রাজধানীর অভিজাত এলাকা বলে পরিচিত ঢাকা-১৭ আসন থেকে একাদশ সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেলেন চিত্রনায়ক আকবর হোসেন পাঠান ফারুক।
Published : 25 Nov 2018, 07:56 PM
একাদশ সংসদ নির্বাচনে তিনি গাজীপুর-৫ (কালীগঞ্জ) আসনে লড়তে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ফরম তুলেছিলেন। কিন্তু দল থেকে তাকে ঢাকা-১৭ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে বলা হল।
পুরানো ঢাকায় জন্ম নেওয়া এ ডাকসাইটে অভিনেতা এখন থাকেন উত্তরায়; গুলশানেও তার বাড়ি রয়েছে।
মনোনয়নের চিঠি হাতে পাওয়ার পর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় ফারুক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ভাষায় প্রকাশ করতে পারব না। আমি ৫৮ বছর ধরে বঙ্গবন্ধু ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আদর্শ বুকে লালন করে এসেছি। তারা দেশকে কতটুকু ভালোবাসেন, সেটা মানুষকে বলতে চাই; দেশের এক ইঞ্চি মাটির জন্যও যদি কিছু করতে পারি সেটাও করতে চাই।”
ক্যান্টনমেন্ট, গুলশান, বনানী ও ভাষানটেক এলাকা নিয়ে গঠিত ঢাকা-১৭ আসন থেকে মনোনয়ন পাওয়াকে ‘সম্মানের’ ভাবছেন এ অভিনেতা।
“প্রধানমন্ত্রী এটি বিবেচনা করেছেন। আমার প্রধানমন্ত্রী অনুভব করেছেন, এই জায়গাটা সম্মানিত একটা জায়গা। আমি ভাষায় প্রকাশ করতে পারব না।”
ষাটের দশকে ছাত্রলীগের সঙ্গে যুক্ত থাকা অবস্থায় রাজনীতির মাঠে নিয়মিত ছিলেন ফারুক। মাঠে ছিলেন ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানের সময়ও। একাত্তরে যোগ দেন মুক্তিযুদ্ধে। মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী সময়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সান্নিধ্য পান তিনি।
চলচ্চিত্রে নাম লেখানোর পর রাজনৈতিক অঙ্গন থেকে খানিকটা দূরে সরে যান ফারুক। অভিনয়ে ব্যস্ততার কারণেই তখন রাজনীতিতে যুক্ত থাকতে পারেননি বলে জানান তিনি। ৭০ বছর বয়সে এসে রাজনীতিতে পুরোপুরি থিতু হওয়ার সিদ্ধান্ত নেন তিনি।
নব্বইয়ের দশকে একবার আওয়ামী লীগ থেকে নির্বাচনের প্রস্তাব পেয়েছিলেন বলে জানান জাতীয় চলচ্চিত্রপ্রাপ্ত এ অভিনেতা।
“কিন্তু সেইবার আমি নির্বাচন করিনি। ওই একটা ভুল আমি করেছি জীবনে। আসলে যে যা তাকে সেটাই করা উচিত।”
“ভেতরে ভেতরে খোঁজ নিয়ে দেখেছি, এখানকার মানুষ নৌকা চায়। নৌকা যদি না হয় এখানে কোনো উন্নয়ন হবে না। অনেক দুঃখী মানুষ আছেন, তারা শুধু ‘শেখ হাসিনা’, ‘শেখ হাসিনা’ করেন। শেখ হাসিনা আর নৌকা-যাকে ইচ্ছা দাও।... এটা যে কতবড় পাওয়া কল্পনাও করা যায় না।”
গাজীপুর-৫ আসনের তুলনায় ঢাকা-১৭ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকে চ্যালেঞ্জিং মনে করছেন ফারুক। ঢাকা-১৭ আসনে বর্তমান সংসদ সদস্য বিএনএফের আবুল কালাম আজাদ।
এই আসনটিতে আওয়ামী লীগের মিত্র দল জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদও প্রার্থী হতে চাইছেন। বিএনপি থেকে দলটির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল রুহুল আমিন চৌধুরীর নাম শোনা যাচ্ছে।
ফারুক বলেন, “কোনোদিন কোনো জিনিসকে ছোট করে দেখার কোনো অবকাশ নেই। সব জিনিসেরই একটা ভ্যালুজ আছে।”
‘ভালোবাসা’ দিয়ে সেই চ্যালেঞ্জকে জয় করার আশাবাদের কথা জানান ফারুক, “আমি আমার হৃদয়ের ভেতরে নিয়ে আসব। এই আস্থাটা আমার আছে।”
নির্বাচন কমিশনের নিয়ম মেপে প্রচার-প্রচারণা শুরু করবেন তিনি। তার ধারণা, একজন অভিনেতা হিসেবে ভোটের মঞ্চে বাড়তি সুবিধা পাবেন।
“এখানে আমার জন্য ব্যাপারটা সহজ হবে। কারণ আমাকে সবাই চেনেন। এখন শুধু আমাকে চিনলে হবে না, আমার কর্মক্ষেত্রেও বিষয়টি তুলে ধরতে হবে। মানুষের কী প্রয়োজন সেটাও জানতে হবে।”
১৯৭১ সালে এইচ আকবর পরিচালিত ‘জলছবি’ চলচ্চিত্রে অভিনয়ের মাধ্যমে বাংলা চলচ্চিত্রে আগমন ঘটে ফারুকের। দীর্ঘ ক্যারিয়ারে ‘লাঠিয়াল’, ‘সুজন সখী’, ‘নয়নমনি’, ‘সারেং বৌ’, ‘গোলাপী এখন ট্রেনে’সহ বেশ কিছু দর্শকপ্রিয় চলচ্চিত্র উপহার দিয়েছেন তিনি। ১৯৭৫ ও ২০১৮ সালের জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে যথাক্রমে শ্রেষ্ঠ পার্শ্ব অভিনেতা ও আজীবন সম্মাননায় ভূষিত হন।