দর্শকদের অনেকেই লন্ডনের হাইড পার্কে এসেছিলেন অর্ধেক পৃথিবী পাড়ি দিয়ে।
Published : 03 Jul 2023, 12:59 PM
“গত এক বছর ধরে এই শোটির অপেক্ষায় ছিলাম, এবং যে আনন্দ পেয়েছি তার বোঝানোর মত ভাষা জানা নেই, বলা যায়, একটা পাগল পাগল রাত ছিল।”
কথাগুলো বলছিলেন আনন্দে উদ্বেল জিনগিল পাগুনসান, যিনি ফিলিপিন্স থেকে যুক্তরাজ্যে এসেছেন কেবল তার পছন্দের কোরীয় ব্যান্ড ‘ব্ল্যাকপিঙ্ক’ এর পরিবেশনা দেখতে।
পাগুনসানের মত রিক মে ভাপোরোসো, মিশেল, ইয়াজমিন গ্ল্যাকিনসহ আরও অনেক তরুণ এবং মাঝবয়সী ভক্ত তাদের উচ্ছ্বাস ও আবেগের কথা তুলে ধরেছেন বিবিসির কাছে। রোববার তারা লন্ডনের বিএসটি হাইড পার্কে আয়োজিত সংগীত উৎসবে জড়ো হয়েছিলেন চার কন্যা জিসু, জেনি, রোজ ও লিসার পারফরম্যান্স দেখতে।
বিবিসি জানিয়েছে, ‘আর্কটিক মাংকিস’, ‘দ্য কিলারস’, ‘দ্য স্টোর্কস’র মত রক ব্যান্ডও এ উৎসবে গান পরিবেশন করে। তবে ৬৫ হাজার দর্শক শ্রোতার এ আসর মাত করেছে ব্ল্যাকপিংক। এই দর্শকদের অনেকেই হাইড পার্কে এসেছিলেন অর্ধেক পৃথিবী পাড়ি দিয়ে।
শো শুরুর পর গোলাপী আলোর মঞ্চে চার তরুণী যখন তাদের দুই হিট গান ‘পিংক ভেনম’ এবং ‘হাউ ইউ লাইক দ্যাট’ গাইতে থাকেন, সেই গানে ঠোঁট মিলিয়ে গাইতে থাকেন দর্শকরা। গান শেষের পর তুমুল করতালিতে তারা ফেটে পড়েন। গানের সঙ্গে কোরিওগ্রাফিরও প্রশংসা করেছেন তারা।
ফিলিপিন্সের তরুণী জিনগিল পাগুনসানের বন্ধু রিক মে ভাপোরোসো বলেন, “আমরা ব্ল্যাকপিংক এর সবকিছুই পছন্দ করি। আর গানগুলো দারুণ গেয়েছে তারা।“
ইংল্যান্ডের নটিংহ্যাম থেকে আসা দুই বন্ধু অ্যাড্রিয়ান এবং জেস চ্যান একমত, ব্ল্যাকপিংকের চারজনের সবগুলো গানই ‘দুর্দান্ত’ এবং তাদের ব্যক্তিত্বও ‘প্রশংসনীয়’। দুই ভক্তের ভাষায়, ব্ল্যাকপিংক দর্শকদের উজ্জীবিত করতে জানে।
মা এবং মেয়ে মিশেল এবং ইয়াজমিন গ্ল্যাকিন জানান, বিএসটি হাইড পার্কে আসার যাত্রাটি তাদের জন্য সহজ ছিল না, কারণ উত্তর আয়ারল্যান্ড থেকে তাদের ভোরের ফ্লাইট বাতিল হয়ে যায়। দীর্ঘ অপেক্ষার পর দুপুরের একটি ফ্লাইটের একদম শেষের দুটি আসন পান তারা।
তারপর লন্ডনে নেমে সঙ্গে ব্যাগবোচকা নিয়ে হোটেলে না গিয়ে সরাসরি হাইড পার্কে চলে আসেন তারা, যাতে কোনোভাবে কনসার্ট শেষ হয়ে না যায়।
মেয়ে মিশেল বলেন, “অপেক্ষার দিনটা ছিল দীর্ঘ।“
আর মিশেলের মা ইয়াজমিন গ্ল্যাকিন বলেন, “আমি সুস্থিরভাবে দেখতে পারিনি, মিশেল ভালোভাবে দেখার জন্য প্রায় আমার কাঁধে চড়ে বসেছিল।“
মেয়েদের মিউজিক গ্রুপ ব্ল্যাকপিংক এর যাত্রা শুরু ২০১৬ সালের ৮ অগাস্ট। ‘হুইসেল’ ও ‘বুমবায়াহ’ গান দুটি নিয়ে ব্যান্ডের প্রথম অ্যালবাম ‘স্কয়ার ওয়ান’।
তখনই বিলবোর্ড চার্টে শুরু হয়ে যায় তোলপাড়। এক মাসেরও কম সময়ের মধ্যে অ্যালবামটির ১০ লাখের বেশি কপি বিক্রি হয়। বিলবোর্ডের টপচার্টে শীর্ষস্থান দখল করে নেয় অ্যালবামটি।
এরপর ২০১৮ সালের শুরুতে আন্তর্জাতিকভাবে নজরে আসে ব্ল্যাকপিংক। ব্রিটিশ শিল্পী ডুয়া লিপার সঙ্গে ব্যান্ডের গাওয়া ‘কিস অ্যান্ড মেকআপ’ গানটি সে বছর সাড়া ফেলে।
২০২০ সালে মুক্তি পায় তাদের প্রথম স্টুডিও অ্যালবাম ‘বর্ন পিংক’। ওই বছরের অগাস্টে ‘পিংক ভেনম’ শিরোনামের গানটি নতুন করে আলোচনায় আনে দলটিকে। এরপর ওই মাসেই যুক্তরাষ্ট্রের এমটিভি ভিডিও অ্যাওয়ার্ডসের মঞ্চ মাতায় কোরিয়ান ব্যান্ড দলটি।
তাদের সর্বশেষ সাফল্য হল যুক্তরাজ্যের চার্টে শীর্ষস্থান দখল করা। এ দলের পাঁচটি মিউজিক ভিডিও ইউটিউবে ১০০ কোটি বার দেখা হয়েছে। ৮ কোটির বেশি সাবক্রাইবার রয়েছে তাদের।
ব্ল্যাকপিংকের দুনিয়াজোড়া খ্যাতির পেছনে দলের সব সদস্যের জন্মস্থানের বৈচিত্র্যকে গুরুত্ব দিয়ে দেখা হয়।
যেমন ২৬ বছর বয়সী রোজের জন্ম নিউ জিল্যান্ডে আর বেড়ে ওঠা অস্ট্রেলিয়ায়, তার মূল নাম রোজেন চেইয়ং। ২৭ বছর বয়সী জেনি কিমের জন্ম দক্ষিণ কোরিয়ায় হলেও এই গায়িকা বড় হয়েছেন নিউ জিল্যান্ডে।
আর দলের নৃত্যশিল্পী লিসা (২৬) থাইল্যান্ডের, তার আসল নাম লালিসা মনোবাল। জিসু কিম (২৮) একমাত্র সদস্য, যার জন্ম এবং বেড় ওঠা সবই দক্ষিণ কোরিয়ায়।
ভিন্নধর্মী গায়কী ও নাচের তালে মাত্র কয়েক বছরেই তরুণ শ্রোতাহৃদয়ে জায়গা করে নিয়েছে ব্ল্যাকপিংক। ইউরোপ থেকে এশিয়া, গানের উন্মাদনায় শ্রোতাদের বুঁদ করে রেখেছে জনপ্রিয় কে-পপ ব্যান্ডটি।
২০২২ সালে টাইম ম্যাগাজিনের ‘এন্টারটেইনার অফ দ্য ইয়ার’ হয় কোরিয়ান পপের এই ব্যান্ড দল।
ব্ল্যাক পিংক বর্তমানে বিশ্ব সফরে আছে। গত মাসে তারা অস্ট্রেলিয়া সফর করেছে, এর আগে জাপানে গান করেছে ব্যান্ডটি।
ব্ল্যাকপিংকের ভক্তদের বলা হয় ‘ব্লিংক’।