‘দেশ আর দেশপ্রেমই’ ছিল তার অভিনয়ের বড় পরিচয়।
Published : 04 Apr 2025, 04:23 PM
ভারতের বলিউড ইন্ডাস্ট্রির দেশাত্মবোধক সিনেমার তারকাভিনেতা ও পরিচালক মনোজ কুমার মারা গেছেন।
এনডিটিভি লিখেছে, বার্ধক্যের নানা জটিলতায় ভুগছিলেন মনোজ, তার বয়স হয়েছিল ৮৭। আর দুই মাস পর ৮৮তম জন্মদিন উদযাপনের কথা ছিল এই অভিনেতার।
গত ২১শে ফেব্রুয়ারি মনোজকে মুম্বাইয়ের কোকিলাবেন ধীরুভাই আম্বানি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে তিনি হৃদরোগে আক্রান্ত হন, এছাড়া লিভার সিরোসিসও ছিল মনোজের।
এই দুই কারণেই কোকিলাবেন ধীরুভাই আম্বানি হাসপাতালে শুক্রবার গভীর রাতে অভিনেতার মৃত্যু হয়েছে বলে হাসপাতালের দেওয়া অভিনেতার মৃত্যুসনদে বলা হয়েছে।
অভিনেতার ছেলে কুনাল জানিয়েছেন, শুক্রবার রাত সাড়ে তিনটায় তার বাবা এই পৃথিবী ছেড়ে চলে গেছেন।
“তিনি দীর্ঘ সময় ধরে অসুস্থ ছিলেন। শারীরিক সমস্যার সঙ্গে কঠিন লড়াই করেছেন তিনি।”
কুনাল বলেছেন শনিবার সকালে মনোজ কুমারের শেষকৃত্য সম্পন্ন হবে মুম্বাইয়ের পবন হংসে।
মনোজ কুমারের প্রয়াণে শোক জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ও পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। শোক প্রকাশ করেছেন হিন্দি সিনেমা জগতের অভিনয়শিল্পী, নির্মাতা থেকে শুরু করে বিভিন্ন অঙ্গনের তারকারা।
দেশাত্মবোধক সিনেমায় মনোজের অভিনয় সব সময় আলোচনায় ছিল।
মনোজ সম্পর্কে বলা হয় ‘দেশ আর দেশপ্রেমই’ ছিল তার অভিনয়ের বড় পরিচয়।
‘পূর্ব পশ্চিম’, ‘রোটি কাপড়া আউর মকান’, ‘ক্রান্তি’র মত সিনেমাগুলোয় মনোজের নামের সঙ্গে জুড়ে দিয়েছিল দেশের পরিচয়। তাই তিনি ‘ভারত কুমার’ উপাধিতে সম্মানিত হয়েছিলেন।
১৯৯২ সালে পদ্মশ্রী সম্মানে সম্মানিত করা হয় মনোজ কুমরাকে। ২০১৬ সালে দাদাসাহেব ফালকে পুরস্কার পেয়েছিলেন তিনি।
পরিচালক অশোক পণ্ডিত বলেন, “কয়েক বছর ধরেই অসুস্থ ছিলেন মনোজ। বলিউড তার অভাব অনুভব করবে।”
বলিউড তারকা অক্ষয় কুমার এক্সে শোক জানিয়ে লিখেছেন, “আমি তার কাছ থেকে শিখেছি, দেশের প্রতি ভালোবাসা ও গর্ব কেমন হয়। আমরা অভিনেতারা যদি এই আবেগ প্রকাশে সামনে না এগিয়ে আসি, তাহলে কে আসবে? ভীষণ ভালো মানুষ ছিলেন তিনি। মনোজ স্যারের প্রতি শ্রদ্ধা। ওম শান্তি, আমি মর্মাহত।"
আমির খান লিখেছেন সোশাল মিডিয়ায় লিখেছেন, "মনোজ কুমার শুধুমাত্র একজন অভিনেতা বা পরিচালক ছিলেন না, তিনি নিজেই একজন প্রতিষ্ঠান।"
আমিরের ভাষ্য, মনোজের সিনেমা তাকে অনেক কিছু শিখিয়েছে।
"তিনি বরাবর সেইসব সিনেমাতেইই কাজ করেছেন যেখানে সামাজিকবার্তা দেওয়ার সুযোগ ছিল। আর সেই কারণেই সাধারণ মানুষের মনে সহজেই জায়গা করে নিয়েছিলেন অভিনেতা। তার প্রয়াণে আমি গভীরভাবে শোকাহত।"
বলিউড তারকা অজয় দেবগণ বর্ষীয়ান অভিনেতার মৃত্যুতে শোকজ্ঞাপন করে পুরনো স্মৃতি স্মরণ করেছন।
অজয়ের কথায়, মনোজ কুমার শুধুমাত্র একজন সিনেমাটিক আইকন ছিলেন তাই নয়।
"তিনি ব্যক্তিগত ভাবে আমাদের পরিবারের অন্যতম স্তম্ভ ছিলনে। আমার বাবা বীরু দেবগণকে তিনিই প্রথম একজন অ্যাকশন ডিরেক্টর হিসাবে ‘রোটি কাপড়া অউর মকান’ সিনেমায় কাজের সুযোগ দেন। সেই থেকে ‘ক্রান্তি’ পর্যন্ত তার সঙ্গে বাবা টানা কাজ করে গিয়েছেন। তার ‘উপকার’,’পূরব অউর পশ্চিম’, ‘শোর’, ‘ক্রান্তির' মত সিনেমাগুলোকে কেবল সিনেমা বলা যায় না। এগুলো এক একটা আবেগ, দেশাত্মবোধের আবেগ।"
সিনেমা জগত মনোজ কুমারের মতো দেশপ্রেমী, গল্পবলিয়ে অভিনেতা, চিত্র পরিচালকের অবদান চিরকাল স্মরণ করবে বলে জানিয়েছেন অজয়। ।
অভিনেতা মনোজ বাজপেয়ী সোশাল মিডিয়ায় শোকবার্তায় লিখেছেন, "হিন্দি সিনেমার স্তম্ভ মনোজ কুমার সাহেবকে আমরা হারালাম। তিনি যেভাবে দেশপ্রেমকে নিজের ছবিতে হৃদয় দিয়ে অনুভব করেছেন তা আমার মতে আর কেউ করেননি।"
শোকবার্তায় প্রয়াত অভিনেতাকে স্মরণ করে পরিচালক অভিনেতা ফারহান আখতার লিখেছেন, "'ওহ কৌন থি’, ‘গুমনাম’, ‘উপকার’,’ক্রান্তি’-তার সফল সিনেমার তালিকা বলে শেষ করা যাবে না। নিজের কাজ ও অভিনয়ের মাধ্যমে পরবর্তী প্রজন্মকে অনুপ্রাণিত করার জন্য মনোজ কুমারকে অসংখ্য ধন্যবাদ।"
লেখক মনোজ মুনতাশির সোশাল মিডিয়ায় লিখেছেন, “আমার নাম আপনার নামের সঙ্গে মিলে যায়, এজন্য আমি সারা জীবন গর্বিত ছিলাম এবং থাকব। আপনার সিনেমাগুলো দেশপ্রেমের প্রথম পাঠ শিখিয়েছিল। বিদায় আমার বীর! ওম শান্তি!"
মনোজকে দূরদর্শী পরিচালক হিসেবে বর্ণনা করেছেন পরিচালক বিবেক রঞ্জন অগ্নিহোত্রী।
তিনি বলেন, “মনোজটি ভারতীয় সিনেমাকে নতুন ব্যাকরণ শিখিয়েছেন। তিনি দেশভক্তির সিনেমা বানিয়েছেন, দেশভক্তির গান বানিয়েছেন। যা ভারত স্মরণ করে যাবে চিরকাল।”
পাকিস্তানের অ্যাবোটাবাদে ১৯৩৭ সালে জন্মগ্রহণ করেন মনোজ কুমার। তার আসল নাম ছিল হরিকৃষ্ণন গোস্বামী। দেশভাগের সময় ১৯৪৭ সালে পরিবারের সঙ্গে নিজেদের ভিটামাটি ছেড়ে ভারতে চলে আসতে হয়েছিল প্রয়াত অভিনেতাকে। বেশ কিছু দিন কাটাতে হয়েছিল শরণার্থীদের শিবিরে। জীবনের ওই অভিজ্ঞতার ছাপ তিনি রেখেছিলেন তার সিনেমায়।
১৯৫৭ সালে মনোজ ‘ফ্যাশন’ সিনেমা দিয়ে বলিউডে পা রাখেন, বয়স তখন তার মাত্র ২০।
মনোজের জনপ্রিয়তা আসে ১৯৬১ সালে মুক্তি পাওয়া সিনেমা ‘কাচ কি গুড়িয়া’ দিয়ে। এই সিনেমাটি বলিউডে তার পায়ের নিচে মাটি শক্ত করে দেয়।
মনোজ অভিনীত ‘গুমনাম’ ছিল ১৯৬৫ সালের রেকর্ড আয় করা সিনেমা। মনোজ কুমারকে শেষ বড় পর্দায় দেখা গেছে ১৯৯৫ সালে ‘ময়দান-ই-জংগ’ সিনেমায়।