দিতিকন্যা লামিয়ার 'মেয়েদের গল্প'র নির্বাহী প্রযোজক বাঁধন

লামিয়া চৌধুরী, আজমেরী হক বাঁধন, পারভীন সুলতানা দিতি

অভিনেত্রী পারভীন সুলতানা দিতি ও অভিনেতা সোহেল চৌধুরীর কন্যা লামিয়া চৌধুরী আত্মপ্রকাশ করতে যাচ্ছেন নির্মাতা হিসেবে।

‘মেয়েদের গল্প’ শিরোনামে একটি সিনেমা নির্মাণ করছেন তিনি, যার নির্বাহী প্রযোজক হিসেবে যুক্ত হয়েছেন অভিনেত্রী আজমেরী হক বাঁধন।

বাঁধন গ্লিটজকে বলেন, "নামটা শুনেই বোঝা যাচ্ছে, এটা মেয়েদের নিয়ে একটি গল্প, যে ধরনের গল্পতে আমি বরাবরই আগ্রহী। আমি গত দুই বছর ধরেই বলছিলাম, মিডিয়াতে মেয়েদের গল্প খুবই কম। শুধু গল্প নয়, নির্মাণও খুব কম। তাই আমি খুব চাইছিলাম মেয়েদের নিয়ে গল্প যেন বাড়ে। আমার মেয়েদের গল্প নিয়ে কাজ করার ইচ্ছে অনেক আগে থেকেই। কিন্তু রাইটার, পরিচালক হওয়া আমার কাছে কঠিন ব্যাপার বলে মনে হয়। যেটা আমি কখনো পারব বলে মনে হয় না। তাই প্রযোজক হওয়ার কথা আমি ভাবতাম।"

সমাজে প্রাভব ফেলবে এমন গল্পের প্রযোজক হওয়ার ভাবনা আগে থেকেই ছিল বাঁধনের। তিনি বলেন, "যখন প্রযোজক হওয়ার ভাবনা আমার মাথায় এল, তখন আমি নিজেকে প্রশ্ন করতাম, আমি আসলে কোন ধরনের গল্প পছন্দ করব? টাকা বাড়ানোর গল্প? নাকি সমাজে প্রভাব ফেলবে এমন কোনো গল্প? দেখলাম সমাজে প্রভাব ফেলবে এমন গল্পই আমাকে বেশি টানে। ওই জায়গা থেকে আমার সবসময় পরিকল্পনা ছিল একজন মেয়ে নির্মাতার গল্প, মেয়ে রাইটার, মেয়েদের গল্প বলছে এমন কাউকে আমি চাই। লামিয়ার গল্পটা শুনেই আমার বেশ পছন্দ হয়।"

লামিয়া যখন তার পরিকল্পনার কথা জানালেন, প্রথমেই সায় দিয়েছিলেন বাঁধন।

“আমি তখন বললাম, এই কাজটা তো হতে হবে। আমাকে প্রজেক্ট দাও, আমি টাকা জোগাড় করব। যেভাবেই হোক এই প্রজেক্ট করব৷ আমরা প্রায় ছয় মাস ধরে এটা নিয়ে কাজ করছি। আমাদের প্রযোজকও চূড়ান্ত হয়েছে। আমি এটা প্রেক্ষাগৃহের জন্য নির্মাণ করব। এটা কোনো ওটিটিতে মুক্তি দেওয়া হবে না। আমার বিশ্বাস, বাণিজ্যিক সিনেমা হিসেবেই এ সিনেমা হিট করবে। আমি লামিয়ার গল্প, ওর ট্যালেন্ট দেখে মুগ্ধ। আমি এই প্রজেক্ট করতে চাই।"

নারীপ্রধান গল্পের সিনেমা এদেশে কম হয়, তাছাড়া নির্মাতা হিসেবে লামিয়া নতুন। সেক্ষেত্রে কোনো চ্যালেঞ্জ দেখছেন বাঁধন?

উত্তরে তিনি বললেন, "আমি সবসময় অন্য রকম, উল্টো পথে চলতে পছন্দ করি। আমার সাথে সবসময় এটাই হয়ে আসছে। যখন যে পথে চলেছি, সবাই বলেছে এটায় কেন তোমার চলতে হবে? অন্যরা চলে না। তুমি কেন রিস্ক নিচ্ছ? তবে আমি রিস্ক নিতে পছন্দ করি। আমি চাই মেয়েদের গল্প কেউ বলুক।

“আমি লামিয়াকে খুঁজে পেয়ে নিজেকে লাকি মনে করছি। আর একটা জিনিস আমার সাথে ঘটে। সেটা হল আমি যা নিয়ত করি, যেটা ভেবে রাখি, প্রকৃতি আমাকে সেটার ব্যবস্থা করে দেয়৷ আমার কাছ পর্যন্ত পৌঁছে দেয়। আমি যখন দিতি আপুর কবর জিয়ারত করতে যাই, তখন লামিয়ার সঙ্গে এই প্রজেক্টটা নিয়ে কাজের কথা হয়।"

২০২১ সালে মুক্তি পাওয়া ‘রেহানা মরিয়ম নূর’ সিনেমা আলোয় আনে বাঁধনকে।গতবছর অভিনয় করেছেন হিন্দি সিনেমাতেও। 'মেয়েদের গল্প' সিনেমায় অভিনয়শিল্পী হিসেবে তাকে দেখা যাবে?

বাঁধনের জবাব," আমি একটা ক্যামিও চরিত্রে থাকতে পারি। তাছাড়া অভিনয় শিল্পী নিয়ে আমাদের চমক আছে। আমি লিড চরিত্র করব না। খুব ছোট একটা সিন৷ লামিয়ার অনুরোধে।"

২০১৪ সাল থেকে এ সিনেমার গল্প প্রস্তুত করছেন নির্মাতা লামিয়া চৌধুরী। গ্লিটজকে তিনি বললেন, এটা তার জন্য নতুন প্রজেক্ট না।

“আমার এই গল্পটার শুরু আরও ১০ বছর আগে। আমি তখন দেশে ফেরত আসি, মায়ের সঙ্গে বসে গল্পের পরিকল্পনা করি। আমিমা এবং মেয়েদের নিয়ে, তাদের সম্পর্ক নিয়ে, বন্ধুত্ব নিয়ে একটা গল্প করতে চাই। যেটা বাস্তবধর্মী। আমাদের নিজেদের জীবনের নিজেদের অভিজ্ঞতা নিয়ে… এই গল্পের চরিত্রগুলো খুবই বাস্তবিক। তখন মা আমাকে সম্মতি দিল।"

লামিয়া বলেন, "গল্পটা তিনজন মেয়েকে নিয়ে এবং তাদের তিনজন মায়ের গল্প। এই তিনজন মেয়ে, যারা খুবই ভালো বন্ধু। তাদের ১৮ বছর বয়স থেকে গল্পটা শুরু হবে। গল্পের শেষে তাদের বয়স ২৪-২৫ পর্যন্ত যাবে। এই কয়েক বছরে তাদের তিনজনের জীবনে যে ঘটনাগুলো ঘটে, সেগুলো নিয়েই সিনেমা। তাদের বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের গল্প।"

তরুণ এই নির্মাতা জানালেন, সিনেমার গল্প মেয়েদের হলেও ছেলেদের চরিত্রগুলোও গুরুত্বপূর্ণ। এই চরিত্রগুলো তাদের বাবা, ভাই, ভালোবাসার মানুষ।

“আমরা এখনো প্রি প্রোডাকশনের কাজগুলো করছি। গত পাঁচ মাস যাবত সেগুলোর কাজ চলছে। পুরো টিমটা রেডি করছি। গত ১০ বছরে সিনেমার জন্য বেশ কিছু গান বাছাই করেছি। সেই গানগুলো প্রস্তুত। সব মিলিয়ে সব গুছিয়ে শিগগিরই শুটিং শুরু করব।"

তবে অভিনয়শিল্পী সবাইকে এখনো চূড়ান্ত করা হয়নি জানিয়ে লামিয়া বলেন, " নতুন, পরিচিত অনেক শিল্পীই এই সিনেমায় থাকবে। চরিত্রগুলোর অডিশন চলছে। চূড়ান্ত হলে একটা ঘোষণার মাধ্যমে সকলকে জানানো হবে। শুধু এতোটুকু জানিয়ে রাখি, আমরা একটা ভিন্ন কিছু করছি, এটা সবাই দেখবে খুব প্রশংসা করবে।"