শাহরুখ বলেন, “বাড়িতে কেবল একটি ট্রফি কেবিনেট নয়, পুরস্কার রাখার জন্য বিশাল ঘর আছে, যেখানে তিনশর বেশি পুরস্কার রাখা হয়েছে।”
Published : 19 Aug 2024, 03:43 PM
বলিউডকে বহু ‘হিট’ সিনেমা উপহার দেওয়া নায়ক শাহরুখ খানের প্রাপ্তির ঝুলিতে সাফল্য, ভালোবাসার সঙ্গে আছে বহু পুরস্কার ও সম্মাননা। আর সেইসব পুরস্কারের বিষয়ে নিজের দুর্বলতা কতটা, সে কথা জানালেন এই অভিনেতা।
যুক্তরাজ্যের গার্ডিয়ানকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে পুরস্কারের প্রতি নিজের আবেগের কথা প্রকাশ করেছেন শাহরুখ।
পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠান উপভোগ করেন কি না জানতে চাইলে শাহরুখ বলেন, “দারুণ উপভোগ করি, এ ব্যাপারে আমি নির্লজ্জ। আমি পুরস্কার পেতে ভালোবাসি।”
এ ধরনের যে কোনো অনুষ্ঠান পছন্দ জানিয়ে নায়ক বলেন, “তবে বক্তৃতা দিতে গেলে একটু ঘাবড়ে যাই। বিশেষ করে আন্তর্জাতিক পুরস্কারের ক্ষেত্রে। কারণ এ ধরনের আসরে আমাকে নিশ্চিত করতে হয় যে ভারতীয় সিনেমাকে যেন ভালোভাবে তুলে ধরা হয়। আমাকে সেভাবে নিজেকে পরিচয় করাতে হয়। আমার রসকিতা করার স্বভাবটা নিয়ন্ত্রণে রাখতে হয়।“
শাহরুখের অভিনীত সিনেমার সংখ্যা শতের ঘর ছাড়িয়েছে। তিন দশক পার করে দেওয়া ক্যারিয়ারে ১৪টির বেশি ফিল্মফেয়ার ট্রফিসহ ঘরে তুলেছেন আরো অনেক পুরস্কার।
২০০৫ সালে পদ্মশ্রী, ২০০৭ ও ২০১৪ সালে ফ্রান্সের অর্ডার অব আর্টস অ্যান্ড লেটারস অ্যান্ড লিজিয়ন অব অনার পুরস্কার পেয়েছেন শাহরুখ। আর চলতি মাসে সুইজারল্যান্ডে ৭৭তম লোকার্নো ফিল্ম ফেস্টিভালে বিশেষ মর্যাদাপূর্ণ ‘পারদো আল্লা ক্যারিয়েরা’ পুরস্কার শাহরুখের হাতে উঠেছে।
বাড়িতে ট্রফি কেবিনেট আছে কি না জানতে চাইলে শাহরুখ বলেন, “বাড়িতে কেবল একটি ট্রফি কেবিনেট নয়, পুরস্কার রাখার জন্য বিশাল ঘর আছে, যেখানে তিনশর বেশি পুরস্কার রাখা হয়েছে। ঘরটির নকশা করা হয়েছে ব্রিটিশ লাইব্রেরির ঘরের আদলে।
“এছাড়া আমার নয় তলা যে অফিস ভবন আছে, সেটার প্রতিটি তলায় আমার কিছু না কিছু পুরস্কার সাজিয়ে রাখা হয়েছে।“
১৯৯২ সালে ‘দিওয়ানা’ সিনেমা দিয়ে বলিউডে অভিষেক হয়েছিল শাহরুখের। যদিও তার ক্যারিয়ার শুরু টেলিভিশন ধারাবাহিক ‘ফৌজি’ এবং ‘সার্কাস’ দিয়ে, তখন নাম ছিল আব্দুর রহমান।
এরপরের তিন দশকে অন্য অনেক অভিনেতার মতই নানা ধরনের চড়াই-উৎরাইয়ের মধ্য দিয়ে গেছেন শাহরুখ। বলিউডের পরিবর্তন, ভালো-মন্দে খাপ খাইয়েছেন নিজেকে। কখনও তার সাফল্যে বক্স অফিস ঝলমল করেছে, আবার একের পর এক ফ্লপ ছবি হতাশ করেছে ভক্ত-অনুরাগীদের।
অভিনয়ের পাশাপাশি প্রযোজনা এবং ক্রিকেট বাণিজ্যের খাতাতেও নাম লিখিয়েছেন কিং খান। দীর্ঘ সময় ধরে জনপ্রিয়তা ধরে রাখা বলিউড অভিনেতাদের একজন তিনি। সিনেমার সংখ্যা এবং আয়ের দিক থেকেও তিনি ভারতের শীর্ষ তারকাদের একজন।
শুরুর দিকে অভিনয়ে নিজের স্বপ্ন নিয়ে শাহরুখ বলেন, “যখন আমি ইন্ডাস্ট্রিতে আসি তখন আমি খেলাধুলা করতাম। আমার জীবনের স্বপ্ন ছিল আমার সিক্স প্যাক থাকবে। চারপাশে প্রচুর নারী। শুটিংয়ে মারপিটের সময়ে আমার মুখে-শরীরে রক্তের ছোপ থাকবে, হাতে বন্দুক থাকতে হবে। অনুমতি না নিয়ে কেউ ঘরে ঢুকলেই গুলি চলবে।“
দীর্ঘ অভিনয় জীবনে পাওয়া নানা ধরনের চরিত্র নিয়ে শাহরুখ বলেন, “আমাকে যখন কোনো ভূমিকা দেওয়া হয়, কমেডি, খল নায়ক বা ভালো হিরো অথবা কমেডি ধাঁচের, আমি যে কোনো চরিত্র নিয়েই নার্ভাস হয়ে যাই।
“মনে হয় আমি ঠিক মত কমেডি করতে পারছি তো? আমার অভিনয় যথেষ্ট অর্থবহ হচ্ছে কি না, আমার ভয়েস ঠিকমত আসছে কি না। তবে প্রেমিক চরিত্রটা বেশি পেয়েছি পরিচালকদের কাছ থেকে।"
এর মধ্যে বড় পর্দায় ২০১৮ সালে মুক্তি পাওয়া শাহরুখের ‘জিরো’ সিনেমা বক্স অফিসে প্রত্যাশা পূরণে ব্যর্থ হয়। জিরোর আগেও তিনটি সিনেমা ফ্লপ হয়। চারটি সিনেমার ব্যর্থতায় শাহরুখ নিজেও বিরক্ত হয়ে বিরতি নিয়েছিলেন। এমনকি নতুন কোনো চিত্রনাট্যও শোনেননি।
কোভিড মহামারীর পরে ২০২২ সালে রাজসিক কায়দায় এই অভিনেতা কেবল নিজেই ফিরে আসেননি, ‘পাঠান’ ও ‘জওয়ান’ দিয়ে স্বমহিমায় ফিরিয়েছেন হিন্দি সিনেমা ইন্ডাস্ট্রিকে।
ওই বিরতিতে শাহরুখ নিজেকে কীভাবে তৈরি করছিলেন জানতে চাইলে শাহরুখ বলেন, সিনেমা থেকে বিরতি নেওয়ার পর এবং কোভিড মহামারী চলাকালে তার আসলে তেমন কিছু করার ছিল না।
স্বভাবসুলভ রসিকতা করে শাহরুখ বলেন, “আমি সবাইকে বলছিলাম ইতালীয় রান্না শিখুন এবং চর্চা করুন। এবং আমি নিজেও তাই করেছি।
“আমাকে আমার দর্শকরা মিস করছিলেন। আমার কাছে সে সময় যত সিনেমার প্রস্তাব আসত, আমি বলতাম অ্যাকশন সিনেমা হলে আমি আছি।”
তবে ইদানিং শাহরুখ চাইছেন তার বয়স অনুযায়ী চরিত্রে কাজ করতে। শাহরুখ খানকে এবার পাওয়া যাবে নির্মাতা সুজয় ঘোষের ‘দ্য কিং’ সিনেমায়। এ সিনেমায় শাহরুখের মেয়ে সুহানা খানও কাজ করতে চলেছেন।
আরো পড়ুন
লোকার্নো উৎসবে পুরস্কার উঠল শাহরুখের হাতে
বাবা-মেয়ের সিনেমায় খলনায়কের নাম জানেন?
নারীদের মন জয়ের মন্ত্র জানালেন শাহরুখ
কখনও ভাবিনি, ৩০ বছর টিকে যাব: শাহরুখ