বাংলাদেশের উচ্চ মাত্রার বায়ু দূষণ নতুন করোনাভাইরাসে মৃত্যুর সংখ্যা বাড়িয়ে তোলার ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখতে পারে।
Published : 07 May 2020, 01:47 AM
বায়ু দূষণ নিয়ে গবেষণা করা আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর রিসার্চ অন এনার্জি অ্যান্ড ক্লিনএয়ারের (সিআরইএ) এক গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করে এমন আশঙ্কার কথা জানায় বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা)।
‘বায়ুর মান, স্বাস্থ্য ও পরিবেশের উপর বাংলাদেশের পায়রায় প্রস্তাবিত বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর ক্ষতিকর প্রভাব’ শীর্ষক ওই গবেষণায় বাপাও ছিল অংশীদার।
মঙ্গলবার এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে গবেষণা প্রতিবেদনটি যৌথভাবে প্রকাশ করা হয় বলে বাপার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চলমান বায়ুদূষণের প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ প্রতিক্রিয়ায় বাংলাদেশে ইতোমধ্যেই হাজার হাজার মানুষ ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, ফুসফুসের ক্যানসারসহ নানা ধরনের শারীরিক অক্ষমতায় ভুগছে বা কেমোথেরাপির মতো চিকিৎসা নিচ্ছে।
সংবাদ সম্মেলনে গবেষণা কর্মের প্রধান বিশ্লেষক লরি মিলিভিরতা বলেন, “বিশ্বের বেশ কয়েকটি গবেষণায় বায়ু দূষণ ও উচ্চ রক্তচাপ বা ফুসফুসে প্রদাহের মতো দীর্ঘস্থায়ী (ক্রনিক) রোগের সম্পর্ক মিলেছে।
“একই সঙ্গে দেখা গেছে, ইতোমধ্যে ক্রনিক রোগে আক্রান্তরা করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হলে সহজে সুস্থ হচ্ছেন না বা তাদের মৃত্যুঝুঁকি বেড়ে যাচ্ছে। ফলে বায়ুদূষণ করোনাভাইরাসে মৃত্যুর সংখ্যাকে বাড়িয়ে তুলছে এবং স্বাস্থ্যসেবা খাতকে চরম চাপের মধ্যে ফেলে দিচ্ছে।”
গ্লোবাল বার্ডেন অব ডিজিজ স্টাডি ২০১৭-এর তথ্য অনুসারে, বায়ুদূষণ বাংলাদেশে ১১ শতাংশ ডায়াবেটিস, ১৬ শতাংশ ফুসফুসের ক্যানসার, ১৫ শতাংশ দীর্ঘস্থায়ী ফুসফুসের রোগ, ১০ শতাংশ হৃদরোগ এবং ৬ শতাংশ স্ট্রোকের জন্য দায়ী।
সংবাদ সম্মেলন সভাপতিত্ব করেন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধুরী।
দেশের খাদ্য নিরাপত্তা সুরক্ষিত রাখার জন্য পায়রায় সব কয়লাবিদ্যুৎ প্রকল্প বাতিলের আবেদন জানান তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে বাপার জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি ডা. মোহা. আবদুল মতিন বলেন, “গবেষণা থেকে এটা স্পষ্ট যে বায়ুদূষণ ও কোভিড-১৯ মহামারীর মধ্যে শক্তিশালী যোগসূত্র রয়েছে।
“পায়রা বিদ্যুৎ হাবের মতো দূষণকারী উৎস তৈরি করা হলে তা ভবিষ্যতে বায়ুদূষণ কয়েকগুণ বাড়িয়ে দেবে এবং স্বাস্থ্যের ওপর চরম ঝুঁকি নিয়ে আসবে।”
সৌরবিদ্যুতের মতো নবায়নযোগ্য শক্তি থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনে মনোযোগী হতে সরকারকে আহ্বান জানান তিনি।
গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশে বায়ুদূষণ আরও বাড়বে যদি পায়রায় প্রস্তাবিত ৮টি কয়লাবিদ্যুৎকেন্দ্রের সবগুলো নির্মাণ করা হয়। খুবই ছোট একটি এলাকার মধ্যে ৯.৮ গিগাওয়াট ক্ষমতার এই আটটি বিদ্যুৎকেন্দ্রের দূষণপ্রতিরোধী ব্যবস্থাও খুব দুর্বল।
“শেষ পর্যন্ত যদি সবগুলো কয়লাবিদ্যুৎকেন্দ্র এখানে নির্মিত হয়, তবে এটি হবে দক্ষিণ এশিয়া এবং বিশ্বের বায়ুদূষণের অন্যতম প্রধান উৎস। ভবিষ্যতে এই বিদ্যুৎ হাব স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়াবে এবং করোনাভাইরাসের মতো আরেকটি মহামারী এলে অসংখ্য মৃত্যুর কারণ হবে।”
গবেষণায় দাবি করা হচ্ছে, পায়রায় নির্মিতব্য বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর ৩০ বছরের মেয়াদকালের দূষণের কারণে সর্বোচ্চ ৩৫ হাজার মানুষ মারা যেতে পারে। এর মধ্যে প্রায় ৫ হাজার দীর্ঘস্থায়ী ফুসফুসের রোগ, ১১ হাজার ইসকেমিক হৃদরোগ, ৩০০ শিশুসহ প্রায় ৩ হাজার ফুসফুসের প্রদাহ, প্রায় ২ হাজার ফুসফুসের ক্যানসার, প্রায় ৯ হাজার স্ট্রোক এবং প্রায় আড়াই হাজার জন নাইট্রোজেন-ডাই-অক্সাইডের ক্ষতিকর প্রভাবের ফলে মারা যেতে পারে।
সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ও ইলিশ গবেষক ড. মো. আনিছুর রহমান, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ও হালদা নদী গবেষণাগারের সমন্বয়ক অধ্যাপক ড. মনজুরুল কিবরিয়া, বাপার যুগ্ন সম্পাদক এবং স্টামফোর্ড বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্রের (ক্যাপস) পরিচালক অধ্যাপক ড. আহমদ কামরুজ্জমান মজুমদার বক্তব্য রাখেন। অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন বাপার সাধারণ সম্পাদক শরীফ জামিল।