আফগানিস্তানে গোপনে জেনিফার লরেন্সের ডকুমেন্টারি

২০২১ সালে তালেবান আফগানিস্তান দখলে নেওয়ার পরের দিনগুলোতে তিন নারীর ঘটনাপ্রবাহ উঠে এসেছে এই ডকুমেন্টারিতে।

গ্লিটজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 21 May 2023, 10:03 AM
Updated : 21 May 2023, 10:03 AM

ঘটনা কোনো এক গাড়ির ভেতর। এক আফগান তরুণী এক তালেবান যোদ্ধাকে বলছিলেন, ‘আপনারা শুধু নারীদের নির্যাতন করেন’। সঙ্গে সঙ্গে চেঁচিয়ে উঠে তালেবান যোদ্ধার হুঙ্কার- ‘তোমাকে কথা বলতে বারণ করেছি। নাহলে এখানেই মেরে ফেলব!’

এরপর গলা আরও উঁচিয়ে ওই নারী বলে ওঠেন, “আমাকে মেরেই ফেলুন! আপনার স্কুল আর বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ করে দিয়েছেন, এর চেয়ে মরে যাওয়াই ভালো!”

তাদের এই বাদানুবাদ ধরা পড়েছে মোবাইল ফোনের ক্যামেরায়, গোপনে। আর সেই ঘটনা ক্যামেরাবন্দি করা যে সহজ ছিল না, ফোনের কাঁপাকাপিতেও তা স্পষ্ট।

আফগানিস্তানে তালেবানের কঠোর শাসনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে গিয়ে ওই নারী গ্রেপ্তার হয়েছিলেন। এরপর তাকে রাখা হয়েছিল কাবুলের একটি সেলে।

বিবিসি লিখেছে, অস্ত্রধারী তালেবান যোদ্ধার সঙ্গে ওই তরুণীর বাকযুদ্ধের সেই ক্ষণ যে কাউকে নাড়িয়ে দেবে, যেটা মূলত ‘ব্রেড অ্যান্ড রোজেস’ ডকুমেন্টারির একটি দৃশ্য। অস্কারজয়ী অভিনেত্রী জেনিফার লরেন্স এর প্রযোজনা করেছেন।

২০২১ সালে তালেবান আফগানিস্তানের দখল নেওয়ার পরের সপ্তাহগুলোতে তিন নারীর প্রাত্যহিক জীবনের চিত্র ফুটে উঠেছে এই ডকুমেন্টারিতে ।

‘ব্রেড অ্যান্ড রোজেস’ এর একটি দৃশ্যে সাহসী আফগান সেই নারীর সঙ্গে তালেবান যোদ্ধার বাদানুবাদের সেই মুহূর্তটি কেন তাৎপর্যপূর্ণ, বিবিসিকে সেই কথা জানিয়েছেন জেনিফার লরেন্স।

তিনি বলেন, “তালেবানকে এই নারীদের উপেক্ষা করা দেখে আমার হৃদকম্পন বেড়ে যাচ্ছিল। নারীরা লড়াই করছে, আপনারা গল্পের এই দিকটা দেখতে পাচ্ছেন না, এটাই আমাদের চলচ্চিত্রের গুরুত্বপূর্ণ অংশ।”

বিবিসিকে লরেন্স বলেন, “আফগান নারীদের হঠাৎ নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলার ভাবনটা খুবই দুঃসহ। নিজ দেশে তাদের নিজেদের কোনো স্বাধীনতা নেই। তাদের জীবনের গল্প তাদের নিজেদের মত করে ডকুমেন্টারিতে তুলে আনতে সুযোগ দেওয়াটা অনেক গুরুত্বপূর্ণ।”

এই ডকুমেন্টারি তৈরি করেছে প্রযোজনা কোম্পানি ‘এক্সলিন্টে ক্যাডাভার’। ২০১৮ সালে লরেন্স এবং তার বন্ধু জাস্টিন সিয়ারোচি এটি প্রতিষ্ঠা করেন।

তালেবানকে হটিয়ে ২০০১ সালে আফগানিস্তানের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছিল মার্কিন নেতৃত্বাধীন সামরিক জোট। দুই দশক পর সেখান থেকে পর্যায়ক্রমে সেনা প্রত্যাহার শুরু হলে ধীরে ধীরে নিয়ন্ত্রণ ফিরে পায় সশস্ত্র গোষ্ঠী তালেবান।

এরপর আফগানিস্তান থেকে সম্পূর্ণভাবে সেনা সরিয়ে নিলে ২০২১ সালের ১৫ অগাস্ট কাবুল দখল করে তালেবানরা। সরকার গঠন করে ফের তারা তদের কট্টর ইসলামিক শাসন শুরু করে। নারী শিক্ষা ও চলাফেরায় লাগাম টেনে তাদের জন্য স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের পথ বন্ধ করে দেওয়া হয়।

এসব বিষয় নিয়ে গণমাধ্যমে আসা সংবাদ দেখে হতাশা আর অসহায় বোধের কথা বিবিসিকে জানান হলিউডের জনপ্রিয় অভিনেত্রী জেনিফার লরেন্স।

তিনি বলেন, আফগান নারীদের নিয়ে তৈরি করা ডকুমেন্টারি ‘ব্রেড অ্যান্ড রোজেস’ আবেগ আর সময়ের প্রয়োজনের জায়গা থেকেই তৈরি করা হয়েছে।

তার বন্ধু জাস্টিন সিয়ারোচি বিবিসিকে বলেন, ২০২১ সালে কাবুলের পতনে হতভম্ব হয়ে পড়েছিলেন লরেন্স। কারণ সেখানে নারীদের পরিস্থিতি ছিল খুবই ভয়াবহ।

“ও বলেছিল, তাদের এই গল্প অর্থপূর্ণ উপায়ে তুলে ধরার জন্য সেখানে কাউকে আমাদের একটি প্ল্যাটফর্ম দিতে হবে।”

সেই ব্যক্তি ছিলেন সাহারা মনি, যিনি একজন ডকুমেন্টারি নির্মাতা এবং স্বাধীন কাবুল প্রযোজনা সংস্থা ‘আফগান ডক হাউস’ এর সহ-প্রতিষ্ঠা। তিনিই ‘ব্রেড অ্যান্ড রোজেস’ পরিচালনা করেছেন।

মনি আগেই একটি কাজ শুরু করেছিলেন। তালেবান আফগানিস্তান দখলের পর তিনি তিনজন নারীকে অনুসরণ করছিলেন। এরপর লরেন্সের বন্ধু সিয়ারোচি সাহারা তাদের কাজের জন্য মনিকেই খুঁজে নেন।

ওই নারীরা নিজ দেশে নিজেদের একধরনের স্বায়ত্তশাসন প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করছিলেন। কারণ নারীদের জন্য স্কুল আর বিশ্ববিদ্যালয়গুলো বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল।

সাহারা মনি গোপন ক্যামেরা ব্যবহার করে তাদের ভিডিও ধারণ করেন। একটি সেইফহাউজে বন্ধুবান্ধব ও পরিবারের সঙ্গেও তাদের কিছু দৃশ্য ধারণ করা হয়।