Published : 05 Apr 2025, 03:26 PM
‘ওম শান্তি ওম’ সিনেমার একটি দৃশ্যের জন্য বলিউড তারকা শাহরুখ খানের বিরুদ্ধে শতকোটি টাকার ক্ষতিপূরণ চেয়ে মানহানির মামলা করেছিলেন প্রয়াত অভিনেতা মনোজ কুমার। পরে শাহরুখ মনোজের কাছে ক্ষমা চাইলেও বিষয়টি গড়িয়েছিল তিক্ততার দিকেই।
মনোজের মৃত্যুর পর বলিউডে ঢালাওভাবে অভিনয় শিল্পী নির্মাতারা শোক প্রকাশ করলেও তাৎক্ষণিকভাবে চুপ ছিলেন শাহরুখ।
পরে শাহরুখ এক্সে শোকবার্তা জানিয়েছেন বলে লিখেছে এনডিটিভি।
শাহরুখ লিখেন, “মনোজ কুমার এমন সব সিনেমা তৈরি করেছেন, যা আমাদের দেশকে, ভারতীয় সিনেমাকে সমৃদ্ধ করেছে। এবং ভীষণ আন্তরিকতার সাথে সিনেমার মাধ্যমে একতার বার্তা দিয়েছেন। তিনি একজন প্রকৃত কিংবদন্তি।”
Manoj Kumar ji made films that uplifted our country, our cinema, and focused on unity with unmatched sincerity. A legend in every sense. His films shaped an era and left a mark on our cinema. Thank you, sir. You will always be ‘Bharat’ to us.
— Shah Rukh Khan (@iamsrk) April 4, 2025
মনোজের তৈরি সিনেমাগুলি বলিউডে এক নতুন অধ্যায় তৈরি করেছিল জানিয়ে শাহরুখ লিখেন, “সেই প্রভাব আজও বহাল রয়েছে। আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ স্যার। আপনি চিরকাল আমাদের কাছে ‘ভারত’ হয়েই থাকবেন।”
মনোজ-শাহরুখের মনোমালিন্যের সূত্রপাত ২০০৭ সালে ‘ওম শান্তি ওম’ সিনেমা নিয়ে। সিনেমার নির্মাতা ফারাহ খান, আইনি জটিলতায় জড়িয়েছিলেন তিনিও। এই সিনেমা দিয়েই দীপিকা পাড়ুকোনের বলিউডে অভিষেক হয়েছে।
মনোজ কুমার অনেক সময় কপালে হাত দিয়ে কথা বলতেন। ওই সিনেমার একটি দৃশ্যে শাহরুখ ঠিক মনোজের অনুকরণ করেছিলেন, যা হাস্যরস তৈরি করেছিল।
মনোজ এই বিষয়টিকে ‘অসম্মানজনক’ মনে করেছিলেন, তার কাছে মনে হয়েছিল শাহরুখ ও ফারাহ দুজনে মিলে তাকে ‘ব্যঙ্গ করেছেন’। নির্মাতা টিমকে ওই দৃশ্য সরিয়ে ফেলারও অনুরোধ করেন মনোজ। যদিও নির্মাতারা সেই অনুরোধ কানে তোলেননি।
ওই সময় শাহরুখ বিষয়টির জন্য দুঃখ প্রকাশ করে সংবাদিকদের বলেন, “আমি ভুল ছিলাম। মনোজজি যদি আঘাত পেয়ে থাকেন তাহলে আমি ক্ষমা চাইছি। আমি তাকে ফোন করেছিলাম। তিনি আমাকে প্রথম যে কথাটি বললেন, সেটা হল, ‘এটা কোনো বড় ব্যাপার নয়, বাবা’।”
শাহরুখের ভাষ্য ছিল, “মনোজজি আমাকে আরো বলেন, ‘মানুষ প্যারোডি করেন, এটাও তেমন হয়েছে’।”
শাহরুখ বলেছিলেন, “আমার সাবধান থাকা উচিত ছিল। আমার আগেই তাকে দৃশ্যটি নিয়ে ফোনে বলা উচিত ছিল।”
সেই সময় মনোজ কুমারের আইনি প্রতিনিধি মুকেশ ভাশি বলেছিলেন, “মনোজ কুমার সিনেমর একটি নির্দিষ্ট দৃশ্য দেখে অসন্তুষ্ট হয়েছেন। তিনি আমাকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন, কোনো আইনি পদক্ষেপ নেওয়া সম্ভব কী না।
"ভারতীয় দর্শকরা মনোজ কুমারকে একজন আইকন হিসেবে মানে। সেই আইকনকে আহত করা হয়েছে, উপহাস করা হয়েছে। আইনি পদক্ষেপের চেয়ে নৈতিক পদক্ষেপ বেশি গুরুত্বপূর্ণ।"
২০১৩ সালে মনোজ কুমারের ‘বিতর্কিত দৃশ্যটি’ অক্ষত রেখে জাপানে ‘ওম শান্তি ওম’ ফের মুক্তি পেলে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে পরিবেশ।
তখন মনোজ কুমার আইনি পথ বেছে নেন। শাহরুখ খান ও ফারাহ খানের বিরুদ্ধে মানহানির মামলা ঠুকে দেন মনোজ। আন্তর্জাতিক সংস্করণে দৃশ্যটি অন্তর্ভুক্ত করার জন্য তিনি ১০০ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দাবি করেন মামলায়।
তার আইনি টিম বলেছিলেন, শাহরুখ প্রতিশ্রুতি দিয়েও কোনো ‘মিমাংসা করেননি’ ব্যাপারটা নিয়ে।
সেই সময় সাংবাদিকদের সাথে কথা বলার সময়, মনোজ কুমার তার হতাশা চেপে রাখেননি।
তিনি বলেন, “সিনেমাটি জাপানে মুক্তি দেওয়া হয় সেই দৃশ্যগুলি মুছে না ফেলেই। আমি দুবার ক্ষমা করেছিলাম কিন্তু এবার আর নয়। তারা আমাকে অসম্মান করেছে। তারা আদালত অবমাননারও সম্মুখীন হবে কারণ ২০০৮ সালে আদালত তাদের সমস্ত প্রিন্ট এবং সম্প্রচার সামগ্রী থেকে চিরতরে ওই দৃশ্য মুছে ফেলতে বলেছিল।"
এর কয়েক বছর পর অবশ্য মনোজ মামলাটি প্রত্যাহার করার সিদ্ধান্ত নেন। পরেও মনোজ হতাশা প্রকাশ করে বলেছিলেন, তিনি শাহরুখ ও ফারাহ খানের কাছ থেকে যে জবাবদিহিতা আশা করেছিলেন, সেটি পাওয়া যায়নি।
গত ২১শে ফেব্রুয়ারি মনোজকে মুম্বাইয়ের কোকিলাবেন ধীরুভাই আম্বানি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে তিনি হৃদরোগে আক্রান্ত হন, এছাড়া লিভার সিরোসিসও ছিল মনোজের।
এই দুই কারণেই কোকিলাবেন ধীরুভাই আম্বানি হাসপাতালে শনিবার গভীর রাতে অভিনেতার মৃত্যু হয়েছে বলে হাসপাতালের দেওয়া অভিনেতার মৃত্যুসনদে বলা হয়েছে।
মনোজ কুমারের প্রয়াণে শোক জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ও পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। শোক প্রকাশ করেছেন হিন্দি সিনেমা জগতের অভিনয়শিল্পী, নির্মাতা থেকে শুরু করে বিভিন্ন অঙ্গনের তারকারা।
দেশাত্মবোধক সিনেমায় মনোজের অভিনয় সব সময় আলোচনায় ছিল।
মনোজ সম্পর্কে বলা হয় ‘দেশ আর দেশপ্রেমই’ ছিল তার অভিনয়ের বড় পরিচয়।
‘পূর্ব পশ্চিম’, ‘রোটি কাপড়া আউর মকান’, ‘ক্রান্তি’র মত সিনেমাগুলোয় মনোজের নামের সঙ্গে জুড়ে দিয়েছিল দেশের পরিচয়। তাই তিনি ‘ভারত কুমার’ উপাধিতে সম্মানিত হয়েছিলেন।
১৯৯২ সালে পদ্মশ্রী সম্মানে সম্মানিত করা হয় মনোজ কুমরাকে। ২০১৬ সালে দাদাসাহেব ফালকে পুরস্কার পেয়েছিলেন তিনি।