ধুলার যন্ত্রণা দূর করার পদক্ষেপ কই?

ঢাকায় ধুলা কমাতে শীত মৌসুমে নগর সংস্থাগুলোর পদক্ষেপে সন্তুষ্ট নয় নগরবাসী।

শাহরিয়ার নোবেলবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 23 Jan 2023, 07:07 PM
Updated : 23 Jan 2023, 07:07 PM

“এই দেখেন আমার চোখের অবস্থা, একদম লাল হয়ে থাকে, চোখ মলিন হয়ে যায়। যে কেউ দেখলে জিজ্ঞেস করে, ‘ঘুম থেকে উঠে চোখেমুখে পানি দেন নাই’। শীত না শুধু, একটু রোদ উঠলেই ধুলার কারণে এই অবস্থা হয়। সাথে শ্বাসকষ্ট, এলার্জির সমস্যা তো আছেই”- রাজধানীতে রাইড শেয়ারে মোটরসাইকেল চালানোর নিত্যদিনের ভোগান্তির কথা বলছিলেন নাসিরউদ্দিন মোল্লা।

রোববার ঢাকার আগারগাঁওয়ে যাত্রীর জন্য অপেক্ষমান এই বাইকার সানগ্লাস খুলে চোখ দেখাতে লাগলেন। নাকমুখ রুমালে ঢাকা এই চালক আক্ষেপ করে বললেন, “একটা দিনও ভালো কোনো কাপড় পরে বের হওয়ার সুযোগ নাই।”

ঢাকার আজিমপুর এলাকার রিকশাচালক আফসার মিয়ারও একই অবস্থা। তিনি বললেন, “১০ বছর ধইরা রিকশা চালাই, এই অবস্থাই দেখি। শ্বাস নেওয়া যায় না, চোখ জ্বলে, শরীর চুলকায়।”

ধুলাবালির কারণে এই ভোগান্তির সমাধান তিনি ছেড়ে দিয়েছেন ‘সৃষ্টিকর্তার হাতে’। বললেন, “রাস্তাঘাটে খাইটা খাওয়া মানুষের এইসব দেখার সময় নাই। গরিবরে আল্লায় বাঁচায়।”

শীতের কুয়াশায় জবুথবু ঢাকায় সূর্যের দেখা মিলতেই বাতাসের ক্ষতিটা এ দিন টের পাওয়া গেল। শীতের আমেজের মধ্যে রাজধানীর বাতাসে ভারী ধুলিকণার পরিমাণ বাড়তে বাড়তে আবারও তা শীর্ষে পৌঁছেছে। দূষিত বায়ুর শহরের তালিকায় ফের শীর্ষে উঠে এসেছে ঢাকা।

রোববার সকালে সুইস বায়ুমান পর্যবেক্ষক সংস্থা আইকিউএয়ারের শহরভিত্তিক এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্সে (একিউআই) সবচেয়ে বাজে দশা ছিল ঢাকার বাতাসের, স্কোর ছিল ২৭১, যার মানে ‘খুবই অস্বাস্থ্যকর ও ঝুঁকিপূর্ণ’।

এর আগে গত অক্টোবরে ঢাকার বাতাসে কিছুটা স্বস্তিতে শ্বাস নিতে পেরেছিল নগরবাসী। অক্টোবরের বাতাসে ধুলোর পরিমাণ বাড়লেও দ্বিতীয় সপ্তাহের শুরুতে কয়েক দিনের ছুটি আর বৃষ্টি ঢাকার আশেপাশের এলাকায় বায়ুমানের উন্নতিতে ভূমিকা রেখেছিল।

তখনই শীত ও ধুলার মৌসুমে বায়ু দূষণের মাত্রা বাড়ার আশঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন বিশেষজ্ঞরা। দুর্ভোগ কিছুটা কমাতে তারা তদারক সংস্থাগুলোকে উদ্যোগী হওয়ার পরামর্শও দিয়েছিলেন। কিন্ত তখন থেকেই শীতকে সামনে রেখে নগর সংস্থাগুলো ‘যথাযথ প্রস্তুতি নেয়নি এবং কাজও করেনি’ বলেই এই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে বলে মনে করছেন পরিবেশবিদরা।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের অধ্যাপক মো. শফি উল্লাহ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমাদের শহরের যে তত্ত্বাবধায়করা আছেন, তাদের কাজকর্ম সন্তোষজনক না। এখন বায়ু দূষণের যে জায়গায় আমরা চলে গেছি, সেখানে এটি প্রতিরোধের যে ব্যবস্থা সেটি কি তারা নিচ্ছেন? নিচ্ছেন না।

“আমাদের তো আগে থেকেই ভাবা উচিত ছিল যে আমাদের এমন একটা সমস্যা শীত মৌসুমে বেশি হয়, তাই শীত আসলে আমাদের কী কী ব্যবস্থা নিতে হবে, তা আগে থেকেই তো হাতে নেওয়া উচিত। এই শহরে এত মানুষের জীবন।”

স্ট্যামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্রের পরিচালক অধ্যাপক আহমদ কামরুজ্জামান মজুমদার মনে করেন, কেবল ধুলাবালিই নয়- বর্জ্য ব্যবস্থাপনাতেও নজর দিতে হবে নগরসংস্থাকে।

তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “অক্টোবর-নভেম্বর-ডিসেম্বরে এমনিতেই আমাদের বায়ুর মান খারাপ থাকে। এই মৌসুমটাই আসলে চলছে৷ এর মাঝে যদি বৃষ্টি না হয়, তাহলে অবস্থা আরও খারাপ হয়।

“ঢাকা শহরের দূষণ তো আছেই, ঢাকার আশপাশ থেকেই প্রতিনিয়ত দূষিত বায়ু শহরের ভেতর ঢুকছে। মাতুয়াইল, আমিনবাজারে যেসব জায়গায় ময়লা ফেলা হয়, সেখানে আগুন লাগিয়ে পোড়ানো হচ্ছে, এটাও বায়ুকে খারাপ করছে।”

Also Read: জানুয়ারির ধুলো ঢাকাকে ফেরালো বায়ু দূষণের শীর্ষে

Also Read: অক্টোবরের বৃষ্টি দিল নির্মল বায়ু, সামনে আসছে ধুলোময় শীত

Also Read: বিশ্বে ‘সবচেয়ে দূষিত’ বাংলাদেশের বাতাস

এত ধুলা হচ্ছে কেন?

শীত মৌসুমে ঢাকা মহানগরীতে নির্মাণকাজ বাড়ে। ইমারত নির্মাণ থেকে শুরু করে, রাস্তাঘাট এবং সেবাখাতের বিভিন্ন নির্মাণযজ্ঞের ফলে বাড়তি ধুলা দূষণের শিকার হতে হয় নগরবাসীকে।

ঢাকার মহাখালী-গুলশান লিংক রোডে চলছে ড্রেন নির্মাণকাজ। এই সড়কের পাশে বসা ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী মো. আলম বলেন, “যেদিন থেকে রাস্তা খুঁড়ে ড্রেনের কাজ শুরু হয়েছে, সেদিন থেকে ধুলাবালি বেড়ে গেছে। কাশি আসে, গলা শুকিয়ে যায়, নানারকমের সমস্যা হয়। ধুলা কমাতে তেমন পানি দিতে দেখি নাই।”

একই এলাকার নিয়মিত পথচারী বেসরকারি চাকরিজীবী ফারজানা ইয়াসমিন বলেন, “অপরিকল্পিতভাবে এখানে কাজ চলছে। আপনি আমতলী থেকে ওয়ারল্যাস পর্যন্ত যাবেন, দেখবেন রাস্তা খুঁড়ে সব ধুলাবালি পাশেই রাখা হয়েছে। এগুলো প্রতিনিয়ত উড়তে থাকে। মাস্ক খুলে একটু শান্তিতে শ্বাস নেওয়ার কোনো সুযোগ নেই।”

আগারগাঁও মোড় থেকে শিশুমেলা পর্যন্ত রাস্তা নির্মাণের কাজ এখন প্রায় শেষপর্যায়ে। এই কাজ চলাকালীন ধুলোয় নাকাল হচ্ছেন সেখানকার হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসা নিতে আসা ও বিভিন্ন সরকারি অফিসের কর্মজীবী ও সেবাগ্রহীতারা।

গত তিন মাস ধরে দুর্ঘটনায় আহত ভাইয়ের চিকিৎসার জন্য জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠানে আছেন ঠাকুরগাঁওয়ের হায়দার আলী। তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “রাস্তার কাজ যখন পুরাদমে চলেছে, তখন অনেক ধুলা ছিল। একটু রোদ উঠলে আর থাকা যেত না, বাইরে এসে হোটেলে খেতে গেলে দেখা যেত, ভাতে বালু-বালু লাগছে। এখনও সব কাজ শেষ হয় নাই, ধুলা এখনও আছে। নিয়মিত পানি দিলে কম থাকত।”

নির্মাণকাজ বন্ধ থাকলে যে বায়ুর মানে স্বস্তি মেলে, তার প্রমাণ মিললো মিরপুরের কাজীপাড়া বাসস্ট্যান্ডের জে কে হার্ডওয়্যারের মালিক সেরাজুল ইসলামের কথায়।

তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বললেন, “আমি তো অ্যাজমা হয়ে মরেই গেছিলাম প্রায়। যতদিন মেট্রোর কাজ চলছে- আমার ব্যবসা তো লস গেছেই, হাজার হাজার টাকা ডাক্তারের পেছনে গেছে, শুধু এই শ্বাস-প্রশ্বাসের সমস্যার জন্য। এখন কাজ শেষ, বাতাসে ধুলা কমছে, দোকান এখন আর সাদা হয়ে থাকে না, আমিও আগের চেয়ে স্বস্তি পাচ্ছি।”

আবাসন কাজ সবসময় চলতে থাকায় নগরীতে দূষণও যে লেগেই থাকেই সে কথাও বললেন ঢাকার বাসিন্দাদের কেউ কেউ। উত্তরা ১৫ নম্বর সেক্টরের আলী নেওয়াজের শিশুরা শ্বাসকষ্টে ভুগছে। তিনি মনে করছেন, তার বাড়ির দুই পাশেই ভবন নির্মাণকাজ চলায় এই সমস্যা হচ্ছে।

নেওয়াজ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বাড়ি বানানোর জন্য যে বালু, ইট, সিমেন্ট আনা হয়, এগুলো সব রাস্তার পাশে খোলাই রেখে দেওয়া হয়। বাতাসে উড়ে উড়ে সেগুলো ঘরে আসে।

“দিনে দুই-তিনবার ঘরে ঝাড়ু দিতে হয়, পর্দা সাদা হয়ে যায়। আমার বাচ্চার মাত্র পাঁচ বছর বয়স সে এখনই শ্বাসকষ্টে ভুগছে।”

বাড়ছে শ্বাসযন্ত্রের রোগ

বায়ু ও ধুলা দূষণের কারণে শ্বাসযন্ত্রের রোগ বাড়ছে বলে মনে করছেন বক্ষ্যব্যাধির চিকিৎসরা। শীত মৌসুমে তাদের কাছে রোগীও বেশি আসছে।

শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজের বক্ষব্যাধি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো. মেজবাহুল করিম রুবেল বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এই মৌসুমে সবসময় আমরা বেশি রোগী পাই। শিশু-বৃদ্ধরা অ্যাজমা, শ্বাসনালীর নানা সমস্যা নিয়ে আসছেন। কারও ওষুধে সারছে, কারও ইনহেলার, অ্যান্টিবায়োটিক লাগছে।”

এই চিকিৎসক বলেন, “দূষিত বায়ুর কারণে মানবদেহে এলার্জি, কাশি, হাঁপানি, ব্রঙ্কাইটিস, উচ্চ রক্তচাপ, মাথাব্যথা, ফুসফুসে ক্যান্সার ইত্যাদি মারাত্মক রোগ হতে পারে।

“বায়ুর যে দূষণ সেটি নিয়ে তো রাতারাতি কিছু করার নেই। সবাইকে মাস্ক পরে থাকতে হবে। অবস্থার অবনতি হলে ডাক্তারের পরামর্শে ওষুধ নিতে হবে।”

ঝুঁকিতে ট্রাফিক পুলিশ ও সেবাকর্মীরা

বায়ুদূষণে মারাত্মকভাবে আক্রান্ত হচ্ছেন রাজধানীর রাস্তায় ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণে কাজ করা পুলিশ সদস্যরা। আজিমপুর সিগন্যালে দায়িত্বরত এক পুলিশকে জিজ্ঞেস করতেই বললেন, “রাস্তায় অনেক ধুলাবালি, এর মধ্যেই কাজ করতে হয়। এলার্জিসহ, নানা সমস্যা হয়।”

শেরেবাংলা নগর ট্রাফিক জোনের উড়োজাহাজ ক্রসিং পয়েন্টে দায়িত্ব পালন করা সার্জেন্ট জহিরুল ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমাদের কষ্টের শেষ নাই। ৮ ঘণ্টা এই ধুলাবালির মধ্যে দাঁড়িয়ে ডিউটি করা লাগে। বাসায় গিয়ে কাপড় ঝাড়া দিলে এত ধুলা বের হয় যে কিছু দেখা যায় না।

“আমাদের ট্রাফিক বিভাগের অনেকের শীত আসলে শ্বাসকষ্ট, এলার্জি বাড়ে, সব এই ধুলা-বালুর জন্য। এখন তো বুঝতেসি না, ডিউটি করেতসি, গায়ে লাগতেছে না, বয়স বাড়লে বোঝা যাবে।”

তার পাশে থাকা আরেক ট্রাফিক পুলিশ সদস্য বললেন, “আমার নিয়মিত ডাক্তারের কাছে যাওয়া লাগে, অ্যাজমার সমস্যার জন্য। আমার পরিচিত আরেক ভাইয়ের ইনহেলার নেওয়া লাগে।”

ট্রাফিক পুলিশদের মতো বিভিন্ন সেবাখাতে কাজ করা কর্মীদেরও একই অবস্থা। সাইকেলে করে একটি ফুড ডেলিভারি প্রতিষ্ঠানের হয়ে গ্রহীতাদের কাছে খাবার পৌঁছে দেওয়ার কাজ করেন তরুণ ইকরামুল হোসেন।

এই তরুণ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “রাস্তায় অনেক ধুলাবালি । তাকিয়ে দেখেন সামনেই কিছু দেখা যাচ্ছে না। এই অবস্থার মধ্য দিয়েই কাজ করা লাগে। মাস্ক পরে সাইকেল চালানো অনেক কষ্টের, দমবন্ধ লাগে, আবার মাস্ক খুললে অনেক ধুলাবালি।”

নগর সংস্থার কাজে অসন্তোষ

ঢাকা মহানগরীতে ধুলা কমাতে শীত মৌসুমে নগর সংস্থাগুলোর পদক্ষেপ সন্তুষ্ট নয় নগরবাসী।

আগারগাঁও এলাকায় ফুলের ব্যবসা করা সোহেল মিয়া বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ধুলাবালির জন্য দোকান করা যায় না, ফুল নষ্ট হয়ে যায়। আগারগাঁওয়ের রাস্তা হওয়ার পর একদিনও সিটি করপোরেশনকে পানি দিতে দেখি নাই।”

একই অভিযোগ করলেন মিরপুর ১০ নম্বর গোলচত্বর এলাকার ব্যবসায়ী মতিন মিয়া। তিনি বলেন, “সারাদিন এই জায়গায় গাড়ি চলে, একটা বারও পানি দিতে দেখি না। মানুষ মরে কি বাঁচে- তা নিয়ে কারও কোনো মাথাব্যথা নাই।“

সড়কে ধুলাবালি কমাতে নগর সংস্থাগুলোর কাজে অসন্তোষ দেখালেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের অধ্যাপক মো. শফি উল্লাহও। তিনি বলেন, “আগে দেখতাম শীত আসলে রাস্তায় পানি দেওয়া হত, এবছর আমি সেটিও দেখছি না। আসলে আমরা যেমন অভ্যস্ত হয়ে গেছি, তেমনি আমাদের শাসকরাও অভ্যস্ত হয়ে গেছে।

“তারা ধরেই নিয়েছে, জনগণ কিছু বলছে না, তাদের কোনো সমস্যা নাই। এভাবেই চলছে। আগের বছরও তাই ছিল। শুধু কোভিডের সময় আমরা শহর কিছুটা ভালো দেখেছি। তার মানে হল- শহর যখন চলে, তখন আমাদের যেসব ব্যবস্থা নেওয়া হয়, সেগুলো আর কোনো কাজে আসছে না।”

যা বলছে নগর সংস্থা

ঢাকার বায়ুর এমন নিম্নমানকে ‘দুঃখজনক’ বলে মানছেন ঢাকার উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সেলিম রেজা। তবে নিজেদের কাজকেও দেখছেন ‘সর্বোচ্চ পর্যায়ের চেষ্টা’ হিসেবেই।

তার ভাষায়, “উন্নয়নের জন্য রাস্তা খোঁড়াখুড়ি করতে হয়। আমরা সর্বোচ্চ পর্যায়ের চেষ্টা করছি। আমরাই দেশে প্রথম ১৪ কোটি টাকা দিয়ে দুইটি মিক্সড ব্লোয়ার কিনে এনেছি। সেগুলো দিয়ে আমরা নিয়মিত পানি ছিটাচ্ছি।”

এসব পানি ছিটানোর যন্ত্রকে নিয়মিত দেখতে না পাওয়ার যে অভিযোগ করছেন নগরবাসী, সে প্রসঙ্গে সেলিম রেজা বলেন, “আমরা মানুষের মন্তব্যকে সম্মান করি। দিনশেষে সেবা না পেলে আমিও ক্ষুব্ধ হই। এই ধুলাবালি আমার বাচ্চাদেরও কষ্ট দিচ্ছে।

“যারা খোঁড়াখুড়ি করছে, তারা বাধ্য জায়গাটিকে সংরক্ষিত করে কাজ করতে ও নিয়মিত পানি ঢালতে। আমাদের প্রত্যাশা, সবাই তাদের কাজগুলো নিয়মিত ও যথাযথভাবে করবে।”

নিয়মিত পানি না ছিটানোর জন্য অনেক ঠিকাদারের কাজের অনুমতি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে বলেও জানান তিনি।

বায়ুর মান খারাপ হওয়ার পেছনে ঢাকায় চলমান বিভিন্ন মেগা প্রকল্প আর ভবনের নির্মাণসামগ্রী থেকে উড়ে আসা ধুলোকে দায়ী করলেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের পরিবেশ, জলবায়ু ও দূর্যোগ ব্যবস্থাপনা সার্কেলের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী (পুর) মো. খায়রুল বাকের।

তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এসব কারণেই দূষণটা বেশি হচ্ছে। আমাদের তরফ থেকে আমরা গাছপালা বেশি লাগানোর উদ্যোগ নিয়েছি যেন ধুলো কম উড়ে। আবার নিয়মিত পানি ছিটানোর কাজও চলছে। প্রয়োজনে আরও পানি ছিটানো হবে।”

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস নির্মাণ কাজ বা খোঁড়াখুঁড়ির চেয়ে পরিবহনের দূষণকে বায় দূষণের বড় কারণ হিসেবে দেখালেন।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, "রাজধানীতে চলাচল করা যানবাহনগুলোয় মানসম্মত জ্বালানি ব্যবহার না করা, নিম্নমানের লুব্রিকেন্ট ব্যবহার, নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণের অভাব এবং ফিটনেসবিহীন যানবাহন হতে সৃষ্ট ক্ষতিকর কার্বন মনোক্সাইড, সীসা, সালফার, কার্বন ডাই অক্সাইড, ওজোন, নাইট্রোজেন অক্সাইড, পলিনিউক্লিয়ার অ্যারোমেটিক্সসহ বিভিন্ন ধরনের হাইড্রোকার্বনই বায়ু দূষণের জন্য প্রায় ৭০ শতাংশ দায়ী। ফলে জনঘনত্ব বিবেচনায় ঢাকা শহরে এসব বিপজ্জনক ধাতু ও যৌগ পদার্থের পরিমাণ তুলনামূলক বেশি।

"পাশাপাশি নির্মাণ কাজ, রাস্তা-ঘাট সংস্কার ও খোঁড়াখুঁড়িকে অনেকে বায়ু দূষণের জন্য দায়ী করলেও বস্তুত নির্মাণ সংশ্লিষ্ট কাজ, সড়ক সংস্কার ও খোঁড়াখুঁড়ির ফলে সৃষ্ট ধুলাবালির পরিমাণ মাত্র ১০ শতাংশের মত।"

সিটি করপোরেশন রাস্তার ধুলাবালি নিয়ন্ত্রণে ‘অনেকটা সক্ষম হয়েছে’ দাবি করে মেয়র বলেন, "ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এলাকায় সড়ক খোঁড়াখুঁড়ি ও সংস্কার কাজ আমরা নির্ধারিত সময়সূচি অনুযায়ী সম্পন্ন করছি। এসব কার্যক্রম বর্তমানে গভীরভাবে তদারকি করা হচ্ছে।  এছাড়াও প্রয়োজন অনুযায়ী আমরা সড়কে পানি ছিটিয়ে চলেছি।

“এটি একটি চলমান প্রক্রিয়া। ফলে আমরা অনেকাংশে বায়ু দূষণ রোধ ও ধুলাবালি নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসতে সক্ষম হয়েছি। তারপরও নির্মাণ সংশ্লিষ্ট কার্যক্রমে ধুলাবালি নিয়ন্ত্রণে আরও বেশি তদারকির উদ্যোগ অব্যাহত রাখা হবে।"