
আলোচনা পর্বে মঞ্চে অতিথি ছিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব নাসির উদ্দীন ইউসুফ ও অধ্যাপক আব্দুস সেলিম। আলোচক ছিলেন নৃত্যশিল্পী শিবলী মহম্মদ ও মুনমুন আহমেদ। শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন শিল্পকলা একাডেমির সচিব সালাহউদ্দিন আহাম্মদ। সভাপতিত্ব করেন নৃত্যশিল্পী সংস্থার সভাপতি মিনু হক।
স্বাগত বক্তব্যে আয়োজক সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক সাজু আহমেদ বলেন, “আমরা এই উৎসবে নিন্দা জানিয়েছি, মধ্যপ্রাচ্যে যারা মানুষকে হত্যা করছে।”
সারাবিশ্বে যেসব দূতাবাস রয়েছে, তার মাধ্যমে সংস্কৃতির প্রশিক্ষণ আয়োজনেরও আহ্বান জানান তিনি।
ইন্টারন্যাশনাল ড্যান্স কাউন্সিলের আহ্বানে ১৯৮২ সাল থেকে বিশ্বব্যাপী ২৯ এপ্রিল উদ্যাপন করা হচ্ছে আন্তর্জাতিক নৃত্য দিবস হিসেবে। ইউনেস্কো এদিনটি আন্তর্জাতিক নৃত্য দিবস হিসেবে নির্ধারণ করেছে।
বাংলাদেশে দিবসটি পালিত হয়ে আসছে ১৯৯৫ সাল থেকে।
আলোচনা পর্বে নাসির উদ্দীন ইউসুফ বলেন, “একজন শিশু বা মানবসন্তান জন্ম নিয়েই তো হাত পা নাড়ায় আর শব্দ করে। সেখান থেকেই তো নাচের শুরু। যতই বাধা নিষেধ থাকুক নৃত্য চলবে। বসন্তে পাখিরা নাচে, বৃক্ষের পাতা নাচে। নৃত্যেও তো তেমনই প্রকৃতি-প্রাণ ঘিরে আছে। মানুষ জন্ম থেকেই তো নৃত্যের সংগে যুক্ত।”
বাংলাদেশে নাচ নিয়ে গবেষণা কম হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, “নিজের কথা প্রকাশ করার সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো শারীরিক প্রকাশ আর শারীরিক প্রকাশের শিল্পীত রূপ হলো নৃত্য। নৃত্য দিয়ে আসুন আমরা মানবিক বিশ্ব গড়ি।”
মুনমুন আহমেদ বলেন, “আমাদের শিক্ষা কারিকুলামে নাচ যুক্ত হয়েছে ঠিকই৷ কিন্তু সেখানে কি যোগ্য শিক্ষক নিয়োগ দেয়া হচ্ছে? সেখানে হয়তো নাচ শেখাচ্ছেন শারীরিক শিক্ষা বা খেলাধুলার শিক্ষক। স্কুলে নাচের শিল্পীদের নিয়োগ দেয়া উচিত।”
নৃত্যগুরু শিবলী মহম্মদ বলেন, “বাংলাদেশের নৃত্য এগিয়েছে কিন্তু পৃষ্ঠপোষকতা নেই। এ দেশের কোনো প্রোগ্রাম নাচ ছাড়া হয় না। কিন্তু পৃষ্ঠপোষকতার বেলায় কাউকে পাওয়া যায় না।”
নাচের পৃষ্ঠপোষকতার জন্য সরকারসহ সবাইকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান তিনি।
আন্তর্জাতিক নৃত্য দিবস উপলক্ষে সবার উদ্দেশ্যে বাণী দিয়েছেন আর্জেন্টিনার নৃত্যশিল্পী মারিয়ানেলা নুনেজ। তার বাণী বাংলা ভাষায় পাঠ করে শোনান আশনা হাবিব ভাবনা। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে এ বছর বাণী দিয়েছেন নৃত্যগুরু এম আর ওয়াসেক।
বাংলাদেশ নৃত্যশিল্পী সংস্থা গত ২৩ এপ্রিল থেকে সপ্তাহব্যাপী আয়োজন শুরু করে, যার পর্দা নামে সোমবার।
সপ্তাহব্যাপি আয়োজনের মধ্যে ছিল নৃত্যানুষ্ঠান, নৃত্য কর্মশালা, নৃত্য বিষয়ক সেমিনার। সমাপনী দিনে আলোচনা পর্ব শেষে বিভিন্ন নৃত্য সংগঠন নাচ পরিবেশন করে।