জীবনের চলার পথে চার অভিনেত্রীকে কিশোর কুমার বেছে নিয়েছেন সঙ্গী হিসেবে, তার সর্বশেষ দাম্পত্যের কিছু দিক উঠে এসেছে ছেলে অমিত কুমারের কথায়।
Published : 06 Aug 2022, 12:15 AM
দশকের পর দশক ধরে ভারতীয় উপমহাদেশের শ্রোতাদের মোহাচ্ছন্ন করে রেখেছেন কিংবদন্তি গায়ক কিশোর কুমার, তবে নিজের দাম্পত্য জীবনে তার সুর কেটে গেছে বার বার।
জীবনের চলার পথে চার অভিনেত্রীকে তিনি বেছে নিয়েছেন সঙ্গী হিসেবে, তার সর্বশেষ দাম্পত্যের কিছু দিক উঠে এসেছে ছেলে অমিত কুমারের কথায়।
অমিতের ভাষ্যে, তার বাবা কিশোর কুমারকে সুখের আশ্রয় দিতে পেরেছিলেন চতুর্থ স্ত্রী লীনা চন্দাভারকর।
৪ অগাস্ট ছিল কিশোর কুমারের জন্মদিন। ১৯২৯ সালে ভারতের মধ্যপ্রদেশের খান্ডোয়ার শহরে এক বাঙালি পরিবারের সবকনিষ্ঠ সন্তান ছিলেন তিনি।
বড় ভাই অশোক কুমার ছিলেন হিন্দি সিনেমার এক খ্যাতিমান পুরুষ। অশোক কুমারের অনুপ্রেরণাতেই কিশোর এগিয়ে গেছেন তার জীবনে।
কিশোরের ৯৩তম জন্মদিনে হিন্দুস্থান টাইমস তার ছেলে অমিতের পুরনো একটি সাক্ষাৎকার উঠিয়ে এনেছে।
গায়ক এবং অভিনেতা ছাড়াও চিত্র্যনাটকার, পরিচালক, প্রয়োজক একং সুরকার হিসেবেও কিশোর কুমারকে দেখেছে ভারতের সিনেমা ইন্ডাস্ট্রি।তবে সিনেমায় তার অভিনীত বেশিরভাগ চরিত্রই ছিল কমেডি ধাঁচের।
সংসার জীবনেও বারবার উত্থান-পতনের মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে গুণী এই শিল্পীকে। ১৯৫০ সালে প্রথমবার বিয়ে করেন সত্যজিৎ রায়ের ভাইঝি রুমা গুহঠাকুরতাকে, আট বছরের মাথায় ঘটে বিচ্ছেদ। সেই সংসারের ছেলে অমিত কুমার।
এরপরের কিশোর বিয়ে করেন বলিউড অভিনেত্রী মধুবালাকে, যার মধ্যে মেরিলিন মনরোকে খুঁজে পেতেন ভক্ত-অনুরাগীরা।
বলা হয়, বলিউডের অন্যতম আলোচিত বিয়ে ছিল সেটি। মধুবালাকে বিয়ের জন্য ইসলামে ধর্মে ধর্মান্তরিতও হন এই গায়ক।
১৯৬৯ সালে মধুবালার মৃত্যুর পর কিশোর কুমারের জীবনে তৃতীয় স্ত্রী হয়ে আসেন বলিউড আভিনেত্রী যোগিতা বালি।
সেই বিয়েও বেশি দিন টেকেনি; ১৯৭৬ সালে আবারও বিচ্ছেদ। এর পর আশির শুরুতে লীনা চন্দাভারকরের সঙ্গে গাঁটছড়া বাঁধেন কিশোর কুমার।
১৯৮৭ সালে কিশোর কুমারের মৃত্যুর আগ পর্যন্ত লীনাই ছিলেন তার জীবনসঙ্গী। সুমিত কুমার তাদের সন্তান।
দুই দশক আগের সেই সাক্ষাৎকারে অমিত কুমার জানান, তিনি মনে করেন, চতুর্থ বিয়েতে এসে তার বাবা সংসার জীবনে থিতু হতে পেরেছিলেন। এবং লীনার সঙ্গে তার বাবা ভালোই ছিলেন।
লীনা সদ্য স্বামী হারানোর পরপর কিশোরের সঙ্গে তার আলাপ হয়। তখন কিশোর কুমারের হাতে দুটি হিন্দি সিনেমার কাজ। লীনাকে ‘মমতা কি ছাঁ মে’ সিনেমায় কাজ করার প্রস্তাবও দেন। লীনাও বিষণ্নতা কাটিয়ে উঠতে সিনেমায় আসেন।
তবে কিশোর যখন লীনার কাছে বিয়ের প্রস্তাব পাড়েন, শুরুতে ওই অভিনেত্রী রাজি ছিলেন না, কারণ তার পরিবারের সম্মতি ছিল না সেই বিয়েতে।
পরে অবশ্য ২১ বছরের বড় কিশোর কুমারকে বিয়ে করেন লীনা। চলতি বছরই ডান্স রিয়েলিটি শো ‘ডান্স ইন্ডিয়া ডান্স’ লিল মাস্টার্স সিজন ফাইভে এসে স্বামীকে নিয়ে স্মৃতিচারণ করেন তিনি।
সে সময় লীনা বলেন, “আমি নিজের জীবনে স্থির হতে চেয়েছিলাম। তাই কিশোরের প্রস্তাব প্রথমে প্রত্যাখান করি। পরে তিনি স্পষ্ট করে বলেন যে, তিনি আমাকে বিয়ে করতে চান। শুনে আমিতো কথা হারিয়ে ফেলি এবং সেই প্রস্তাবও ফিরিয়ে দিই।“
কিশোরের বিয়ের প্রস্তাবের কয়েক সপ্তাহ পরে লীনার বাড়িতে তুমুল অশান্তি শুরু হয়। তার বাবা কিছুতেই বিষয়টি মেনে নিতে পারছিলেন না, মেয়েকে ডেকে রাগারাগিও করেন।
সেই রাগারাগিতেই লীনা সিদ্ধান্ত নেন, বাপের বাড়ি থেকে বেরিয়ে এসে বিয়ে করে ফের সংসার জীবন শুরু করবেন।
“আমার এখনও মনে আছে, কার্টার রোডে (মু্ম্বাইয়ের) গিয়ে কিশোরজিকে ফোন করার কথা। তাকে ফোন করে আমি জিজ্ঞেস করি, তিনি এখনও আমাকে বিয়ে করতে চান কি না, যদি তিনি রাজি থাকেন, তাহলে আমি বিয়ে করতে প্রস্তুত। এভাবেই আমরা বিয়ে করার সিদ্ধান্ত নিই।“
১৯৮৭ সালে জীবনের ইতি টানেন কিশোর কুমার, তাই আশির দশকের শুরুতে গড়ে ওঠা সেই সংসারও বেশিদিন স্থায়ী হয়নি।