প্রসেনজিৎ-চিরঞ্জিতদের কাছে ঋতুপর্ণর প্রস্থান ‘অবিশ্বাস্য’

ঋতুপর্ণ ঘোষকে স্মরণ করে ফেইসবুকে পোস্ট দিয়েছেন প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায় ও ঋতুপর্ণ সেনগুপ্ত, স্মৃতিচারণ করেছেন চিরঞ্জিত চক্রবর্তীও।

গ্লিটজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 30 May 2023, 03:41 PM
Updated : 30 May 2023, 03:41 PM

কলকাতার বাণিজ্যিক সিনেমার যেসব তারকাকে প্রয়াত নির্মাতা ঋতুপর্ণ ঘোষ পর্দায় হাজির করেছিলেন ‘অভিনয় শিল্পী’ হিসেবে, তাদের অনেকেই এ নির্মাতার প্রয়াণ দিবসে ‘শোকাতুর’।

এক দশক পরেও তাদের কাছে ঋতুপর্ণ ঘোষের চলে যাওয়া যেন ‘অবিশ্বাস্য’ এক ঘটনা। সেইসব অভিনয় শিল্পীদের মধ্যে প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায় আর ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত এ চলচ্চিত্রকারকে স্মরণ করে পোস্ট দিয়েছেন ফেইসবুকে। স্মৃতিচারণ করেছেন অভিনেতা চিরঞ্জিৎ চক্রবর্তীও।

মানুষের ‘ভেতরের’ জগতের গল্প পর্দায় তুলে আনা নির্মাতা ঋতুপর্ণর মৃত্যু হয় ৪৯ বছর বয়সে, ২০১৩ সালের ৩০ মে কলকাতায়।

তার হাত ধরেই প্রচলিত বাণিজ্যিক ছবির বাইরে নতুন করে নিজের ‘জাত’ চিনিয়েছেন প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়।

১৯৮০ দশকের মাঝামাঝিতে নায়ক হিসেবে ক্যারিয়ার শুরুর পর একের পর এক বাণিজ্যিক ছবিতে অভিনয় করেন প্রসেনজিৎ। পরে ঋতুপর্ণর হাত ধরে ‘চোখের বালি’, ‘খেলা’, ‘দোসর’, ‘সব চরিত্র কাল্পনিক’, ‘নৌকাডুবি’র মত সাতটি সিনেমা উপহার দেন দর্শকদের।

ঋতুপর্ণ আর প্রসেনজিতের বন্ধুত্ব ছিল দুই দশকের। সেই ‘বন্ধুত্বকে স্মরণ করে মঙ্গলবার প্রসেনজিৎ ফেইসবুকের পোস্টে লিখেছেন, ঋতুপর্ণর প্রস্থান তিনি বিশ্বাস করেন না।

ঋতুপর্ণ ঘোষের চলে যাওয়া বড় ‘ক্ষতি’ বলে মনে করেন নায়িকা ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত।

আনন্দবাজারের কাছে ঋতুপর্ণর সঙ্গে ব্যক্তিগত সম্পর্কের গল্প করেছেন অভিনেতা চিরঞ্জিৎ চক্রবর্তী। ঋতুপর্ণর ‘বাড়িওয়ালি’ সিনেমা করে দারুণ খ্যাতি কুড়িয়েছিলেন এই অভিনেতা।

“আমাকে ও ডাকত ‘দীপু’ নামে। ধীরে ধীরে আমাদের বন্ধুত্ব হল, ও আমাকে ‘বাড়িওয়ালি’তে কাস্ট করল। আমাকে আরও দুটো-তিনটে ছবির গল্প শুনিয়েছিল। কিন্তু পরে কোনো কারণে সেই ছবিগুলো ও আর আমার সঙ্গে করেনি।“

ঋতুপর্ণের মত ‘জ্ঞানী ও বিচক্ষণ’ পরিচালক কলকাতার বাংলা সিনেমার ইন্ডাস্ট্রিতে ‘কম’ এসেছে বলে মনে করেন চিরঞ্জিৎ। 

“আমি তার অত্যন্ত গুণমুগ্ধ। বাংলায় আজকে তার মত পরিচালকের খুব দরকার। কারণ ঋতু বাংলা ছবিকে জাতীয় স্তরের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক স্তরে পৌঁছে দিয়েছিল। ঋতুকে আমি আজও মিস করি। ওর ছবি মিস করি। এত প্রতিভা ছিল ওর। এতটা তাড়াতাড়ি না চলে গেলেও পারত,” বলেন চিরঞ্জিৎ। 

নিজের সব সিনেমার চিত্রনাট্যের লেখক ঋতুপর্ণ নিজেই

জীবদ্দাশায় যে ১৯টি চলচ্চিত্র নির্মাণ করেছিলেন ঋতুপর্ণ, তার মধ্যে ১২টিই বিভিন্ন শাখায় ভারতের জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার জেতে। সেরা পরিচালক ও চিত্রনাট্যকারের পুরস্কারও তিনি পেয়েছেন বেশ কয়েকবার। এছাড়া আন্তর্জাতিক স্বীকৃতিও রয়েছে তার।

নিজের নির্মিত সব চলচ্চিত্রের চিত্রনাট্য নিজেই লিখেছেন ঋতুপর্ণ।

হীরের আংটি’র মধ্য দিয়ে ১৯৯৪ সালে চলচ্চিত্র জগতে আসেন ঋতুপর্ণ। একই বছর ‘উনিশে এপ্রিল’ নির্মাণ করেন তিনি, যা তাকে এনে দেয় ভারতের জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার।

তার চলচ্চিত্রের মধ্যে রয়েছে- দহন, নৌকাডুবি, তিতলী, সব চরিত্র কাল্পনিক, শুভ মহরত, অন্তরমহল, বাড়িওয়ালি, আবহমান, উৎসব, খেলা, দোসর, সানগ্লাস ইত্যাদি। তার নির্মিত সর্বশেষ মুক্তিপ্রাপ্ত চলচ্চিত্র চিত্রাঙ্গদা।

তার হিন্দি চলচ্চিত্র রেইন কোট ২০০৪ সালে ভারতের সেরা হিন্দি চলচ্চিত্রের পুরস্কার পায়। এতে অভিনয় করেন ঐশ্বরিয়া রাই। এই অভিনেত্রী চোখের বালিতেও অভিনয় করেন। ঐশ্বরিয়ার স্বামী অভিষেক বচ্চন অন্তরমহলে অভিনয় করেন।

২০০৭ সালে ভারতের সেরা ইংরেজি চলচ্চিত্র পুরস্কার বিজয়ী ঋতুপর্ণের একমাত্র ইংরেজি চলচ্চিত্র ‘লাস্ট লিয়ার’-এ অভিনয় করেন অমিতাভ বচ্চন।

এছাড়া কলকাতার ইটিভি বাংলায় সম্প্রচারিত ‘এবং ঋতুপর্ণ’ ও স্টার জলসায় সম্প্রচারিত ‘ঘোষ অ্যান্ড কো’ অনুষ্ঠানে উপস্থিতিও দর্শকদের কাছে প্রিয় করে তোলে এই চলচ্চিত্র নির্মাতাকে।

২০১০ সালে একটি জনমত জরিপে ‘দশকের সেরা বাংলা চলচ্চিত্রকার’ নির্বাচিত হন ঋতুপর্ণ। তিনটি চলচ্চিত্রে অভিনয়ও করেছিলেন এই নির্মাতা।