জনি ডেপের ‘মানহানি’ করেছেন অ্যাম্বার হার্ড, সিদ্ধান্ত দিলেন জুরিরা

পত্রিকায় নিবন্ধ লিখে হলিউড তারকা জনি ডেপের বিরুদ্ধে নির্যাতনের অভিযোগ এনে তার সাবেক স্ত্রী অভিনেত্রী অ্যাম্বার হার্ড ‘মানহানি ঘটিয়েছেন’ বলে সিদ্ধান্ত দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের একটি জুরি আদালত।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 2 June 2022, 04:09 AM
Updated : 2 June 2022, 08:48 AM

ভার্জিনিয়ার সাত জুরির এই আদালত বুধবার তাদের সিদ্ধান্তে বলেছে, মানহানির ক্ষতিপূরণ হিসেবে ডেপকে এক কোটি তিন লাখ ডলার দিতে হবে হার্ডকে।

অবশ্য কিছু ক্ষেত্রে এ মামলার রায় হার্ডের পক্ষেও গেছে। আদালত বলেছে, ক্ষতিপূরণ হিসেবে হার্ড পাবেন ২০ লাখ ডলার।

রয়টার্স লিখেছে, সাবেক এই তারকা দম্পতির দুই বছরের দাম্পত্য কতটা তিক্ততার জন্ম দিয়েছিল, তার বিস্তৃত বিবরণ পুরো বিশ্বের সামনে উঠে এসেছে এ মামলার ছয় সপ্তাহের শুনানিতে।    

৩৬ বছর বয়সী ‘অ্যাকুয়াম্যান’ তারকা হার্ড মামলার শুনানিতে দাঁড়িয়ে কাঁদতে কাঁদতে বলেছেন, কীভাবে তাকে সাবেক স্বামী জনি ডেপের ‘শারীরিক নির্যাতন’ সইতে হয়েছে।

তিনি বলেন, “আমি প্রতি মুহূর্তে হয়রানির শিকার হয়েছি, নিগৃহের শিকার হয়েছি, হুমকির মুখে পড়েছি।”

আদালতে জনি ডেপ। ছবি: রয়টার্স

অন্যদিকে ৫৮ বছর বয়সী ‘পাইরেটস অব দ্য ক্যারাবিয়ান’ তারকা জনি ডেপ সেই অভিযোগ বরাবরই প্রত্যাখ্যান করে এসেছেন। আদালতে দেওয়া সাক্ষ্যে দাবি করেন, তিনি কখনো অ্যাম্বার হার্ড বা কোনো নারীকে আঘাত করেননি বরং তার সাবেক স্ত্রীই তাদের সম্পর্কের অনৈতিক সুযোগ নিয়েছে।     ভক্তদের উচ্ছ্বাসে ভাসিয়ে ২০১৫ সালে ঘর বেঁধেছিলেন এই দুই হলিউড তারকা। কিন্তু দুই বছরের মধ্যে ঘটে তাদের বিচ্ছেদ।

এরপর ২০১৮ সালে ওয়াশিংটন পোস্টে এক কলামে নিজেকে পারিবারিক সহিংসতার শিকার হিসেবে তুলে ধরেন অ্যাম্বার হার্ড।

তাতে ক্ষুব্ধ হয়ে সাবেক স্ত্রীর বিরুদ্ধে ৫ কোটি ডলার ক্ষতিপূরণ চেয়ে মানহানির মামলা করেন ডেপ। তার পাল্টায় ১০ কোটি ডলার ক্ষতিপূরণ চেয়ে পাল্টা মামলা করেন হার্ড।

সেই মামলায় যুক্তরাষ্ট্রের ভার্জিনিয়ার ফেয়ারফ্যাক্স কাউন্টি আদালতে বিচার শুরু হলে দুজনের দাম্পত্যের এমন অনেক বিষয় প্রকাশ্যে আসে, যা বিশ্বজুড়ে ভক্তদের মধ্যে তুমুল আলোচনার জন্ম দেয়।

লাইভস্ট্রিমের মাধ্যমে এ মামলার বিচার কাজ সরাসরি দেখার সুযোগ পেয়েছে কোটি কোটি মানুষ। জনমত জরিপে দেখা গেছে, যুক্তরাষ্ট্রের মানুষ ইউক্রেইন যুদ্ধের চেয়ে ডেপ ও হার্ডের মামলার খবর জানতে বেশি আগ্রহী।

আদালতে শুনানিতে জনি ডেপ ও অ্যাম্বার হার্ড। ছবি: রয়টার্স

শেষ পর্যন্ত জুরিরা সিদ্ধান্ত দিয়েছেন, ডেপের সঙ্গে দাম্পত্যের দিনগুলো নিয়ে হার্ড এমন কিছু অভিযোগ এনেছেন যা ‘মিথ্যা’ এবং সাবেক স্বামীর ‘সম্মানহানি’ করাই ছিল তার উদ্দেশ্য।

পাশাপাশি জুরিরা এও বলেছেন, ডেপের আইনজীবী ২০২০ সালে যখন ডেইলি মেইলকে বলেছিলেন, হার্ডের আনা অভিযোগগুলো ‘ভুয়া’, তাতে এই অভিনেত্রীরও মানহানি করা হয়েছে। 

সাত সদস্যের জুরি বোর্ড যখন তাদের রায় দিচ্ছিল, বাইরে জনি ডেপের নাম ধরে স্লোগান দিচ্ছিলেন তার ভক্তরা। তবে অন্য কাজে ব্যস্ততার কারণ দেখিয়ে রায়ের সময় নিজে উপস্থিত হননি ডেপ।

রায়ের পর এক বিবৃতিতে ডেপ বলেন, “জুরিরা আমার জীবন ফিরিয়ে দিয়েছেন। আমি সত্যিই আপ্লুত।”

সেই সঙ্গে লাতিন ভাষায় তিনি যোগ করেন, “সত্য কখনও ধ্বংস হয় না।”

বিবৃতিতে এ তারকা বলেন, “আশা করি, অন্য নারী-পুরুষ বা আমার পরিস্থিতিতে যারা পড়েছেন, এই নজির তাদের সাহায্য করবে।”

অন্যদিকে ডেপের সাবেক স্ত্রী অ্যাম্বার হার্ড রায়ের পর বলেছেন, নির্যাতনের পক্ষে তার তুলে ধরা প্রমাণ জুরিদের কাছে ‘উপেক্ষিত থেকেছে’।

এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, “এই মামলা হেরে আমি দুঃখ পেয়েছি। কিন্তু তারচেয়েও বেশি কষ্ট পেয়েছি অধিকার হারিয়েছি বলে। ভেবেছিলাম, একজন আমেরিকান হিসাবে আমার স্বাধীন এবং খোলামেলাভাবে কথা বলার অধিকার রয়েছে।”

অন্য নারীদের জন্য এই রায় কী বার্তা দিচ্ছে, তা ভেবেও শঙ্কিত বলে জানিয়েছেন হার্ড। তিনি এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিলের কথা ভাবছেন বলে জানিয়েছেন তার একজন মুখপাত্র।

পুরনো খবর