উত্তর চব্বিশ পরগনার বারাসাতের মুখ্য বিচার বিভাগীয় বিচারকের কাছে আত্মসমর্পণ করে আগাম জামিনের আবেদন করেন সোহম।
Published : 14 Jun 2024, 02:35 PM
রেস্তোরাঁ মালিককে মারধরের মামলায় আগাম জামিন পেয়েছেন পশ্চিমবঙ্গে চণ্ডীপুরের তৃণমূলের বিধায়ক অভিনেতা সোহম চক্রবর্তী।
উত্তর চব্বিশ পরগনার বারাসাতের মুখ্য বিচার বিভাগীয় বিচারকের কাছে বৃহস্পতিবার আত্মসমর্পণ করে আগাম জামিনের আবেদন করেন তিনি। জামিনের আবেদন শোনার পর সোহমকে জামিন দিয়েছেন বিচারক।
সংবাদ প্রতিদিন লিখেছে, আদালতের বাইরে উপস্থিত সাংবাদিকদের সোহম বলেন, “বিষয়টা বিচারাধীন। যা বলার আমার আইনজীবী বলবে। আমি কিছু বলব না।”
এই অভিনেতার বিরুদ্ধে মারধরের অভিযোগ এনে রেস্তোরাঁ মালিক আনিসুল আলম নিউটাউনের টেকনো সিটি থানায় অভিযোগ করেছিলেন গত সপ্তাহে।
পুলিশের কাছে আনিসুল দাবি করেছিলেন, তিনি নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। কিন্তু পুলিশ কোনো পদক্ষেপ না নেওয়ায়, গত বুধবার হাই কোর্টে জীবনের নিরাপত্তা ও তাকে মারধরের ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্তের দাবিতে আবেদন করেন তিনি।
হাই কোর্টের বিচারপতি অমৃতা সিনহা সেই আবেদন শুনানির জন্য গ্রহণ করেছেন। এ বিষয়ে শুক্রবার শুনানি হওয়ার কথা রয়েছে।
এর মধ্যে গ্রেপ্তার এড়াতে সোহম বৃহস্পতিবারই বারাসাতের মুখ্য বিচার বিভাগীয় বিচারকের আদালতে হাজির হয়ে জামিনের আবেদন করলে বিচারক তা মঞ্জুর করেন।
ঘটনাটি ঘটেছে গত শুক্রবার কলকাতার নিউ টাউনে একটি রেস্তোরাঁয়। ওই রেস্তোরাঁর দোতলায় সোহমের শুটিং চলছিল।
শুটিং চলার সময় রেস্তোরাঁর মালিক আনিসুল সেখানে রাখা সোহমের গাড়ি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। আনিসুলের হট্টগোল সোহমের কানে পৌঁছালে তিনি শুটিং ফেলে নিচে চলে আসেন। রেস্তোরাঁ মালিকের সঙ্গে তার কথা কাটাকাটি হয়। বাগবিতণ্ডার একপর্যায়ে আনিসুলকে মারধর শুরু করেন অভিনেতা।
এরপর সোহম তার আচরণের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে বলেছিলেন, “আগে আমার ও আমার প্রযোজনা সংস্থার কর্মীদের ওপর আক্রমণ করা হয়েছিল। অকথ্য গালিগালাজ করা হয়, কুকথা বলা হয়। সেই সময়ে মাথা ঠিক রাখতে পারিনি। কিন্তু একজন জনপ্রতিনিধি হিসেবে এমন কাজ করা উচিত হয়নি। আমার ভুল হয়েছে।”
এই অভিনেতার ভাষ্য, “সেই ঘটনার ভিডিও প্রকাশ্যে আসছে না। গোটা হার্ড ডিস্কটা নিয়েই চলে গিয়েছেন ওই রেস্তোরাঁর মালিক আনিসুল। সেটা খুঁজে বের করা দরকার। তবে বিষয়টা প্রথমেই প্রশাসনের হাতে ছেড়ে দেওয়া উচিত ছিল।”
অন্যদিকে আনিসুলের অভিযোগ, রোস্তোরাঁর সামনে ‘বেআইনিভাবে’ পার্কিং নিয়ে সমস্যা শুরু হয়। সোহম রেস্তোরাঁ বন্ধ করে দেওয়ার হুমকি দেন। কথা কাটাকাটির সময় সোহম রেস্তোরাঁর কর্মচারীদের মারধর করেন। এই ঘটনায় দুটি সিসিটিভির ফুটেজ প্রকাশ্যে আনেন আনিসুল।
অন্যদিকে মালিকের অনুমতি নিয়েই ওই রেস্তোরাঁয় শুটিং করতে গিয়েছিলেন জানিয়ে সোহম বলেন, “শুটিং শুরুর পরে নানা রকম আপত্তি তোলেন আনিসুল।”
সোহমের প্রযোজনা সংস্থার ভাষ্য, রেস্তেরাঁয় শুটিং করার জন্য নগদ ১০ হাজার রুপি দেওয়া হয় কর্তৃপক্ষকে, কিন্তু তারপরেও ঝামেলা শুরু হয়।
রেস্তোরাঁর মালিক শুটিংয়ের নানা মুহূর্ত ভিডিও করে করে কোনো এক ব্যক্তিকে পাঠাচ্ছিলেন বলেও অভিযোগ করেছে প্রযোজনা সংস্থা।
সোহম বলেছেন, ঘটনার রাতেই তিনি থানায় লিখিত অভিযোগ করতে চেয়েছিলেন।
“কিন্তু থানা থেকে পুলিশ কর্মকর্তারা আমাকে বলেছিলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের পরে প্রয়োজন হলে লিখিত অভিযোগ নেওয়া হবে। এখন আমি প্রয়োজন মনে করলে লিখিত অভিযোগ দায়ের করতে পারি।”
জনপ্রতিনিধি হিসেবে এমন কাজ করা কি উচিত হয়েছে? এই প্রশ্নের উত্তরে সংবাদমাধ্যমকে সোহম বলেন, “মানুষ হিসেবে আত্মসম্মানে আঘাত লেগেছিল। তাই ঘটনাটা ঘটে গিয়েছে। এখন অনুশোচনা হচ্ছে।’’