"ত্রিশ বছর সময়টা আমার কাছে খুব দীর্ঘ মনে হয়নি। বিয়ের পর থেকে শুরু করে প্রতিদিনই ৩০ সেকেন্ডে কেটে গিয়েছে মনে হয়েছে।"
Published : 03 Aug 2024, 12:05 AM
বিয়ের ত্রিশ বছরে এসে ঢাকাই সিনেমার নায়িকা মৌসুমী দেশ ছেড়ে আছেন বহু দূরের দেশ যুক্তরাষ্ট্রে; আর ব্যবসা সামলাতে ঢাকায় থাকছেন অভিনেতা ওমর সানি। এই বিশেষ দিনে স্ত্রীকে দারুণ মিস করছেন সানি, ভুগছেন ‘একাকিত্বে’।
মৌসুমী-ওমর সানির ত্রিশতম বিবাহবার্ষিকীতে শুক্রবার গ্লিটজকে মনের এই অবস্থার কথা জানিয়েছেন অভিনেতা। যিনি ইদানিং সিনেমার কাজ কমিয়ে দিয়ে ব্যস্ত থাকছেন রেস্তোরাঁ ব্যবসা নিয়ে।
কথায় কথায় সানি বলেছেন, সিনেমার শুটিং ফ্লোর থেকে দুজনের বন্ধুত্ব, যা সময় গড়িয়ে রূপ নেয় প্রেমে, তারপর পরিণয়। সানি-মৌসুমীর সংসার বাঁধার এই গল্প অজানা নয়। দাম্পত্য জীবনের তিন দশক পেরিয়ে তারা কেমন আছেন, দিনটি কীভাবে উদযাপন করছেন তা জানতে গ্লিটজ যোগাযোগ করে সানির সঙ্গে।
এত বছরেও ভালোবাসা ‘এতটুকু কমেনি’ মন্তব্য করে সানি বলেন, " ত্রিশ বছর সময়টা আমার কাছে খুব দীর্ঘ মনে হয়নি। বিয়ের পর থেকে শুরু করে প্রতিদিনই ৩০ সেকেন্ডে কেটে গিয়েছে মনে হয়েছে। কারণ এই ত্রিশ বছরে আমাদের ভালোবাসা একটুও কমেনি। কমলে হয়তো মনে হতো সময়টা অনেক দীর্ঘ। এই ত্রিশ বছরে মৌসুমী আমার সবটা জুড়ে ছিল, কিন্তু এই বছরে এসে মনে হচ্ছে তাকে আমি সব থেকে বেশি মিস করছি।"
কেবল মৌসুমী নয়, বর্তমানে দুই ছেলে-ময়ে এবং পুত্রবধূও ঢাকায় নেই জানিয়ে সানি তার এককিত্বে ভোগার কথা জানান।
"মৌসুমীর সঙ্গে অনেক স্মৃতি, তবে এই বছরের স্মৃতিটা সারাজীবন থেকে যাবে আমার। কারণ আমি মৌসুমী, আমার কন্যা ফাইজা, ছেলে ফারদীন ও বউমাকে খুব মিস করছি। তাদের কথা খুব মনে পড়ছে, এই বছরের চেয়ে বড় কোনো স্মৃতি মনে হয় না আমি পেছনে রেখে এসেছি। ভীষণভাবে একাকীত্ব অনুভব করছি। এই ২৪ সালের মতো একাকীত্ব সময় আর কখনো কাটানো হয়নি। আগে যদি এই একাকিত্ব অনুভব করতাম তাহলে হয়তো আমি কখনো তাদেরকে এত দূরে যেতে দিতাম না। আজকে বাংলাদেশে থেকে নিজেকে ভীষণভাবে অসহায় মনে হচ্ছে।"
মৌসুমী যুক্তরাষ্ট্রে কী করছেন জানতে চাইলে সানি গ্লিটজকে বলেন, “মেয়ে ফাইজার পড়াশোনা তো আছেই, তাছাড়া আমার শাশুড়ির অবস্থা খুবই খারাপ। তিনি অনেক অসুস্থ। উনার যত্ন নিতে কিছু মানুষের সেখানে প্রয়োজন, থাকা লাগবেই। আমার মনে হল অন্য মানুষ দিয়ে তার যত্ন নেওয়ার চেয়ে আমরা তো তার নিজের মানুষ। তাই আমি নিজেই সিদ্ধান্ত নিয়ে মৌসুমিকে সেখানে পাঠাই। তার মায়ের যত্ন নেয়ার জন্য। আমাদের বাবা-মাকে আমরা সম্মান যদি না করতে পারি, আমারও তো ছেলে মেয়ে আছে, আমাদের ভবিষ্যতের দায়িত্ব তো তারা তাহলে নিবে না। আর এখন আমাদের এই যত্ন দেখে কিন্তু তারাও শিখছে। সেই জায়গা থেকে কিছুটা সময় আমি আমার স্ত্রীকে স্যাক্রিফাইস করেছি।"
তিনি আরও বলেন, "অনেকে বলে যে আমার মেয়ে বড় হয়েছে, ২১ বছরে সে আমেরিকার সিটিজেন হয়ে গিয়েছে, এখন সেখানে মৌসুমীর থেকে কী হবে, কিন্তু দিন শেষে আমি কিন্তু একজন বাঙালি পিতা। আমার কাছে আমার মেয়ে এখনো বাচ্চা। নিরাপত্তার জায়গা থেকেও মনে হয়েছে মৌসুমীর সেখানে থাকাটা বেশি গুরুত্বপূর্ণ। এই ২৯ বছর তো আমার সঙ্গে থাকল।"
মৌসুমী দেশের বাইরে থাকলেও বিবাহবার্ষিকী বেশ ঘটা করে উদযাপনের পরিকল্পনা ছিল এই অভিনেতার। তবে দেশের এই পরিস্থিতিতে আয়োজন থেকে সরে এসেছেন জানিয়ে এই তিনি বলেন, "ইচ্ছে ছিল একটা বড় অনুষ্ঠান করব মৌসুমিকে বাইরে রেখেই। আমার রেস্তোরাঁয় আত্মীয়-স্বজনদেরকে নিয়ে বড় করে আয়োজন করার, কিন্তু দেশের এই পরিস্থিতিতে সেটার চিন্তাটা ভিতর থেকেই আসেনি। পরে হয়তো কখনো করা হবে।"
মৌসুমী-সানি বড়পর্দায় একসঙ্গে প্রথম দেখা দেন ‘দোলা’ সিনেমায়। এরপর তাদের ‘আত্ম-অহংকার’, ‘প্রথম প্রেম’, ‘মুক্তির সংগ্রাম’, ‘হারানো প্রেম’, ‘গরীবের রানী’, ‘প্রিয় তুমি’, ‘ঘাত প্রতিঘাত’, ‘সুখের স্বর্গ’, ‘মিথ্যা অহংকার’সহ অসংখ্য সিনেমায় জুটি বেঁধে অভিনয় করেছেন তারা।