প্রিমিয়ারে এমন সাড়া, ‘সাঁতাও’ তবু হল পাবে না?

“কোনো হল থেকেই এখন পর্যন্ত ইতিবাচক সাড়া পাইনি। দেশের মানুষকে সিনেমাটা দেখাতে পারব কি না তা নিয়ে কিছুটা শঙ্কায় আছি,” বললেন নির্মাতা।

গ্লিটজ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 22 Jan 2023, 08:05 AM
Updated : 22 Jan 2023, 08:05 AM

গণ অর্থায়নে নির্মিত স্বাধীন ধারার চলচ্চিত্র ‘সাঁতাও’ এর প্রিমিয়ারে দর্শকের বিপুল আগ্রহ দেখা গেলেও সিনেমার মুক্তি নিয়ে দুশ্চিন্তায় নির্মাতা।

আগামী ২৭ জানুয়ারি ‘সাঁতাও’ মুক্তির ঘোষণা দেওয়া হলেও এখন পর্যন্ত কোনো হল সিনেমাটি চালাতে রাজি হয়নি বলে জানিয়েছেন নির্মাতা খন্দকার সুমন।

শনিবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোরকে তিনি বলেন, “বেশ কিছু জায়গায় যোগাযোগ করেছি। কেউ এখনো হ্যাঁ বলেনি। কোনো হল থেকেই এখন পর্যন্ত ইতিবাচক সাড়া পাইনি। দেশের মানুষকে সিনেমাটা দেখাতে পারব কি না তা নিয়ে কিছুটা শঙ্কায় আছি।”

শুক্রবার ঢাকা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে প্রিমিয়ার শেষেও এমন হতাশার কথা বলতে গিয়ে সুমনের চোখ ভিজে ওঠে।

বিষয়টি নিয়ে স্টার সিনেপ্লেক্স এবং যমুনা ব্লকবাস্টার সিনেমাস কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা বলেন, ‘সাঁতাও’ চালানোর বা না চালানোর কোনো সিদ্ধান্ত এখনো হয়নি। দুয়েক দিনের মধ্যে হয়ত সিদ্ধান্ত হবে। ইতিবাচক সিদ্ধান্ত হলে নির্মাতাকে জানিয়ে শিডিউল দেওয়া হবে।

মধুমিতা হলের কর্ণধার ইফতেখার উদ্দিন নওশাদ বললেন আরও হতাশার কথা।

“সিঙ্গেল স্ক্রিনের দর্শক সাধারণত বাণিজ্যিক ছবি দেখে। সম্প্রতি কয়েকটি সিনেমা চালিয়ে আমরা মারাত্মক লোকসানের মুখে পড়েছি। ভাবছি হল আবার বন্ধ করে দেব। ঈদের আগে কোনো ছবি চালানোর সম্ভাবনাই নেই।”

নির্মাতা খন্দকার সুমন বললেন, রংপুর অঞ্চলের কৃষকদের যাপিত জীবনের ঘটনা নিয়ে নির্মিত সাঁতাও রংপুরের শাপলা সিনেমা হলে মুক্তি পাবে কি না, সে বিষয়েও এখনো কিছু জানায়নি হল কর্তৃপক্ষ।

অথচ শুক্রবার প্রিমিয়ারে দর্শকদের কাছ থেকে আশাতীত ভালো সাড়া মিলেছিল। এত দর্শক হয়েছিল যে, তাদের জায়গা দিতে সিনেমার অনেক কলাকুশলীই সিনেমাটা দেখতে পারেননি। অনেক দর্শক ফিরে গেছেন। ৬৫০ সিট ভরে যাওয়ার পর মেঝেতে, দুই সিটের মাঝে বসে কিংবা দাঁড়িয়ে ৯৭ মিনিটের সিনেমাটি দেখেছেন অনেকে।

সুমন বলেন, “ফিরে যাওয়া দর্শকদের অনেকেই আমাকে বলেছেন, ছবিটা দেখতে না পারলেও তাদের আফসোস নেই। বরং বাংলা সিনেমার জন্য এমন ভিড় দেখে ভালো লেগেছে। তারা হলে গিয়ে দেখবেন।

“শুক্রবার দেখানো হয়েছে সাড়ে তিন জিবির ফাইল। মাল্টিপ্লেক্স বা হলের জন্য প্রস্তুত করেছি ১২০ জিবির ফাইল। ছবিটার আসল কালার, সাউন্ডসহ অনেক কিছুর প্রকৃত ফিল প্রদর্শনীতে পাওয়া যায়নি। বেশ কয়েকজন দর্শক জানিয়েছেন, তারা ছবিটির প্রকৃত স্বাদ পেতে হলে গিয়ে দেখবেন।”

প্রিমিয়ার দেখে অনেক দর্শক সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন।

ফারুক উজ্জামান নামে এক দর্শক হলভর্তি দর্শকের ছবি ও ভিডিও পোস্ট করে লিখেছেন, “বাংলাদেশের কৃষকদের বাস্তবতা নিয়ে অসাধারণ একটি সিনেমা সাঁতাও। কৃষক আছে দেখেই আমরা আছি। তাই এমন ছবি যদি ঢাকায় মুক্তি না পায়, তা আমাদের সমাজের জন্য হতাশা বয়ে আনবে। তবে চিটাগাং এ ২৭শে জানুয়ারি সুগন্ধায় সাঁতাও মুক্তি পাচ্ছে। চিটাগং এর বন্ধুদের প্রতি অনুরোধ থাকবে তারা যেন পরিবার নিয়ে ছবিটি দেখতে যায়।”

ভিডিও পোস্ট করে সাজ্জাদ হোসেন নামে একজন লিখেছেন, “সাঁতাও একটি বিজয়ের নাম!
ভালোবাসার নাম! আমি ভাগ্যবান আমি সাঁতাও দেখেছি।“

মাহফুজ মুন্না লিখেছেন, “অসাধারণ ক্যামেরার ফ্রেমের মাধ্যমে তুলে ধরা হয়েছে প্রতিটা দৃশ্যপট। যেন এক কবিতার প্রতিটা লাইন আপনার চোখের সামনে ভাসছে।”

শামস শাহীন লিখেছেন, “আসন না পেয়ে ফিরে গেল শত শত  দর্শক। বাধ ভাঙা দর্শক জোয়ারে উচ্ছ্বসিত পরিবেশে দর্শক গ্যালারিতে ক্ষণে অশ্রু শিক্ত নয়নে, ক্ষণে হাসির ঝলকে হয়ে গেল আবাহমান বাংলার প্রবাহমান জীবন চিত্র নিয়ে নির্মিত ‘সাঁতাও’ সিনেমার প্রিমিয়ার।”

মীর সামছুল আলম লিখেছেন, “সাঁতাওয়ের টিশার্ট পরে গিয়েই ছবিটি দেখতে পারিনি। হলে ঢুকতে না পেরে ফিরে এসেছি। এখন সিনেমা হলে মুক্তির জন্য অপেক্ষা করছি।”

তপন দেবনাথ লিখেছেন, “খন্দকার সুমন পরিচালিত সাঁতাও সিনেমাটি আজ জাতীয় জাদুঘরে দেখলাম। খুবই ভালো একটি সিনেমা। এই সিনেমাটি সকলকে দেখার জন্য অনুরোধ করছি।

সিনেমাটি দেখতে না পেয়ে ফিরে যাওয়া দর্শকদের জন্য বিশেষ প্রদর্শনীর ব্যবস্থার কথা জানিয়ে খন্দকার সুমন ফেইসবুকে একটি ঘোষণা দিয়েছেন।

তিনি লিখেছেন, “যারা ২০ জানুয়ারি জাতীয় জাদুঘরে এসেও ‘সাঁতাও’ চলচ্চিত্রের শো দেখার সুযোগ পাননি দয়া করে তারা আমাকে জানাবেন। আমি আপনাদের জন্য ২২ জানুয়ারি একটি বিশেষ প্রদর্শনীর ব্যবস্থা করব।

“প্রদর্শনী কোথায় কখন হবে আমি সরাসরি যোগাযোগ করে জানাব। আর ২০ জানুয়ারির মত পরিস্থিতি তৈরি হোক আমরা চাই না। করজোড়ে ক্ষমা প্রার্থনা করছি যেসকল দর্শক সাঁতাও দেখতে পারেননি তাদের নিকট।”

উজানের বাঁধে মরুভূমিতে রূপ নেওয়া ভাটি অঞ্চলের কৃষকের হাত-পা বাঁধা প্রকৃতি আর এলাকার প্রভাবশালীদের কাছে। সেইসব কৃষকদের যাপিত জীবনের যন্ত্রণা আর সংগ্রাম নিয়ে নির্মিত সিনেমা ‘সাঁতাও’।

প্রয়োজক না পেয়ে সিনেমাটি নির্মাণ করা হয়েছে ১৫৫৯ জন মানুষের কাছ থেকে ১০০ টাকা থেকে শুরু করে ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত অর্থ অনুদান নিয়ে। তাই সুমন এটিকে বলছেন গণ অর্থায়নে নির্মিত সিনেমা।   

গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে অভিনয় করেছেন আইনুন পুতুল, ফজলুল হক ও আব্দুল্লাহ আল সেন্টুসহ অনেকে।