নামের মিলের কারণে একজন অপরজনকে 'মিতা' বলে সম্বোধন করতেন।
Published : 26 Jul 2024, 09:43 AM
অভিনেতা হুমায়ুন ফরীদি যে বছর মারা যান ওই বছরের ১৯ জুলাই কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদও পৃথিবী ছাড়েন। বাংলার এই দুই কিংবদন্তী নেই এক যুগ। নামের মিলের কারণে একজন অপরজনকে 'মিতা' বলে সম্বোধন করতেন। দুই জনের সম্পর্কও ছিল বেশ গভীর।
হুমায়ূন আহমেদের মৃত্যুবার্ষিকীতে পরিচালক অনিমেষ আইচ এই দুই কিংবদন্তীর কথা স্মরণ করে গ্লিটজকে দুইজনের সম্পর্কের বর্ণনা দেন।
অনিমেষ বলেন, “আমার দুই হুমায়ূনের খুব সানিধ্যে যাওয়ার ভাগ্য হয়েছিল। হুমায়ূন আহমেদের সঙ্গে আমার একধরনের পথচলার শুরু হয়ে যায়। গল্প, আড্ডায় আমাকে ডাকতেন, পছন্দ করতেন। হুমায়ুন ফরীদির সঙ্গেও আড্ডায় বসলে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত কাটিয়ে দিতে পারতাম।
“দুই হুমায়ুনই দুইজনের খুব ভালো বন্ধু ছিলেন, দুইজনই বিশাল শক্তিশালী। একজন আরেকজনকে মিতা বলে সম্বোধন করতেন। 'আপনি' করে মিতা বলে ডাকতেন।”
স্মৃতিচারণ করে অনিমেষ বলেন, “একদিন হুমায়ুন ফরীদির বাসায় ছিলাম, কথায় কথায় 'শ্যামল ছায়া' সিনেমার শুটিংয়ের একদিনের ঘটনা শেয়ার করলেন তিনি। ঘটনাটা এমন ছিল, হুমায়ূন আহমেদ ফরীদিকে ফোন দিয়ে বলেছিলেন, 'মিতা আপনার শট সকাল সাতটায় প্রথম সূর্যোদয়ের শুরুতে। আপনি ছয়টার মধ্যে সিনেমার সেটে চলে আসবেন। সাড়ে ছয়টার মধ্যে মেকআপ নিয়ে, সাতটার মধ্যে আমরা শুটিং শুরু করব’।"
“ফরীদি ভাই শুটিংয়ে বিশাল দলবল নিয়ে যেতেন। গাড়ি, চেয়ার থেকে মেকআপ ম্যান। নিজের প্রয়োজনীয় সবকিছুই নিজের সঙ্গে রাখতেন। সেদিন তিনি ঠিক ছয়টার দিকে সিনেমার সেটে গিয়ে পৌঁছালেন। গিয়ে শোনেন হুমায়ূন আহমেদ নেই। অন্য একটি সিনেমার শুটিংয়ে চলে গেছেন। সাড়ে ৬টার মধ্যে ফরীদি মেকআপ নিয়ে নিলেন। রেডি হয়ে খোঁজ করলেন 'মিতা' কোথায়। কয়েকজনকে বললেন, ‘মিতাকে ডেকে পাঠাও, বলো আমি রেডি’। তিনি কলও করলেন। কিন্তু হুমায়ূন আহমেদ দশটার দিকে সেটে আসলেন। এসে ফরিদীকে বললেন, 'চলেন মিতা এবার আমরা শটটা দেই'। কিন্তু ফরীদি বেঁকে বসলেন। জেদ ধরে বললেন, ‘আমি তো সূর্যোদয়ের শুরুর আলো ছাড়া শট দেই না’। ফরীদি জেদ ধরে আর সেই শটটা দেননি। সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত সেটেই বসে ছিলেন। বিকেল পর্যন্ত উনি কোনো শট দিলেন না। পরে অবশ্য এই দুজনের মান অভিমান ভেঙে গিয়েছিল।"
১৯৯০ এর গোড়ার দিকে চলচ্চিত্র নির্মাণ শুরু করেন হুমায়ূন আহমেদ। তার রচনা ও পরিচালনায় প্রথম চলচ্চিত্র ‘আগুনের পরশমণি’ মুক্তি পায় ১৯৯৪ সালে। এরপর ২০০০ সালে ‘শ্রাবণ মেঘের দিন’ ও ২০০১ সালে ‘দুই দুয়ারী’ দর্শকদের কাছে দারুণ গ্রহণযোগ্যতা পায়। ২০০৩ এ নির্মাণ করেন ‘চন্দ্রকথা’।
মুক্তিযুদ্ধের প্রেক্ষাপটে ২০০৪ সালে নির্মাণ করেন ‘শ্যামল ছায়া’। ২০০৬ সালে ‘নয় নম্বর বিপদ সংকেত’ ও ২০০৮ এ ‘আমার আছে জল’ চলচ্চিত্রটি তিনি পরিচালনা করেন। তার সর্বশেষ পরিচালিত চলচ্চিত্র ‘ঘেটুপুত্র কমলা’ মুক্তি পায় ২০১২ সালে।