সমালোচকদের সঙ্গে দ্বিমত প্রকাশ করে শেখ হাসিনা বলেছেন, “আমি তো মনে করি যেটুকু করেছে, চমৎকার করেছে।”
Published : 14 Sep 2022, 08:13 PM
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জীবনী অবলম্বনে নির্মিত ‘মুজিব: একটি জাতির রূপকার’ সিনেমার ট্রেইলার নিয়ে যারা সমালোচনা করছেন, তাদের সাথে মোটেও একমত নন তার মেয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তিনি বলেছেন, “একটা সিনেমাকে সিনেমা হিসাবেই দেখতে হবে। আমি তো মনে করি যেটুকু করেছে, চমৎকার করেছে। আমি যতটুকু দেখেছি এমন মনে হয়েছে।”
গত সপ্তাহে ভারত সফরের অভিজ্ঞতা জানাতে বুধবার এক সংবাদ সম্মেলনে হাজির হন প্রধানমন্ত্রী। সেখানে অন্য অনেক বিষয়ের সঙ্গে ‘মুজিব’ সিনেমার প্রসঙ্গও আসে।
বাংলাদেশ-ভারতের যৌথ প্রযোজনায় বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের ইতিহাসের সবচেয়ে বড় বাজেটের এ সিনেমা নির্মাণ করছেন বলিউডের নির্মাতা শ্যাম বেনেগাল। গত মে মাসে কান চলচ্চিত্র উৎসবের বাণিজ্যিক শাখা মার্শে দ্যু ফিল্মে এ সিনেমার ট্রেইলার প্রকাশ করা হয়।
৩০ সেকেন্ডের ওই ট্রেরার নিয়ে সামাজিক মাধ্যমে নানা আলোচনা সমালোচনা হয়েছে। অনেকেই পর্দার মুজিবের সঙ্গে বাস্তবের মিল খুঁজে না পেয়ে হতাশা প্রকাশ করেছেন।
এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে ইউএনবি সম্পাদক ফরিদ হোসেন বুধবারের সংবাদ সম্মেলনে জানতে চান, সরকারপ্রধান সিনেমাটি দেখেছেন কি না, ট্রেইলার নিয়ে কিছু কথা এসেছে। আর সিনেমাটি নিয়ে সবার অনেক প্রত্যাশা, কবে সেটা মুক্তি পেতে পারে।
উত্তরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “ট্রেইলার দেখার পর কিছু প্রশ্ন এসেছে। একটা বিষয় আমি বলতে পারি। সেটা হচ্ছে ট্রেইলারটা যদি গ্রহণযোগ্য না হত, তাহলে ফ্রান্সের কান ফেস্টিভালে কোনোদিন কিন্তু গ্রহণ করত না। কাজেই এর কোয়ালিটি নিয়ে আমাদের অনেকেই অনেক কিছু বলতে পারে, এটাও বিবেচনা করতে হবে যে, কান ফেস্টিভাল কিন্তু যা তা গ্রহণ করে না।”
তারপরও কেন এই সিনেমা নিয়ে সমালোচনা ডালপালা ছড়াল, তারও একটা ব্যাখ্যা খুঁজে পেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।
“আমার যেটা মনে হয়েছে, আসলে ৭ মার্চের ভাষণে জাতির পিতাকে ওভাবে দেখার পর সেটাকে অভিনয় করে দেখালে, এটা নিতে অনেকের কষ্ট হয়। এইটা হল সমস্যা। আসলে যখন সিনেমা হবে, তখন কাউকে না কাউকে অভিনয় করতেই হবে। আমি তো মনে করি যেটুকু করেছে, চমৎকার করেছে। আমি যতটুকু দেখেছি এমন মনে হয়েছে।
“আামার-আপনার ভেতরে যিনি আছেন, উনাকে তো ফিরিয়ে আনতে পারব না। ওটা ওভাবে নিয়ে আসাও ঠিক না। একটা সিনেমাকে সিনেমা হিসাবেই দেখতে হবে।”
প্রধানমন্ত্রী বলেন, “ট্রেইলার কানে যাওয়ার আগেই আমাকে পাঠানো হয়েছে। যেখানে যেখানে যা সংশোধন করার, সেটা বলে দিয়েছি। সেটা ‘ওকে’ করার পরেই সেটা নিয়েছে। সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে- এটা যদি প্রেজেন্টেবল না হত, তাহলে কি কান ফেস্টিভালে দেখানো হত?”
শ্যুটিং শেষে এখন সিনেমার সম্পাদনার কাজ চলছে বলে জানান শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, “করোনার কারণে মাঝখানে অনেকদিন শ্যুটিং বন্ধ ছিল। আসলে এই সিনেমার মূল শ্যুটিং ঢাকায় সম্পন্ন হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু করোনার কারণে হয়নি। তারপর বেশিরভাগ শ্যুটিং ওখানেই করে। কিছু শ্যুটিং ঢাকায়ও হয়ে গেছে। এখন এডিটিং চলছে। এডিটিং শেষ হলে একটা ভালো সময়ে এটা আসবে।”
২০২১ সালের জানুয়ারি থেকে মুম্বাইয়ের দাদাসাহেব ফিল্ম সিটিতে এ সিনেমার দৃশ্যধারণ শুরু হয়েছিল; পরে ঢাকাসহ বেশ কয়েকটি এলাকায় দৃশ্যধারণ করা হয়।
এ সিনেমায় বঙ্গবন্ধুর ভূমিকায় অভিনয় করছেন আরিফিন শুভ। বঙ্গবন্ধুর স্ত্রী ফজিলাতুন নেছা মুজিবের চরিত্রে নুসরাত ইমরোজ তিশা, শেখ হাসিনার চরিত্রে নুসরাত ফারিয়া, তাজউদ্দীন আহমদের চরিত্রে রিয়াজ আহমেদসহ আরও অনেকে এতে অভিনয় করছেন।
প্রধান চরিত্রের অভিনেতার প্রশংসা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “যে অভিনয় করেছে, তাকে কিন্তু অনেক কষ্ট করতে হয়েছে। একটা চরিত্র করতে গেলে, সেই চরিত্রটাকে গ্রহণ করা, সেই সেন্টিমেন্ট তৈরি করা এটা অনেক কঠিন কাজ। আর সেটা যদি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের চরিত্র হয়, সেটা তো আরও কঠিন। তারপরও আমি বলব, এখানে আমাদের যারা অভিনয় করেছে, অত্যন্ত আন্তরিকতার সাথে কাজ করেছে। অনেক বড় বড় অভিনেতাও কিন্তু তা পারে না।”