সোমবার জাকির হোসেনের পরিবারের পক্ষ থেকে তার মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করা হয়েছে বলে জানিয়েছে এনডিটিভি।
Published : 16 Dec 2024, 12:44 PM
একদিন আগে মৃত্যুর যে গুজব ঢেকেছিল শোকের অবগুণ্ঠনে, সেই গুজব সত্যি করে চলে গেলেন ভারতের কিংবদন্তি তবলাবাদক ওস্তাদ জাকির হোসেন।
সোমবার জাকির হোসেনের পরিবারের পক্ষ থেকে তার মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করা হয়েছে বলে জানিয়েছে এনডিটিভি।
জাকির হোসেনের বোন খুরশিদ আউলিয়া বলেন, “ভেন্টিলেশন মেশিন বন্ধ করার পর তিনি চলে যান। আমি বলবো জাকিরের মৃত্যু হয়েছে শান্তিপূর্ণভাবে।“
এক বিবৃতিতে এই কিংবদন্তির পরিবার জানিয়েছে 'ইডিওপ্যাথিক পালমোনারি ফাইব্রোসিস' থেকে তৈরি হওয়া জটিলতায় মারা গেছেন জাকির হোসেন। তার বয়স হয়েছিল ৭৩ বছর। তিনি পরিবারে স্ত্রী ও দুই মেয়ে রেখে গেছেন। তার স্ত্রী নৃত্যশিল্পী ও শিক্ষক স্ত্রী আনতোনিয়া মিনেকোলা; বড় মেয়ে আনিসা কুরেশি একজন চলচ্চিত্র নির্মাতা ও প্রযোজক এবং ছোট মেয়ে ইসাবেলা কুরেশি নৃত্যশিল্পী হিসেবে পরিচিত।
গত দুই সপ্তাহ ধরে যুক্তরাষ্ট্রের স্যান ফ্রান্সিসকোর একটি হাসপাতালের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন ছিলেন জাকির হোসেন। সেখান থেকে তিনি পৌঁছে যান জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে, যেখান থেকে আর তাকে ফেরানো যায়নি। জীবনের তাল-লয়-ছন্দের সঙ্গে সমস্ত যোগাযোগ ছিন্ন করে ওস্তাদ জাকির হোসেন পাড়ি দিয়েছেন অনন্তলোকে।
বিবৃতিতে পরিবার বলেছে, “তিনি পৃথিবীজুড়ে বহু ভক্ত রেখে গেছেন। রেখে গেছেন উত্তরাধিকার। তার শিক্ষা আগামী প্রজন্মে অনুরণিত হবে।“
এই তবলাবাদকের মৃত্যুতে শোক জানিয়েছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।
এক্সে তিনি বলেন, “কিংবদন্তি তবলা মায়েস্ত্রো ওস্তাদ জাকির হোসেনজির প্রয়াণে গভীরভাবে শোকাহত। অনবদ্য প্রতিভার জন্য তিনি চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবেন। বাদ্যযন্ত্র তবলাকে বিশ্বের দরবারে এনে ভারতীয় শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের দুনিয়ায় যিনি বিপ্লব ঘটিয়েছিলেন তিনি।“
Deeply saddened by the passing of the legendary tabla maestro, Ustad Zakir Hussain Ji. He will be remembered as a true genius who revolutionized the world of Indian classical music. He also brought the tabla to the global stage, captivating millions with his unparalleled rhythm.…
— Narendra Modi (@narendramodi) December 16, 2024
এই সংগীত গুরুর ‘মৃত্যুর খবর’ রোববার ছড়িয়ে পড়লেও তার বোন খুরশিদ আউলিয়া পিটিআইকে বলেছিলেন, ‘সেটি নিতান্তই গুজব’। তার অনুরোধ ছিল কেউ যেন তার ভাইকে নিয়ে ছড়ানো ভুল তথ্যের পেছনে না ছোটেন।
তবে জাকির হোসেনের অবস্থা সংকটাপন্ন বলে জানিয়েছিলেন খুরশিদ।
রাতে ভারতের প্রথম সারির অধিকাংশ সংবাদমাধ্যম জাকির হোসেনের ‘মৃত্যুর’ খবর প্রকাশ করলে সংগীতপ্রেমী মহলে শোকের ছায়া নেমে আসে। অনেকেই ফেইসবুকে সেই শোকের প্রকাশ ঘটান বিভিন্ন বার্তা দিয়ে।
ভারতের যোগাযোগমন্ত্রী জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়াসহ কয়েকজন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী শোক প্রকাশ করে বিবৃতি দেন সোশাল মিডিয়ায়। শোক প্রকাশ করেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও।
সোমবার ভারতীয় সংবাদমাধ্যমগুলো জাকির হোসেনের প্রয়াণের খবর নিশ্চিত করেছে।
কিছুদিন আগে কলকাতায় একটি অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়ার কথা ছিল তার। কিন্তু শারীরিক অসুস্থতার কারণে নেই পরিকল্পনা বাতিল করা হয়।
ধ্রুপদিতেই মিশেছিলেন বেশি
মুক্তিযুদ্ধের সময় যুক্তরাষ্ট্রে অনুষ্ঠিত ‘কনসার্ট ফর বাংলাদেশ’র অন্যতম সদস্য কিংবদন্তি তবলাবাদক আল্লা রাখার জ্যেষ্ঠ সন্তান জাকির হোসেন। তিনি ভারতের পাশাপাশি বিশ্ব সংগীতেও ছিলেন সুপরিচিত। ১৯৫১ সালে মুম্বাইয়ে তার জন্ম; তবলায় হাতেখড়ি মাত্র তিন বছর বয়সে। ১২ বছর বয়সেই ভারতের বিভিন্ন প্রান্তে পেশাদার বাদক হিসেবে পরিচিত পেতে শুরু করেন তিনি।
তার কাজের বেশিরভাগজুড়ে ছিল ভারতীয় ধ্রুপদি সংগীত; পাশাপাশি বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের সংগীতেও দখল ছিল তার। ভারতসহ অন্যান্য দেশের বহু চলচ্চিত্রেও কাজ করেছেন।
জাকির হোসেন তবলায় সংগত করেছেন কিংবদন্তি শিল্পী পণ্ডিত রবিশঙ্করকে, যাকে জীবদ্দশায় দীর্ঘকাল সংগত করেছেন তার বাবা আল্লা রাখা। এছাড়া ওস্তাদ আলী আকবর খাঁ, শিব কুমার শর্মা বা কত্থক নৃত্যশিল্পী বিরজু মহারাজকেও সংগত করেছেন জাকির হোসেন।
প্রায় চার দশক আগে সপরিবারে যুক্তরাষ্ট্রের স্যান ফ্রান্সিসকোতে পাড়ি জমান জাকির হোসেন। সেখানেও তিনি সংগীত নিয়েই ছিলেন। আন্তর্জাতিক সংগীতাঙ্গনে তার বিচরণ আরো বিস্তৃত হতে থাকে ওই সময় থেকে। যুগ যুগ ধরে তিনি বিভিন্ন দেশে অসংখ্য অনুষ্ঠান ও কনসার্টে শ্রোতাদের মাতিয়েছেন তবলার বোলে।
সংগীতে অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে দেশ-বিদেশে বহু সম্মাননা পেয়েছেন জাকির হোসেন। ১৯৮৮ সালে ভারত সরকার তাকে ‘পদ্মশ্রী’খেতাবে ভূষিত করে। ২০০২ সালে পান ‘পদ্ম ভূষণ’, ২০২৩ সালে ‘পদ্ম বিভূষণ’ সম্মাননা।
জাকির হোসেন ১৯৯০ সালে পান ‘সংগীত নাটক একাডেমি অ্যাওয়ার্ড’, যা সংগীত জগতে ভারতের সর্বোচ্চ সম্মাননা হিসেবে বিবেচিত। আর বিশ্ব সংগীতের সবচেয়ে মর্যাদাকর গ্রামি পুরস্কারও এই সংগীত মায়েস্ত্রো ঝুলিতে গেছে চারবার।
আরও পড়ুন