বাঙালি সমাজকে নিয়ে মুক্তির পথযাত্রী হতে এবার ছায়ানটের বর্ষবরণের বার্তা- 'আমার মুক্তি আলোয় আলোয়'।
Published : 14 Apr 2025, 07:58 AM
সকলে একসাথে মিলবার, চলবার স্বপ্ন নিয়ে ভোরের আলো ফুটতে ফুটতে সুপ্রিয়া দাশে পরিবেশনায় ভৈরবীর রাগালাপে সূচনা হল ছায়ানটের ১৪৩২ বঙ্গাব্দবরণের প্রভাতী আয়োজন।
রাজধানীর রমনা উদ্যানের বটমূলে ছায়ানটের ৫৮তম এ আয়োজন যথারীতি শুরু হয় নতুন বছরের প্রথম দিন ভোর সোয়া ৬টায়।
বাঙালি সমাজকে নিয়ে মুক্তির পথযাত্রী হতে এবার ছায়ানটের বর্ষবরণের বার্তা- 'আমার মুক্তি আলোয় আলোয়'।
ছায়ানট সাধারণ সম্পাদক লাইসা আহমদ লিসা আগেই আয়োজন নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে বলেছিলেন, "বিশ্বব্যাপী যেমন ক্ষয়ে চলেছে মানবতা, তেমনি এদেশেও ক্রমান্বয়ে অবক্ষয় ঘটছে মূল্যবোধের। তবুও আমরা আশাহত হই না, দিশা হারাই না, স্বপ্ন দেখি হাতে হাত রেখে সকলে একসাথে মিলবার, চলবার।
"বাঙালি জাগবেই, সবাই মিলে সুন্দর দিন কাটানোর সময় ফিরবেই। সার্থক হবেই হবে, মানুষ-দেশ, এ পৃথিবীকে ভালোবেসে চলবার মন্ত্র।"
প্রভাতি এই আয়োজনে সম্মেলক কণ্ঠে ‘নূতন প্রাণ দাও, প্রাণসখা’ এবং একক কণ্ঠে দীপ্র নিশান্ত শোনান ‘তিমির দুয়ার খোলো’।
এবারের অনুষ্ঠানসজ্জায় ৯টি সম্মেলক, ১২টি একক গান ও তিনটি পাঠ অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। দুই ঘণ্টার অনুষ্ঠানে সব মিলিয়ে দেড় শতাধিক শিল্পী অংশগ্রহণ করছেন।
রমনা উদ্যান থেকে দুই ঘণ্টাব্যাপী এই আয়োজন নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় সরাসরি সম্প্রচার করা হচ্ছে ছায়ানটের ইউটিউব চ্যানেল (youtube.com/@chhayanautbd) ও ফেইসবুক পেইজে (facebook.com/chhayanautbd)। বিটিভিও সরাসরি সম্প্রচার করছে অনুষ্ঠান।
১৯৬৭ সালে রমনার বটমূলে যে বর্ষবরণ অনুষ্ঠানের সূচনা করেছিল ছায়ানট, এখন তা বাঙালির নববর্ষ উদযাপনের অন্যতম প্রধান অনুষঙ্গ।
১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের বছর ছাড়া প্রতিটি পহেলা বৈশাখেই সে অনুষ্ঠান হয়েছে; নতুন বছরকে স্বাগত জানানো হয়েছে সুরের মূর্ছনা আর কথামালায়। কোভিডের দুবছর এ আয়োজন করা হয় ভার্চুয়ালি।
২০০১ সালে ছায়ানটের বৈশাখ বরণের অনুষ্ঠানে বোমা হামলা চালায় জঙ্গিরা। তাতে ১০ জন নিহত হন। এরপর থেকে কঠোর নিরাপত্তা বেষ্টনীর মধ্যেই প্রতি বছর বর্ষবরণের এ আয়োজন হচ্ছে।
১৯৬১ সালে পাকিস্তানি শাসকদের বাধা উপেক্ষা করে রবীন্দ্রজন্মশতবর্ষ উদযাপন এবং তার সূত্র ধরে পরে সাংস্কৃতিক সংগঠন ছায়ানট গঠনে অনেকের সঙ্গে সনজীদা খাতুন ছিলেন নেতৃস্থানে।
বাঙালির সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলে কিংবদন্তিতুল্য সনজীদা খাতুন গত ২৫ মার্চ বিকাল ৩টায় জীবনের এই বিপুল যাত্রা সাঙ্গ করেন। এবারই প্রথম সনজীদা খাতুনকে ছাড়া বর্ষবরণের অনুষ্ঠান আয়োজন করেছে ছায়ানট।