“মায়ের শেখানো মত আমরা লতা পাতা, বিভিন্ন আলপনা, বাঁকা হাতের লেখায় বিভিন্ন কিছু লিখে তাতে ঈদ মোবারক লিখে কার্ড তৈরি করতাম।"
Published : 01 Apr 2025, 04:04 PM
ছেলেবেলায় ঈদের আগে নিজের হাতে কার্ড বানিয়ে সমবয়সী ও স্বজনদের পাঠাতেন অভিনেত্রী ওয়াহিদা মল্লিক জলি।
জীবনে বহু পাওয়া কার্ডের মধ্যে একটি ঈদকার্ড এতটাই বিশেষ গুরুত্ব বহন করছে যে সেটি ৩৫ বছর ধরে যত্ন করে সংরক্ষণে রেখেছেন অভিনেতা আজিজুল হাকিম। ঈদকার্ড দিতে এবং পেতে পছন্দ করতেন ফারজানা চুমকিও আবার এই বিষয়টি তেমন করে আলাদা কোনো বার্তা নিয়ে আসত না তারিক আনামের কাছে।
এসব তারকাদের সঙ্গে কথা বলে গ্লিটজ জেনেছে ঈদকার্ড নিয়ে তাদের স্মৃতি, আবেগ ও অনুভূতির কথা।
বেশিরভাগই বলেছেন, ঈদকার্ড তাদের ঈদের আনন্দ বাড়িয়ে দিত শৈশব, কৈশর এবং কারো কারো কাছে তারুণ্যে। প্রযুক্তির কল্যাণে ঈদকার্ড বিনিময়ের প্রচলন প্রায় উঠে গেলেও তারা মনে করেন এর আবেদন আজও অটুট আছে।
‘কার্ড বানানো শিখেছিলাম মায়ের কাছ থেকে’
রাজশাহীতে বেড়ে উঠা অভিনেত্রী ওয়াহিদা মল্লিক জলি ছেলেবেলায় ঈদ কার্ড কখনো দোকান থেকে কিনতেন না, বানাতেন নিজে হাতে। এই কাজটি মায়ের কাছ থেকে শিখেছিলেন বলে জানিয়েছেন জলি।
সেই স্মৃতি নিয়ে অভিনেত্রী বলেন, "আমি যখন দ্বিতীয় বা তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ি তখন থেকেই আমার মা ঈদ কার্ড বানানো শিখিয়েছেন। মায়ের শেখানো মত আমরা লতা পাতা, বিভিন্ন আলপনা, বাঁকা হাতের লেখায় বিভিন্ন কিছু লিখে তাতে ঈদ মোবারক লিখে কার্ড তৈরি করতাম। আমার মায়ের কাছ থেকেই সেলাই আঁকাআকি, এসব শিখেছি।"
তারপর সে সব কার্ড ডাকে পৌঁছে যেত আত্মীয়ের বাড়িতে, বোনের কাছেও।
জলি বলেন, "হাতে তৈরি করা সে সব কার্ড মা খামে ভরে পোস্ট করতেন পশ্চিমবঙ্গে থাকা মামা খালাদের কাছে। বড় আপা তখন ঢাকায় থাকতেন। আপাকে পাঠানো হত। ম্যাট্রিক পর্যন্ত চলেছে এমন কার্ড তৈরি করা। তারপর আর করা হয়নি।“
কতদিন পর্যন্ত কার্ড হাতে বানিয়েছেন জানতে চাইলে তিনি গ্লিটজকে বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত এই ঈদ কার্ডের চল ছিল। তখন কিনে গিফট করা হত কিন্তু হাতে তৈরি করার সেই আনন্দ পরে আর পাইনি। যখন কার্ড আসত খাম খুলে কার কার্ডে কী লেখা আছে সেটা পড়ার যে উচ্ছ্বাস ছিল সেটা এখন বুঝানো যাবে না।“
অনেকটাই কমে আসা ঈদকার্ডের প্রচলন নিয়ে এই অভিনেত্রী বলেন, “এখন তো ঈদ কার্ড উঠেই গিয়েছে। শেষ কবে কার্ড পেয়েছি মনে করতে পারছি না। এখন কার্ড আসে বিভিন্ন অফিস থেকে, সংগঠন থেকে। কিন্তু সেই আগের আত্মীয়দের কাছ থেকে আসার মত আনন্দ নেই।”
৩৫ বছর ধরে বিশেষ একটি কার্ড সংরক্ষণে রেখেছেন হাকিম
অভিনেতা আজিজুল হাকিম এবারের ঈদ কাটবেন ফরিদপুরে। ঈদকার্ড নিয়ে তার অনেক স্মৃতি রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেছেন বহু বছর আগে পাওয়া একটি বিশেষ কার্ড এখনো তার সংরক্ষণে আছে।
হাকিম বলেন, "আজাদ প্রোডাক্টস নামের প্রতিষ্ঠানটি ঈদকার্ড, ভিউকার্ডের জন্য বেশ জনপ্রিয় ছিল। এছাড়া আইডিয়াল প্রোডাক্টসের কাছ থেকেও বিভিন্ন ধরনের কার্ড কিনেছি। তারপর বাবাকে এক ধরনের, বন্ধুকে এক ধরনের, পছন্দের মানুষকে আরেক ধরনের কার্ড কিনে দিতাম। বিভিন্ন বৈচিত্র্যময় কার্ড পাওয়া যেত।
“কার্ডে নিজের হাতে একটা বার্তা লিখতাম সেগুলো আবার পোস্ট করতাম যারা দূরে থাকতেন।"
কার্ড সংরক্ষণে রাখার একটা অভ্যাস ছিল বলে জানিয়েছেন এই অভিনেতা। তার কাছে ঈদকার্ড প্রাপ্তি মানে অন্যরকম আনন্দ পাওয়া।
“বিভিন্ন জায়গা থেকে যে কার্ড আসত সেগুলো সংরক্ষণে রাখতাম। জিনাতের (স্ত্রী জিনাত হাকিম) কাছ থেকে প্রথম যে ঈদকার্ডটি পেয়েছিলাম সেটা আমার কাছে খুব গুরুত্বপূর্ণ ছিল এবং সেই কার্ডটি এখনো আমার সংরক্ষণ আছে। প্রায় ৩৫ বছর যাবৎ সেই কার্ডটি আমি যত্ন করে রেখেছি।"
তবে ছেলেমেয়েদের কাছ থেকে এখনো কার্ড পান এই অভিনেতা।
তিনি বলেন, "জন্মদিন বা ঈদে আমার ছেলে ও মেয়ে প্রতিবছরই নিজের হাতে ডিরেকশন দিয়ে কার্ড তৈরি করে এনে আমাকে দিচ্ছে, তাদের মাকে দিচ্ছে। সেই আনন্দটা এখনো আমি পরিবার থেকে পাই।"
চোখে চোখ রেখে ঈদের শুভেচ্ছা দেওয়াতেই আনন্দ
ঈদকার্ড নিয়ে তেমন স্মৃতি নেই অভিনেতা তারিক আনাম খানের। ঈদ কার্ড দেওয়া-নেওয়া কেবলই অভিনেতার কাছে আনুষ্ঠানিকতা।
তিনি বলেন, "আমি কোনোদিন কার্ড দিয়ে দাওয়াত করার পক্ষপাতিত্ব ছিলাম না। ঈদের কোলাকুলি করে, নামাজ পড়ে চোখে চোখ রেখে ঈদের শুভেচ্ছা দেওয়ার মধ্যেই আনন্দ পাই। মানুষের বাসায় ঘোরাঘুরি, খাওয়া দাওয়া করা এসবেই অভ্যস্ত। গান বাজনা নাটক এসব নিয়েই ঈদ কাটত। কার্ড নিয়ে স্মৃতি নেই, এটা একটা ফর্মালিটি।”
কবিতা লিখে চুমকিকে কার্ড পাঠাতেন মীর সাব্বির
ঈদ কার্ডের স্মৃতি দারুণ ‘মিস করেন’ অভিনেত্রী ফারজানা চুমকি। ছেলেবেলায় ঈদের সময় এই অভিনেত্রীর ঝুলিও ভরেছে কার্ডে।
তিনি বলেন, “এখন অনেকে মোবাইলে কার্ড বানিয়ে পাঠায় কিন্তু আমরা যখন ছোট ছিলাম তখন এই কার্ড কিনতে পাওয়া যেত। ঈদকার্ড, ভিউকার্ড, মিউজিককার্ড, ডায়েরি, ক্যালেন্ডার ঈদের জন্য এমন অনেক কিছু বের হত। মিউজিক কার্ড খুললে ঈদ মোবারক মিউজিক বাজাত, এমন কার্ডও পেয়েছি।”
ফুল দিয়ে কার্ড নিজেও তৈরি করতেন অভিনেত্রী।
"ফুল দিয়ে ডাইরির পেজ কেটে আমিও কার্ড তৈরি করতাম। পছন্দের মানুষদের পাঠাতাম। এখন সেই কার্ডের চল উঠে গেছে। সবাই এত বেশি ব্যস্ত থাকে যে ফেইসবুকে পোস্ট দিয়ে ঈদের শুভেচ্ছা জানিয়ে দেয়। ইনবক্সে অনেকে আবার কার্ড পাঠায় কিন্তু হাতে তৈরি সেই কার্ড, ওই সময়ের মজাটা অন্যরকম ছিল। কয়টা কার্ড পেয়েছি সেই হিসাব রাখতাম।
স্বামী মীর সাব্বিরের কাছ থেকে ঈদকার্ড পাওয়ার গল্পও চুমকি বলেছেন গ্লিটজের কাছে।
"সাব্বিরের (মীর সাব্বির) কাছ থেকেও কার্ড গিফট পেয়েছি। সাব্বির সুন্দর করে কবিতা লিখে ছন্দে ছন্দে ঈদের শুভেচ্ছা জানাত।"
স্মরণীয় কোনো স্মৃতি নেই সাদিয়া আয়মানের
বরিশালে গ্রামের বাড়িতে ঈদ কাটাবেন অভিনেত্রী সাদিয়া আয়মান। স্কুলে ছোট থাকতে ঈদকার্ড কেনার স্মৃতি রয়েছে এই অভিনেত্রীর। তবে বড় হয়ে ঈদকার্ড পাওয়ার আনন্দ পাননি তিনি।
সাদিয়া বলেন,"এখন তো ঈদ শুভেচ্ছা অনলাইনে পাই। ঈদকার্ড বড় হওয়ার পরে পাইনি। ছোটবেলায় বরিশালে একটা দোকান ছিল যেখানে অনেক সুন্দর সুন্দর কার্ড পাওয়া যেত। সেই দোকান থেকে কার্ড কিনে ভেতরে কিছু লিখে বন্ধুদের পাঠানো হত। তবে স্মরণীয় কোনো স্মৃতি নেই। এখন অনলাইনেই কার্ড বেশি পাই।"