সাত পাকে বাঁধা পড়তে বর-কনেকে অপেক্ষা করতে হবে আরও চার মাস।
Published : 04 Mar 2024, 12:34 PM
মুকেশ আম্বানির ছোট ছেলে বলে কথা! বিয়ের আগাম অনুষ্ঠানেই কতটা জৌলুস ছড়ানো যায়, তা দেখিয়ে দিল ভারতের সবচেয়ে ধনী এই পরিবার।
মুকেশ ও নীতা আম্বানির ২৮ বছর বয়সী ছেলে অনন্ত আম্বানি এবং ভারতীয় প্রতাপশালী শিল্পপতি বীরেন মার্চেন্ট ও শায়লা মার্চেন্টের মেয়ে ২৯ বছর বয়সী রাধিকা মার্চেন্টের প্রাক বিবাহ অনুষ্ঠান ছিল শুক্র থেকে রোববার। ভারতের সংবাদমাধ্যমগুলো বলছে, অতিথি সমাগম, অনুষ্ঠানের বৈচিত্র্য, ভারতীয় ঐতিহ্যের প্রদর্শন আর খরচের বহরে রীতিমত ইতিহাস গড়েছে তিন দিনের এ আয়োজন।
হলিউড-বলিউডের সুপারস্টাররা তো ছিলেনই, বিশ্বের বিভিন্ন অঙ্গনের নামিদামি ব্যক্তি, প্রভাবশালী ব্যবসায়ী, সংগীত আর খোলার মাঠের দাপুটেরাও এসেছিলেন জামনগরের ওই আয়োজনে।
বলিউডি সিনেমার তিন তারকা শাহরুখ খান, আমির খান এবং সালমান খানকে অনেকদিন পর এক মঞ্চে পাওয়া গেছে আম্বানিদের সাম্রাজ্যে।
গুজরাটের পশ্চিমাঞ্চলীয় শহর জামনগরে প্রাক বিবাহ অনুষ্ঠানে সূচনা হয় শুক্রবার। আলাদা আলাদা ‘থিম’ ধরে করা ওই অনুষ্ঠান শেষ হয় রোববার রাতে।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস লিখেছে, এলাহি আয়োজনে প্রতিটি দিনই আলাদা আলাদাভাবে জমজমাট হয়ে উঠলেও দ্বিতীয় দিন মাতিয়ে দেন হিন্দি সিনেমার তিন খান।
মঞ্চে ‘আরআরআর’ সিনেমার অস্কার জয়ী গান ‘নাটু নাটু’র তালে তালে নেচে রীতমত হুল্লোড় তুলে দেন শাহরুখ-আমির-সালমানরা। তিনজনের নাচের স্টেপ একটু এলোমেলো হলেও হেসে গেয়ে তারা অনুষ্ঠান জমিয়ে দেন।
The three Khans grooving to Naatu Naatu - what a vibe! ????@iamsrk @BeingSalmanKhan #ShahRukhKhan #SalmanKhan #AamirKhan #AnantAmbani #Ambani #AnantAmbaniRadhikaMerchant #AnantRadhika pic.twitter.com/o9i6ReQ0XS
— Shah Rukh Khan Universe Fan Club (@SRKUniverse) March 2, 2024
‘নাটু নাটু’ ছাড়াও ‘ছাইয়া ছাইয়া’, ‘মুজসে শাদি করোগি’, ‘জিনে কে হ্যায় চার দিন’, ‘মাস্তি কি পাঠশালা’, ‘ঢিঙ্কা চিকা’ গানের সঙ্গে নাচেন শাহরুখ, আমির ও সালমান।
তাদের নাচের ওই ভিডিওর ক্লিপ ছড়িয়ে পড়েছে সোশাল মিডিয়ায়। ভিডিওতে দেখা গেছে, শাহরুখ ও সালমান রঙ মিলিয়ে পরেছেন কালো আফগানি কুর্তা-পায়জামা। আমিরের পরনেও কুর্তা, তবে সেটা সবুজ।
নাচলেন অন্তঃসত্ত্বা দীপিকাও
মাত্র কদিন আগেই সংসারে নতুন অতিথি আসার খবর দিয়েছেন দীপিকা পাড়ুকোন ও রাণবীর সিং। অনন্ত আম্বানির বিয়ের আসরে এসে তারা সহশিল্পী এবং অন্যদের কাছ থেকে পেয়েছেন বিশেষ শুভেচ্ছা।
কিন্তু স্বামীর সঙ্গে দীপিকাও যখন নাচের মঞ্চে উঠলেন, চোখ কপালে উঠেছিল অনেকের।
অবশ্য মঞ্চে সাবধানীই ছিলেন এই নায়িকা। জটিল কোনো স্টেপ না দিয়ে কেবল হাত নেড়ে স্বামীর সঙ্গে তাল মিলিয়েছেন এই অভিনেত্রী। স্ত্রীকে পুরোটা সময়জুড়ে নজরে রাখছিলেন রাণবীর।
সোশাল মিডিয়ায় ভাইরাল হওয়া দীপিকার নাচ এবং রাণবীরের সতর্কতা নিয়ে নানা ধরনের মন্তব্য এলেও রাণবীরের দায়িত্বশীলতার প্রশংসা করেছেন ভক্ত অনুরাগীরা।
অনন্তর ঘড়ি দেখে মুগ্ধ জাকারাবার্গের স্ত্রী
অনুষ্ঠানে সস্ত্রীক এসেছিলেন ফেইসবুকের কর্ণধার মার্ক জাকারবার্গ। একটি ভিডিওতে দেখা গেছে, অনন্ত আম্বানির সঙ্গে কথা বলতে বলতে জাকারবার্গের স্ত্রী প্রিসিলা চ্যাংয়ের চোখ পড়ে অনন্তর ঘড়ির উপর।
Mark Zuckerberg & his wife Priscilla was surprised to see Anant Ambani's watch. Anant was seen carrying beautiful audemars piguet royal oak open worked skeleton worth INR 14 crore. ????#AnantRadhikaWedding | #AnantAmbani pic.twitter.com/DEql5XFWUA
— Radhika Chaudhary (@Radhika8057) March 3, 2024
ঘড়িটি দেখে মুগ্ধ প্রিসিলা কিছুক্ষণ সেটা নিয়ে আলাপ চালিয়ে যান। জাকারবার্গ বলেন, “আমিও তাকে (অনন্ত) বলেছি, ঘড়িটি দারুণ।”
শ্বশুর-শাশুড়ির ধারেকাছেও ঘেষলেন না ঐশ্বরিয়া
সাবেক বিশ্ব সুন্দরী ঐশ্বরিয়া রাই বচ্চনের সঙ্গে তার শ্বশুর-শাশুড়ি অমিতাভ ও জয়া বচ্চনের দূরত্ব এখন প্রকাশ্যে।
গেল বছর দীপাবলীর আগে সেই যে শ্বশুরবাড়ি ছেড়ে বাবার বাড়িতে উঠেছিলেন ঐশ্বরিয়া, এখন পর্যন্ত মেয়ে আরাধিয়া বচ্চনকে নিয়ে সেখানেই আছেন এই নায়িকা।
আরাধিয়ার স্কুলের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান বা নাতি অগস্ত্য নন্দার সিনেমার বিশেষ প্রদর্শনীতে বচ্চন পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে ঐশ্বরিয়ার দেখা পাওয়া গেলেও, শ্বশুর-শাশুড়ি বা শ্বশুরবাড়ির কারো সঙ্গে কথা বলতে দেখা যায় না তাকে।
এ ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটেছে আম্বানিদের অনুষ্ঠানেও। সেখানে অমিতাভ-জয়ার পাশে এক মুহূর্তের জন্যও দেখা যায়নি ঐশ্বরিয়াকে।
মেয়েকে নিয়ে পার্টিতে আসার পর ঐশ্বরিয়া আলাদা করে বসেন স্বামী অভিষেক বচ্চনের সঙ্গে। ফিরেও যান স্বামীর সঙ্গে আলাদা গাড়িতে।
ছিলেন আরও কে কে?
চোখ ধাঁধানো আয়োজনে কে ছিলেন আর কে ছিলেন না! আমন্ত্রিতদের মধ্যে ছিলেন ভুটান রাজ পরিবারের সদস্যরা, বিল গেটস, ডিজনির প্রধান বব ইগার, যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পকন্যা ইভাঙ্কা ট্রাম্প এবং কাতারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মেদ বিন আবদুলরহমান বিন জসিম আল-থানি।
তিন খান ছাড়াও বলিউডের সাইফ আলি খান ও কারিনা কাপুর হাজির হয়েছিলেন তাদের চার সন্তান নিয়ে। অর্থাৎ সারা আলী খান, ইব্রাহিম খান এবং তৈমুর ও জেহ ছিল তাদের সঙ্গে।
এছাড়া কারিশমা কাপুর, সিদ্ধার্থ মালহোত্রা-কিয়ারা আদভানি, বরুণ ধাওয়ান, আলিয়া ভাট-রাণবীর কাপুর, জাহ্নবী কাপুর, সোনম কাপুর, অনিল কাপুর, অক্ষয় কুমার-টুইঙ্কেল খান্না, ক্যাটরিনা কাইফ-ভিকি কৌশল, করণ জোহর, দক্ষিণের মহাতারকা রজনীকান্ত, শ্রদ্ধা কাপুরসহ আরও অনেকে আলো ছড়ান অনুষ্ঠান।
ছিলেন শচীন টেন্ডুলকার, মহেন্দ্র সিং ধোনি, রোহিত শর্মার মত ক্রিকেট তারকারাও।
আয়োজেন সুরের ঝঙ্কার তোলেন সংগীত শিল্পী রিয়ানা। প্রথম দিন তিন ঘণ্টার কনসার্টে রিয়ানার সঙ্গে এক পর্যায়ে মঞ্চে নাচেন জাহ্নবী কাপুর।
গান শোনান পাঞ্জাবের শিল্পী দলজিৎ দোশানজ, ভারতীয় শিল্পী অরিজিৎ সিং। মায়াবি জাদুতে অতিথিদের মোহাবিষ্ট করেন মার্কিন জাদুশিল্পী ডেভিড ব্লেইন।
তিন দিনের এই অনুষ্ঠানে দাওয়াত কার্ড থেকে শুরু করে সুবিশাল হলরুম, বলরুমসহ অন্দরসজ্জা করেছেন ভারতের নামকরা ফ্যাশন ডিজাইনার মনীশ মালহোত্রা। জঙ্গল, ফুল, পাখি, লতা-পাতা আর পৌরাণিক থিমে নান্দনিকভাবে সেজে উঠেছে অনুষ্ঠান অন্দর।
বিয়ের আনুষ্ঠানিকতায় সাজানো হয় জামনগর বিমানবন্দরও। গোলাপি, কমলা আর নীল কাপড়ে ঢেকে ফেলা হয় লাউঞ্জ। ভারতীয় ঐতিহ্য মেনে অতিথিদের স্বাগত জানাতে বিমানবন্দরের বাইরে রাখা হয় দুটি প্রদীপ এবং সুবিশাল পেইন্টিং।
অতিথিদের সাজগোজের জন্য হেয়ার স্টাইলিশ এবং মেইক-আপ আর্টিস্টও ছিল প্রস্তুত। আয়োজনের কোন পর্বে কোন ধরনের পোশাক পরতে হবে, সেজন্য অতিথিদেরকে নয় পৃষ্ঠার ড্রেস কোড দিয়ে দেওয়া হয়েছিল।
অনুষ্ঠানের প্রথম দিনের নাম দেওয়া হয়েছিল ‘অ্যান ইভিনিং ইন এভারল্যান্ড’; সে দিনের ড্রেস কোড ছিল 'এলিগেন্ট ককটেল ড্রেস’।
দ্বিতীয় দিনের অনুষ্ঠানে নাম ‘আ ওয়াক অন দ্য ওয়াইল্ড সাইড’; ড্রেস কোড ‘জঙ্গল ফিভার’। ফলে পোশাকে প্রাধান্য পায় সবুজ রঙ, অ্যানিমেল প্রিন্ট। যা জামনগরের প্রাকৃতিক পরিবেশের প্রতিনিধিত্ব করে।
তৃতীয় ও শেষ দিনের আয়োজনের নাম ‘স্বাক্ষর’। রাজকীয় ওই আয়োজনেও অতিথিরা পরেন ভারতীয় ঐতিহ্যবাহী পোশাক।
এর বাইরেও রাখা হয় মনোরঞ্জনের নানা আয়োজন।
অনুষ্ঠানে এক হাজার অতিথির জন্য ভারতের ইন্দোরের জারদিন হোটেল থেকে আনা হয় ২১ জন পাচক-পাচিকাকে। অতিথিদের পাতে পাতে বর-কনে তুলে দেন যার যার পছন্দ অনুযায়ী জাপানি, থাই, মেক্সিকান, পার্সিয়ান ও প্যান এশিয়ান খাবার।
এত আয়োজনের পর সাত পাকে বাঁধা পড়তে বর-কনেকে অপেক্ষা করতে হবে আরও চার মাস। আগামী ১২ জুলাই বিয়ের মূল অনুষ্ঠান ঘিরেও ব্যাপক আয়োজনের পরিকল্পনা করেছেন মুকেশ-নীতা আম্বানি।