মহাপ্রয়াণে নায়করাজ, শোকে-স্মৃতিতে সর্বত্র উচ্চারিত হচ্ছে তার নাম। দেশীয় চলচ্চিত্রের এই হিরো চারযুগেরও বেশি সময় চলচ্চিত্রে সময় কাটিয়েছেন। নায়করাজকে স্মরণ করে তার অন্য আরেক পরিচয় জনসমক্ষে আনলেন দেশের আরেক কিংবদন্তি চরিত্র জাদুকর জুয়েল আইচ।
Published : 22 Aug 2017, 08:03 PM
নানা অনুষ্ঠানে ব্যস্ত থাকায় নায়করাজের মৃত্যুসংবাদও পেতে কিছুটা দেরি হয়েছে তার। মঙ্গলবার শোকাহত জুয়েল আইচ স্মরণ করলেন নায়করাজকে।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকে নায়করাজের সঙ্গে দুর্লভ একটি ছবি প্রকাশ করে জুয়েল আইচ লিখেন:
‘রাজ্জাক ভাই ম্যাজিশিয়ান ছিলেন। ক'জন জানেন? টালিগঞ্জের নাকতলা থেকে ঢাকা এলেন। দুঃসহ জীবন সংগ্রাম। ম্যাজিক শিকেয় উঠলো। কিন্তু জাদুর প্রতি পাগলামিটা রয়েই গেল। যে কোনো আড্ডায় বসলে ম্যাজিকের গল্পে আসর মাতিয়ে তুলতেন।
আমার যেসব অনুষ্ঠানে তিনি উপস্থিত থাকতেন, তিনি একাই একশ’ হয়ে উঠতেন। সামনের সারিতে সদলবলে বসে হাততালি, অট্টহাসি, চিৎকারে হাজার দর্শককে মাতোয়ারা করে তুলতেন।
'ছুটির ঘন্টা' ছবিতে আমরা একসঙ্গে অভিনয়ও করলাম। ছবিটি সুপারহিট হল। রাজ্জাক ভাই বার বার আমায় সিনেমায় স্থায়ী ভাবে নামতে বললেন। তিন জন নামী প্রযোজককে গল্প ও পরিচালক সহ আমার পিছে লাগিয়ে দিলেন। আমি না করায় দুঃখও পেয়েছিলেন।’
নায়করাজের প্রয়াণে শোকাতুর জুয়েল আইচ আরও লিখেন, ‘হায়! নায়করাজ চিরতরে চলে গেলেন। কাছে টেনে ওভাবে আমায় কে আর বুকে জড়িয়ে ধরবেন?
আমার সামান্য জাদুকে আকাশের সমান উঁচুতে তুলে প্রশংসা করার মানুষরা একে একে চলে যাচ্ছেন আর জীবনের সেরা সেরা আনন্দগুলো একে একে হারিয়ে যাচ্ছে। নিরানন্দ জীবন তাহলে কেমন হবে? কাকে জিজ্ঞেস করি কেমন হবে?’
এদিকে মঙ্গলবার গ্লিটজের সঙ্গে আলাপেও জুয়েল আইচ স্মৃতিতে ডুবলেন। বললেন, “তার সঙ্গে আমার একটা দু’টা স্মৃতি নয়, হাজারটা স্মৃতি। বয়সে আমার চেয়ে একটু সিনিয়র ছিলেন। আমরা একসঙ্গে ম্যাজিক করতাম। ওনার সময়ে ম্যাজিকের যে শিক্ষা, আমরা যেহেতু তারপরে শিখেছি স্বাভাবিকভাবেই আমরা কিছুটা এগিয়েছি, তো ম্যাজিকের দিক থেকে উনি আমাকে বলতেন, ‘আমার গুরু’ (হাসি)।
অনুষ্ঠান শেষে তিনি কিন্তু চলে যেতেন না। সবাই চলে যেতো তিনি তার লোকজন নিয়ে বসে থাকতেন। আমি জানতাম তিনি অপেক্ষা করছেন। তারপর সেকি আড্ডা, ঘন্টার পর ঘন্টা আড্ডা হতো।
আড্ডায় তিনি তার সঙ্গের লোকজনকে বলতেন, বলো দেখি, তোমরা তো একেকজন বুদ্ধিমান লোক, এই ম্যাজিকটা কীভাবে হলো?” কেউ তো উত্তর দিতে পারে না। তখন তিনি বলতেন, শুনবে? তাহলে শোনো, নজর করে শোনো, এই ম্যাজিকটা আমি নিজেই বুঝি নাই”
“তিনি আরও বলতেন, বাংলাদেশ হওয়ায় আমাদের সবার খুব লাভ হয়েছে, কিন্তু জুয়েলের জন্য ক্ষতি হয়ে গেছে। ও যদি আমেরিকা-ইউরোপে হতো, ও যে কোথায় উড়তো এটা বাংলাদেশে বসে আমাদের বোঝা সম্ভব না। জুয়েলের জাদু হাজার মানুষের জন্যে কিন্তু তার ম্যাজিকের টার্গেট ম্যাজিসিয়ানরা। জুয়েল আমার ম্যাজিকের গুরু!”-যোগ করেন জুয়েল আইচ ।