শনিবার ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন নির্বাচন চলাকালে বেলা আড়াইটার দিকে দক্ষিণ সিটির কদমতলা পূর্ব বাসাবো স্কুল অ্যান্ড কলেজ কেন্দ্রে এ ঘটনা ঘটে।
ভুক্তভোগী ওই বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমাদের কেন্দ্রটি নারী ভোটারের। আমি ভোট কক্ষে ঢুকে দেখি দুই যুবক গোপন কক্ষ থেকে একজন নারী ভোটারকে নিয়ে বেরোচ্ছেন। এরপর আমার শনাক্তকরণ প্রক্রিয়া নিশ্চিত করে গোপন কক্ষে ভোট দেওয়ার জন্য গিয়েছি। সেখানে গিয়ে দেখি একজন মহিলা দাঁড়িয়ে আছেন। আমি জিজ্ঞেস করতেই তিনি বলেন, এখানে আমার ডিউটি।”
এরপর চল্লিশোর্ধ্ব ওই নারী মেয়র ও কাউন্সিলরের ভোট তার পছন্দ মতো দিতে বাধ্য করেন বলে অভিযোগ করেন ওই তরুণী।
তিনি বলেন, “আমাকে তিনি মেয়রের নৌকা আর কাউন্সিলরের আরেক মার্কায় ভোট দিতে বলেন। আমি তাতে রাজি না হলে তিনি বলেন, না আপনি এটাতেই দেবেন। কিছুক্ষণ চুপ থেকে আমি আমার পছন্দের প্রার্থীর নামের পাশের বোতামে হাত রাখতে গেলে তিনি আবার ধমকে ওঠেন। পরে তিনি তার পছন্দের প্রতীকে ভোট দিতে বাধ্য করেন। মেয়র ও কাউন্সিলরের ভোট শেষে সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলরের বেলায় তিনি বলেন, এবার আপনি যাকে ইচ্ছা তাকে দেন।”
ওই তরুণী বলেন, এখানে আরও কয়েকজন নারী ভোটার তার কাছে একই অভিযোগ করেছেন।
এর প্রতিকার চাইতে প্রিজাইডিং অফিসারের খোঁজে যান জানিয়ে তিনি বলেন, “সেখানে একজন জানান, প্রিজাইডিং অফিসার নেই, খেতে গেছেন।”
এ বিষয়ে জানতে ঢাকা দক্ষিণের ২, ৩, ৪ নম্বর ওয়ার্ডের দায়িত্বপ্রাপ্ত সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা মোহাম্মদ শানিয়াজ্জামান তালুকদারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়।
এদিকে বিকাল সোয়া ৩টার দিকে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের শেরেবাংলা নগর সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায়, একজন মেয়র প্রার্থীর সমর্থকরা গোপনকক্ষে ভোটারকে যেতে না দিয়ে নিজেরাই ভোট দিয়ে দিচ্ছেন। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের সামনেই এই ঘটনা ঘটছে, ভোটাররা ভয়ে বের হয়ে চলে যাচ্ছেন।
ইভিএমে ভোটগ্রহণ সহজ হলেও এভাবে সমস্যা হতে পারে বলে আশঙ্কা জানিয়েছিলেন সাবেক নির্বাচন কমিশনার শাহ নেওয়াজ। গেল সপ্তাহেই নির্বাচন পর্যবেক্ষকদের এক কর্মশালায় তিনি বলেছিলেন, “এখন পর্যন্ত ইভিএম নিয়ে যা শোনা যাচ্ছে তা হল, একজন ভোটারের ভেরিফিকেশন হওয়ার পর অন্য কেউ দৌড়ে বুথে ঢুকে ভোট দেওয়ার আশঙ্কা।”
দক্ষিণ সিটির কামরাঙ্গীরচরের হাজী আব্দুল আউয়াল উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রেও একজন আনসার সদস্যকে গোপন কক্ষের পাশে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে। সে সময় একজন ভোট দিচ্ছিলেন।
সেখানে তিনি কেন আছেন জানতে চাইলে প্রিজাইডিং অফিসার আব্দুল নাসের বলেন, “ভোটারকে সহযোগিতা করছে।”
তিনি সেখানে দাঁড়াতে পারেন কি না জানতে চাইলে কোনো জবাব দেননি এই নির্বাচন কর্মকর্তা।
সাংবাদিক দেখে দ্রুত সেখান থেকে চলে যান ওই আনসার সদস্য।
এদিকে ইত্তেফাক মোড়ে ব্রাদার্স ইউনিয়ন ক্লাব কেন্দ্রে সকাল সাড়ে ১১টার দিকে নৌকার ব্যাজ পরা কয়েকজনকে একজন নারী ভোটারকে কেন্দ্রে ঢুকতে বাধা দিতে দেখা যায়। এ সময় নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই নারী প্রতিবাদ শুরু করলে সেখানে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে।
তারা এখানে কী করছেন জানতে চাইলে ওই যুবকদের কয়েকজন বলেন, শান্তিপূর্ণ পরিবেশ রক্ষায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের পাশাপাশি কাজ করছেন তারা।
এ বিষয়ে সেখানে দায়িত্বরত পুলিশের এসআই জালাল উদ্দিনকে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বিষয়টি আমরা লক্ষ করেছি। আমরা কিছুক্ষণ পর পর তাদেরকে বের করে দেওয়ার চেষ্টা করছি।”