মঙ্গলবার মধ্যরাতের ফাইনাল ম্যাচে সালাউদ্দীন লাভলু এবং দীপঙ্কর দীপনের দলের খেলোয়াড়দের বনিবনা না হওয়ায় আয়োজক কমিটি আসরের ফাইনাল ম্যাচ স্থগিত ঘোষণা করে।
Published : 18 Oct 2023, 10:45 AM
খেলোয়াড়দের গণ্ডগোলে আবারও স্থগিত করা হয়েছে তারকাদের ক্রিকেট খেলার আসর 'সেলিব্রেটি ক্রিকেট লিগ'।
মঙ্গলবার মধ্যরাতের ফাইনাল ম্যাচে সালাউদ্দীন লাভলু এবং দীপঙ্কর দীপনের দলের খেলোয়াড়দের বনিবনা না হওয়ায় আয়োজক কমিটি আসরের ফাইনাল ম্যাচ স্থগিত ঘোষণা করে।
এর আগে স্থগিত হওয়া এই লিগের খেলা মঙ্গলবার শুরু হয়েছিল অব্যবস্থাপনার মধ্য দিয়েই। এদিন নির্ধারিত প্রথম ম্যাচ খেলতে মাঠে আসেনি রায়হান রাফির নেতৃত্বাধীন দলের কেউ। বিকেল ৫টা নাগাদ প্রথম পর্বের খেলা শেষ হয় এবং বিরতির পর সন্ধ্যায় শুরু হয় সেমিফাইনাল।
প্রথম সেমিফাইনালে চয়নিকা চৌধুরীর দলকে হারিয়ে ফাইনাল নিশ্চিত করে দীপঙ্কর দীপনের দল। দ্বিতীয় সেমিফাইনালে সকাল আহমেদের দলকে হারিয়ে ফাইনালে ওঠে সালাউদ্দীন লাভলুর দল।
মূলত দ্বিতীয় সেমিফাইনাল থেকেই শুরু হয় বিপত্তি, হঠাৎ থেমে যায় খেলা। দুই ঘণ্টার বেশি সময় দুই দলের খেলোয়াড়রা মাঠে থাকলেও খেলা শুরু হয়নি।
সালাউদ্দীন লাভলুর দলে তালিকার বাইরের খেলোয়াড় মাঠে নামানোয় আপত্তি তোলে সকাল আহমেদের দল।
পরে বিষয়টি মীমাংসা হলে রাত সাড়ে ১২টায় সেমিফাইনালের ম্যাচটি হয়, তাতে সকাল আহমেদের দলকে হারিয়ে ফাইনালে ওঠে সালাউদ্দীন লাভলুর দল।
ফাইনাল ম্যাচে গিয়ে একই রকম ঘটনার পুনরাবৃত্তি হয়। রাত ২টায় খেলা পরিচালনা কমিটির মিডিয়া সমন্বয়ক অর্ণিল গ্লিটজকে বলেন, "দুই দলের মাঝে বনিবনা না হওয়ায় ফাইনাল ম্যাচটি স্থগিত করা হয়েছে।"
কবে ম্যাচটি হবে? অর্ণিল বলেন, "এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত হলে সবাইকে জানানো হবে।"
একাধিক খেলোয়াড়ের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ফাইনাল ম্যাচে দুই দলেই একজন করে খেলোয়াড় অংশ নেন, যারা এর আগে কর্পোরেট লিগে খেলেছেন। নিয়ম অনুযায়ী, কর্পোরেট লিগে যারা খেলেছেন তারা সিসিএল খেলতে পারবেন না।
ফাইনাল ম্যাচে আপত্তি আসে রাব্বি ও অন্তু নামে দুজন খেলোয়াড়কে নিয়ে, যারা কর্পোরেট লিগে খেলেছেন। তাদের বাদ দেওয়াকে কেন্দ্র করেই বনিবনা না হওয়ায় ফাইনাল ম্যাচ স্থগিত করা হয়।
ফাইনাল ম্যাচ স্থগিতের পর চিত্রনায়ক সাইমন সাদিক বলেন, "এ বিষয়টা অস্বস্তিকর পর্যায়ে এসে গেছে। সেলিব্রেটিদের নিয়ে সাধারণ মানুষের মাঝে নেতিবাচক ধারণা পোষণ করার সুযোগ আমরা করে দিলাম। ফাইনাল ম্যাচটি হয়ে যেতে পারত।"
মারামারির কারণে বন্ধ হওয়া ‘সেলিব্রেটি ক্রিকেট লিগ’ মঙ্গলবার মাঠে গড়ায় ঠিকই, তবে দিনের শুরু থেকেই অব্যবস্থাপনায় অনেকটাই প্রাণহীন ছিল বিনোদন তারকাদের এই খেলার আসর।
খেলার অব্যবস্থাপনা নিয়ে কথা বলার জন্য আয়োজক প্রতিষ্ঠান জি নেক্সটের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মাসুদুর রহমানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি। কমিটির একাধিক সদস্যের সঙ্গে মাঠে কথা বলতে চাইলে তারা মন্তব্য করতে রাজি হননি।
বিশ্বকাপ ক্রিকেটে বাংলাদেশ দলকে উৎসাহ যোগাতে ঢাকার মিরপুর ইনডোর স্টেডিয়ামে তিন দিনের এ প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছিল ২৮ সেপ্টেম্বর। পরদিন রাতের খেলায় মারামারির পর তা বন্ধ রাখা হয়।
২৯ সেপ্টেম্বর রাতে লিগের একটি খেলা শেষে উভয় দলের খেলোয়াড়দের মধ্যে পাল্টাপাল্টি বক্তব্যের জের ধরে উত্তেজনা তৈরি হয়, যা পরে মারামারিতে গড়ায়। এ নিয়ে তারকাদের অনেকেই একে অপরের বিরুদ্ধে হামলার অভিযোগ আনেন।
পরদিন সংবাদ সম্মেলন করে খেলা সাময়িক স্থগিত করে আয়োজক কমিটি। একই সঙ্গে মারামারিতে জড়িতদের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়। তবে মামলায় কতজনকে আসামি করা হয়েছে, তা প্রকাশ করেনি আয়োজক প্রতিষ্ঠান।
মঙ্গলবার খেলার মাঠে কয়েকজন খেলোয়াড়ের সঙ্গে আলাপে জানা যায়, মারামারিতে জড়িত কয়েকজন খেলোয়াড়কে মঙ্গলবারের খেলা থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। তাদের মধ্যে রয়েছেন চিত্রনায়ক শরীফুল রাজ, পরিচালক নঈম ইমতিয়াজ নিয়ামূল, মোহন আহমেদ, চিত্রনায়িকা রাজ রীপা ও সোহাগ রানা।
গত ৩ অক্টোবর সন্ধ্যায় গুলশানের একটি রেস্তোরাঁয় আয়োজক প্রতিষ্ঠান জি নেক্সট ও টুর্নামেন্টের আট দলের অধিনায়কদের বৈঠকে ‘সর্বসম্মতিক্রমে’ এমন সিদ্ধান্ত হয়েছে।
তবে সেদিনের ঘটনার পর ফেইসবুকে পোস্ট করে সিসিএল বয়কটের ঘোষণা দিয়েছিলেন রাজ রীপা। এ চিত্রনায়িকার ভাষ্য, তিনিই সিসিএল বয়কট করেছেন।
মঙ্গলবার খেলায় মাঠে ছিলেন সালাউদ্দীন লাভলু, দীপঙ্কর দীপন, চিত্রনায়ক বাপ্পি, সাইমন সাদিক, রোশান, নাদিয়া, শখসহ অনেক তারকা। অন্যদিকে চঞ্চল চৌধুরী, আফরান নিশো, তমা মির্জা, মেহজাবীন, তাসনিয়া ফারিণসহ জনপ্রিয় তারকাদের মাঠে পায়নি দর্শক।
মোট আটটি দলে ভাগ হয়ে বিনোদন অঙ্গনের তারকা ও কলাকুশলীরা এই খেলায় অংশ নেন। প্রতি দলে নারী-পুরুষ তারকারা অংশ নেন ১৮ জন করে। এসব দলের নেতৃত্বে ছিলেন গিয়াস উদ্দিন সেলিম, সালাহউদ্দিন লাভলু, শিহাব শাহীন, চয়নিকা চৌধুরী, দীপঙ্কর দীপন, সকাল আহমেদ, মোস্তফা কামাল রাজ ও রায়হান রাফী।