অর্থবছরের প্রথম মাসে সুখবর: জুলাইয়ে রপ্তানি বেড়েছে ১৪.৭২%

লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১.৬৫% বেশি আয় হয়েছে এ মাসে; কেবল পোশাক খাত থেকে এসেছে ২৮৮ কোটি ডলার।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 2 August 2022, 08:28 AM
Updated : 2 August 2022, 08:28 AM

অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে ৩৯৮ কোটি ৪৮ লাখ টাকার পণ্য রপ্তানি করেছে বাংলাদেশ, যা আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে ১৪ দশমিক ৭২ শতাংশ বেশি।

গত অর্থবছরের রেকর্ড ৫২ বিলিয়ন ডলারের পণ্য রপ্তানির ওপর ভর করে নতুন অর্থবছরে ৫৮ বিলিয়ন ডলারের রপ্তানি লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করেছে সরকার। এর মধ্যে জুলাই মাসে ৩৯২ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি হবে বলে আশা করা হচ্ছিল।

রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো ইপিবি মঙ্গলবার জুলাই মাসের রপ্তানির যে তথ্য প্রকাশ করেছে, তাতে দেখা যাচ্ছে, এ মাসে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১ দশমিক ৬৫ শতাংশ বেশি আয় হয়েছে।

আগের অর্থবছরের শেষ মাস জুনে ৪৯০ কোটি ৮০ লাখ ডলারের পণ্য রপ্তানি করে বাংলাদেশ, যা ছিল এককমাস হিসেবে সর্বোচ্চ। আগের বছরের একই মাসের চেয়ে প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ৩৭ শতাংশ।

Also Read: রপ্তানি আয়ে ৫২ বিলিয়ন ডলারের মাইলফলক

Also Read: ২০২১-২২ অর্থবছর: ৩৩ বিলিয়ন ডলারের রেকর্ড বাণিজ্য ঘাটতি

আগের অর্থবছরের শেষ মাস জুনে ৪৯০ কোটি ৮০ লাখ ডলারের পণ্য রপ্তানি করে বাংলাদেশ, যা ছিল এককমাস হিসেবে সর্বোচ্চ। আগের বছরের একই মাসের চেয়ে প্রবৃদ্ধি হিয়েছিল ৩৭ শতাংশ।

এ বছর জুলাই মাসের মোট রপ্তানির মধ্যে কেবল পোশাক খাত থেকে এসেছে ২৮৮ কোটি ডলার; এ খাতের ১৬ দশমিক ৬১ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে।

দীর্ঘদিন ধরে নিট পোশাকে প্রবৃদ্ধি বেশি থাকলেও এবার বেশি প্রবৃদ্ধি দেখা গেছে উভেন পোশাকে। এ খাতে রপ্তানি বেড়েছে ২৩ শতাংশ। আর নিট খাতে ১১ দশমিক ৮০ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে।

তবে টাকার অংকে এগিয়ে আছে নিট। জুলাই মাসে ১৬৫ কোটি ডলারের নিট পোশাক এবং ১২২ কোটি ডলারের উভেন পোশাক রপ্তানি হয়েছে।

পিছিয়ে আছে কৃষি, রাসায়নিক ও হিমায়িত পণ্য

ইপিবির তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, নতুন অর্থবছরে প্রথম মাসে মোট রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধি হলেও গুরুত্বপূর্ণ ও আলোচিত কিছু খাত লক্ষ্যমাত্রা থেকে পিছিয়ে গেছে। অনেক ক্ষেত্রে গত বছরের জুলাই মাসের তুলনায়ও পিছিয়ে গেছে।

গত অর্থবছরে হিমায়িত ও জ্যান্ত মাছ রপ্তানি হয়েছিল ৫৩ কোটি ২৯ লাখ ডলারের। নতুন অর্থবছরে ৬৩ কোটি ৪০ লাখ ডলারের পণ্য রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। সেই হিসাবে জুলাই মাসে ৪ কোটি ২৮ লাখ ডলারের হিমায়িত ও জ্যান্ত মাছ রপ্তানির আশা করা হয়েছিল।

কিন্তু বাস্তবে রপ্তানি হয়েছে ৩ কোটি ৬০ লাখ ডলারের পণ্য, যা গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ২ দশমিক ১২ শতাংশ এবং লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও ১৫ দশমিক ৯২ শতাংশ কম।

গত অর্থবছরে ১১৬ কোটি ২২ লাখ ডলারের কৃষিপণ্য রপ্তানির পর ২০২২-২০২৩ অর্থবছরে ১৩৯ কোটি ৪১ লাখ ডলারের কৃষিপণ্য রপ্তানির লক্ষ্য ধরা হয়েছে। এর মধ্যে জুলাই মাসে রপ্তানির লক্ষ্য ছিল ৯ কোটি ৪২ লাখ ডলারের কৃষিপণ্য।

বাস্তবে জুলাই মাসে রপ্তানি হয়েছে ৬ কোটি ৩৯ লাখ ডলারের পণ্য। অথচ গত অর্থবছরের জুলাই মাসে ৯ কোটি ৮১ লাখ ডলারের কৃষিপণ্য রপ্তানি হয়েছিল। অর্থাৎ গত মাসে যে পরিমাণ কৃষিপণ্য রপ্তানি হয়েছে তা আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে ৩৪ দশমিক ৮৯ শতাংশ, এবং লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৩২ দশমিক ১৭ শতাংশ কম।

বাংলাদেশ থেকে রপ্তানি হওয়া রাসায়নিক পণ্যের মধ্যে অধিকাংশই ওষুধ পণ্য। গত অর্থবছরে রাসায়নিক খাতে ৩৬ কোটি ৪০ লাখ ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছিল। নতুন অর্থবছরে ৪৩ কোটি ডলারের রাসায়নিক পণ্য রপ্তানির লক্ষ্য ঠিক করেছে সরকার।

এর মধ্যে জুলাই রপ্তানির লক্ষ্য ছিল ২ কোটি ৯০ লাখ ডলার। সেখানে ১ কোটি ৯০ লাখ ডলারের রাসায়নিক পণ্য রপ্তানি হয়েছে, যার মধ্যে ওষুধ রয়েছে ১ কোটি ৩১ লাখ ডলারের।

বাংলাদেশের অন্যতম রপ্তানিপণ্য পাট জুলাই মাসে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ২৬ শতাংশ পিছিয়ে গেছে, যদিও আগের অর্থবছরের একই মাসের তুলনায় ৫ দশমিক ১৭ শতাংশ এগিয়েছে।

জুলাই মাসে ৮ কোটি ৬৫ লাখ ডলারের রপ্তানি লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে রপ্তানি হয়েছে ৬ কোটি ৩৯ লাখ ডলারের পাট ও পাটজাত পণ্য। গত অর্থবছরের জুলাই মাসে এ খাতে আয় ছিল ৬ কোটি ডলার।

২০২১-২০২২ অর্থবছরে ১১২ কোটি ৭৬ লাখ ডলারের পাট ও পাট জাতীয় পণ্য রপ্তানির বিপরীতে চলতি অর্থবছরে ১২৮ কোটি ডলার আয়ের আশা করছে সরকার।

একইভাবে হোম টেক্সটাইল খাতেও লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ২৮ শতাংশ কম রপ্তানি হয়েছে। তবে গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ৩ দশমিক ৮৯ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে।

গত অর্থবছরে ১৬২ কোটি ১৯ লাখ ডলারের হোম টেক্সটাইল পণ্য রপ্তানির ওপর ভর করে চলতি বছরে ১৯৮ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানির আশা করা হচ্ছে। অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ের জন্য লক্ষ্য ধরা হয়েছে ১৩ কোটি ৩৮ লাখ ডলার, সেখানে রপ্তানি হয়েছে মাত্র ৯ কোটি ৫৯ লাখ। গত অর্থবছরের জুলাইয়ে রপ্তানি হয়েছিল ৯ কোটি ২৩ লাখ ডলারের পণ্য।

গত অর্থবছরে যে কয়টি ক্যাটাগরির পণ্য এক বিলিয়ন ডলারের ঘর অতিক্রম করেছিল তার মধ্যে হোম টেক্সটাইল ও পাট পণ্য অন্যতম।