এবার সবচেয়ে কম এডিপি বাস্তবায়নের জন্য অর্থ সংকটকে দায়ী করছেন অর্থনীতিবিদ আহসান এইচ মনসুর।
Published : 31 Jan 2024, 12:01 AM
চলতি অর্থবছরে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) আওতায় উন্নয়ন কার্যক্রম বাস্তবায়নে সরকার যে বরাদ্দ দিয়েছে, ডিসেম্বর পর্যন্ত ছয় মাসে এর মাত্র ২২ দশমিক ৪৮ শতাংশ অর্থ ব্যয় হয়েছে।
টাকার অঙ্কে চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে অক্টোবর পর্যন্ত সময়ে এর পরিমাণ ৬১ হাজার ৭৩৯ কোটি টাকা।
পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) এডিপি বাস্তবায়নের হালনাগাদ প্রতিবেদনে এ তথ্য তুলে ধরা হয়েছে।
আইএমইডির ওয়েবসাইটে ২০১০-১১ অর্থবছর পর্যন্ত বছরের প্রথমার্ধের অগ্রগতির তথ্য দেওয়া হয়েছে। সে তথ্য বিশ্লেষণ করে গত ১৩ বছরের প্রথমার্ধের সময়কালে এত কম বাস্তবায়ন আর দেখা যায়নি।
এর আগে ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে ২৩ দশমিক ৫৩ শতাংশ এডিপি বাস্তবায়িত হয়েছিল, সেটি ছিল তখন পর্যন্ত সবচেয়ে কম বাস্তবায়নের পরিসংখ্যান।
এবার সবচেয়ে কম এডিপি বাস্তবায়নের জন্য অর্থ সংকটকে দায়ী করছেন অর্থনীতিবিদ আহসান এইচ মনসুর।
“বিভিন্ন দেশ থেকে জ্বালানি তেল ও গ্যাসের বিল পরিশোধ করতে হওয়ায় সরকার বড় ধরনের অর্থ সংকটে পড়েছে। আর সংকটে পড়েই এডিপিতে অর্থের জোগান দিতে পারছে না। সে কারণে এবার বাস্তবায়ন কম হচ্ছে।”
সরকারকে এবার কমপক্ষে ৬০ থেকে ৭০ হাজার কোটি টাকার ঘাটতি মোকাবিলা করতে হবে বলেও মনে করেন বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান পিআরআই’র এই নির্বাহী পরিচালক।
এডিপি বাস্তবায়নের হার কম হওয়ার কারণ জানতে চাইলে আইএমইডি সচিব আবুল কাশেম মো. মহিউদ্দিন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী কৃচ্ছতা সাধন করা হয়েছে। গত বছরও (২০২২-২৩ অর্থবছর) কৃচ্ছতা সাধনের নির্দেশনা ছিল। কিন্তু এই বছর সেই নির্দেশনার বাস্তবায়নটা বেশি হয়েছে।
“গত বছরও কৃচ্ছতা সাধারণের একই নির্দেশনা থাকা সত্ত্বেও সরকারের জন্য কিছু গাড়ি ক্রয় করা হয়েছিল। কিন্তু এ বছর সরকারি গাড়ি কেনা একদম বন্ধ রয়েছে।”
তাছাড়া সরকারের অগ্রাধিকার প্রকল্প এবং চলতি অর্থবছরে শেষ হবে-এমন প্রকল্প ছাড়া অন্যগুলোতে অর্থছাড় কম করার নির্দেশনার কথাও তুলে ধরেন সচিব।
গত ২৪ জানুয়ারি পরিকল্পনা কমিশনের সভায় প্রকল্প বাস্তবায়ন মনিটরিং জোরদার করার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। অর্থবছরের বাকি সময়ে মনিটরিং জোরদার হলে শেষ পর্যন্ত এডিপি বাস্তবায়ন বাড়বে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
আইএমইডি’র প্রতিবেদন অনুযায়ী, সর্বোচ্চ বরাদ্দ প্রাপ্ত ১৫ মন্ত্রণালয় ও বিভাগে গড় বাস্তবায়ন হয়েছে ২৩ দশমিক ৪৫ শতাংশ।
চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জন্য সরকার দুই লাখ ৭৪ হাজার ৬৭৪ কোটি টাকার যে এডিপি অনুমোদন দিয়েছে, তাতে ৮০ শতাংশই বরাদ্দ পেয়েছে এসব মন্ত্রণালয় ও বিভাগ।
এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ৩২ দশমিক ৪৫ শতাংশ বাস্তবায়ন করেছে সেতু বিভাগ।
দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৩২ দশমিক ৩৩ শতাংশ বাস্তবায়ন করেছে রেলপথ মন্ত্রণালয়। তৃতীয় সর্বোচ্চ ৩২ দশমিক ০৩ শতাংশ বরাদ্দ ব্যয় করতে পেরেছে কৃষি মন্ত্রণালয়।
এছাড়া বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় ৩১ দশমিক ৮৫ শতাংশ, স্থানীয় সরকার বিভাগ ৩০ দশমিক ৫৭ শতাংশ বাস্তবায়ন করেছে।
এরপরে রয়েছে পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়, বাস্তবায়ন করেছে ২৭ দশমিক ১৬ শতাংশ; বিদ্যুৎ বিভাগ বাস্তবায়ন করেছে ২৬ দশমিক ৫২ শতাংশ, গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় ২২ দশমিক ৪৫ শতাংশ, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় ২১ দশমিক ০৩ শতাংশ, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় ১৯ দশমিক ৬৭ শতাংশ, সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ ১৬ দশমিক ৯৭ শতাংশ, শিল্প মন্ত্রণালয় ১৫ দশমিক ৯৩ শতাংশ, স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ ১৪ দশমিক ৯৯ শতাংশ, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ ১১ দশমিক ৬৪ শতাংশ এবং নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় বাস্তবায়ন করেছে মাত্র ৯ দশমিক ২৩ শতাংশ।