একপর্যায়ে রেগে গিয়ে ‘এমন প্রশ্ন করলে’ তথ্য মন্ত্রণালয়ে অভিযোগ দেওয়ার হুমকিও দেন চলচ্চিত্র শিল্প সমিতির এই সাধারণ সম্পাদক।
Published : 17 Dec 2022, 09:46 PM
এফডিসিতে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নে ‘ক্ষেপে’ গেলেন চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির সাধারণ সম্পাদক অভিনেত্রী নিপুণ আক্তার; বিষয়টি নিয়ে তথ্য মন্ত্রণালয়ে অভিযোগ করার হুমকিও দিলেন তিনি।
ওই ঘটনার পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সমালোচনার মুখে পড়েছেন এই অভিনেত্রী।
বিজয় দিবস উপলক্ষে শুক্রবার এফডিসিতে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা জানানোর পর উপস্থিত সাংবাদিকদের সামনে কথা বলছিলেন নিপুণ। সেসময় এক সাংবাদিক জানতে চান চলচ্চিত্র সমিতির এক বছরের সাফল্য সম্পর্কে।
জবাবে নিপুণ বলেন, “আপনারা দেখেছেন, কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে বলিউডের সেরা তারকাদের সঙ্গে বাংলাদেশের অভিনয়শিল্পী (চঞ্চল চৌধুরী) দাঁড়িয়েছে। এটা তো আমাদের অর্জন।”
নিপুণের বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে এক সাংবাদিক পাল্টা প্রশ্নে বলেন, “কিন্তু চঞ্চল চৌধুরী তো এফডিসিকেন্দ্রিক না”। পাশে আরেকজন প্রশ্ন করেন, “চঞ্চল চৌধুরী শিল্পী সমিতির সদস্যও নন। তাহলে কীভাবে তার সাফল্য সমিতির অর্জন হয়?”
এমন প্রশ্নে ক্ষেপে গিয়ে নিপুণ বলেন, “শিল্পীদের মধ্যে এই বিভাজন তৈরি করবেন না। এফডিসিকেন্দ্রিক নয় কিংবা এফডিসিকেন্দ্রিক। এসব বলে বলে আপনার বিভাজন তৈরি করেন। চঞ্চল চৌধুরী তো কোথাও বলেননি যে, তিনি এফডিসির কেউ নন।”
একপর্যায়ে রেগে গিয়ে তিনি এমন প্রশ্ন করলে তথ্য মন্ত্রণালয়ে অভিযোগ দেওয়ার হুমকিও দেন।
নিপুণের পাশে থাকা চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির সহ সাধারণ সম্পাদক ও চিত্রনায়ক সাইমন বলেন, “সুদীপ্ত এ ধরনের প্রশ্ন করা যাবে না’।
প্রশ্নটি করেছিলেন দৈনিক কালবেলা পত্রিকার সাংবাদিক ও জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত চিত্রনাট্যকার সুদীপ্ত সাঈদ খান।
নাটক, সিনেমা ও ওটিটির কাজের সুবাদে ওপার বাংলায় দারুণ পরিচিত বাংলাদেশি অভিনেতা চঞ্চল চৌধুরী। গত বৃহস্পতিবার কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের উদ্বোধন অনুষ্ঠানের মঞ্চে তাকে দেখা যায় বলিউড সুপারস্টার অমিতাভ বচ্চন ও শাহরুখ খানের সঙ্গে।
সেই ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আসতেই এ অভিনেতার প্রশংসায় আবারও পঞ্চমুখ হন অনেকে। চঞ্চলের এ অর্জনকে চলচ্চিত্র সমিতির সাফল্য বলে দাবি করেন সমিতির সাধারণ সম্পাদক নিপুণ।
জানতে চাইলে সাংবাদিক সুদীপ্ত বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “তিনি (নিপুণ) চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির দায়িত্বশীল পদে থেকে এভাবে কি কোনো সাংবাদিককে প্রশ্ন করতে মানা করতে পারেন? সাংবাদিক তো তার মতই প্রশ্ন করবেন। উনার যদি প্রশ্ন পছন্দ না হয়, তবে তিনি সেটি এড়িয়ে যেতে পারেন। মন্তব্য করা থেকে বিরত থাকতে পারেন। কিন্তু প্রশ্ন করা যাবে না, সেটা তো উনি বলতে পারেন না। আর প্রশ্ন করার জন্য মন্ত্রণালয়ে অভিযোগ করবেন বলেও তো হুমকি দিতে পারেন না।”
তবে যে প্রশ্নে নিপুণ ক্ষেপেছেন, সেটিকে ‘অযৌক্তিক’ বলে দাবি করে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “সাংবাদিক হলেই তো অযৌক্তিক প্রশ্ন করতে পারেন না। প্রশ্ন করার তো যৌক্তিকতা থাকতে হবে।”
মন্ত্রণালয়ে অভিযোগ দেওয়ার করার হুমকির প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “সেখানে অনেকেই অযৌক্তিক প্রশ্ন করছিলেন। যাদের মধ্যে কেউ কেউ আছেন, তাদেরকে আমার সাংবাদিক মনে হয়নি। তারা একটা মোবাইল ফোন নিয়ে এসে মূলত তাদের ভিউ বাড়ানোর জন্য কন্টেন্ট খুঁজছিলেন।
“কয়েকজন আমাকে ইচ্ছাকৃতভাবে বার বার খোঁচাচ্ছিলেন। তখন আমি বলেছি, কেন এই বিভাজন তৈরি করছেন? যারা চলচ্চিত্রে কাজ করেন তারা সবাই চলচ্চিত্রের শিল্পী। চলচ্চিত্র শিল্পীদের অর্জন মানেই তো আমাদের গর্ব। তখন একপর্যায়ে বলেছি, এ ধরনের প্রশ্ন করলে আমি তথ্য মন্ত্রণালয়ে অভিযোগ করব।”
চলচ্চিত্রের গুণি শিল্পীদের সমিতির সদস্য করার প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে জানিয়ে নিপুণ বলেন, “আমি সমিতির সাধারণ সম্পাদক হওয়ার পর একটা অনুষ্ঠানে আসাদুজ্জামান নূর ভাইয়ের সাথে দেখা হয়েছে। উনাকে বলেছি, আপনি কেন শিল্পী সমিতির সদস্য হচ্ছেন না? তখন তিনি আমাকে বলেছেন, ‘আমাকে তো কেউ বলেনি’।
“আমিও মনে করি উনাদের মত গুণি শিল্পীরা তো নিজেরা এসে সদস্য হবেন না। আমরাই উনাদের কাছে ফরম নিয়ে যাব এবং সমিতির সদস্য হওয়ার জন্য অনুরোধ করব। সুবর্ণা মুস্তাফা, তৌকীর আহমেদসহ এমন গুণি শিল্পীদের চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির সদস্য করার ব্যাপারে আমরা কাজ করছি।”