আইএমএফ স্বীকৃত পদ্ধতি হিসাব করলে রিজার্ভ ২৩ বিলিয়ন ডলারের ঘরে।
Published : 06 Jul 2023, 10:35 PM
আমদানি দায় মেটাতে এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নে (আকু) সবশেষ অর্থ পরিশোধের পর বাংলাদেশের বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভ দাঁড়িয়েছে ২৯ দশমিক ৯৭ বিলিয়ন ডলার।
এর আগে গত ৮ মে সাত বছর পর রিজার্ভ ৩০ বিলিয়ন ডলারের নিচে নেমেছিল। তখনও মার্চ-এপ্রিল দুই মাসের আকুর দায় পরিশোধ করা হয়েছিল।
বৃহস্পতিবার আকুর মে-জুন মাসের ১ দশমিক ০৯ বিলিয়ন ডলার দেনা পরিশোধের কথা জানিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সহকারী মুখপাত্র ও পরিচালক সরোয়ার হোসেন।
তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আকুর দায় শোধ করার পর রির্জাভের স্থিতি বৃহস্পতিবার হয়েছে ২৯ দশমিক ৯৭ বিলিয়ন ডলার।”
রিজার্ভ নিয়ে যে তথ্য জানিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক, তা বিদেশি মুদ্রার বাংলাদেশ ব্যাংকের নিজস্ব ‘গ্রস রিজার্ভ’ হিসাব।
আকুর দায় পরিশোধের আগে গ্রস রিজার্ভের পরিমাণ ছিল ৩১ দশমিক ১৬ বিলিয়ন ডলার।
‘গ্রস রিজার্ভ’ ২৯ বিলিয়ন ডলারের উপরে থাকলেও বিপিএম৬ (ব্যালেন্স অব পেমেন্ট অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল ইনভেস্টমেন্ট পজিশন) পদ্ধতিতে হিসাব করলে এই রিজার্ভ দাঁড়ায় ২৩ বিলিয়ন ডলার।
‘গ্রস রিজার্ভ’ ৩০ বিলিয়ন ডলারের নিচে নেমে যাওয়ার মতো পরিস্থিতির মধ্যেও আমদানি দায় শোধে ব্যাংকগুলোর কাছে ডলার বিক্রি অব্যাহত রয়েছে চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম থেকেই।
কোভিড মহামারীর চাপ সামলে উঠতে থাকা অর্থনীতি ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেইন-রাশিয়ার যুদ্ধের খাঁড়ায় পড়ে। দূরের এ যুদ্ধের আঁচে বাংলাদেশেরও আমদানি খরচ যায় বেড়ে।
বৈশ্বিক ও অভ্যন্তরীণ চাপে ডলারের বিপরীতে মান হারাতে থাকে টাকা। আমদানি খরচের বিপরীতে রপ্তানি ও রেমিটেন্স প্রবৃদ্ধি আনুপাতিক হারে না বৃদ্ধি পাওয়ায় চাপে পড়ে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ।
২০২২ সালের জুলাই থেকে আমদানি নিয়ন্ত্রণে কড়াকড়ি আরোপ করেও চাহিদা মেটাতে বাংলাদেশ ব্যাংকও বাণিজ্যিক ব্যাংকের কাছে ডলার বিক্রি শুরু করে।
এতে ক্ষয় হতে থাকা রিজার্ভ গত ডিসেম্বরে থাকা ৩৩ দশমিক ৭৪ বিলিয়ন ডলার গত জানুয়ারিতে ৩২ দশমিক ২২ বিলিয়ন, ফেব্রুয়ারিতে ৩২ দশমিক ৩৩ বিলিয়ন, মার্চে ৩১ দশমিক ১৪ বিলিয়ন ও এপ্রিল শেষে ৩১ দশমিক ০৬ বিলিয়নে দাঁড়ায়। এরপর
মে শেষে ২৯ দশমিক ৮৭ বিলিয়ন ও জুন শেষে হয় ৩১ দশমিক ২০ বিলিয়ন ডলার।
আমদানি দায় পরিশোধ করতে গিয়ে বাংলাদেশের ব্যালেন্স অব পেমেন্টে ঘাটতি দেখা দেয়। সেই ঘাটতি সামাল দিতে গত জানুয়ারিতে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল- আইএমএফের কাছে ৪৭০ কোটি ডলার ঋণ পেতে সমঝোতায় যায় বাংলাদেশ।
ওই সময়ে সংস্থাটি পূর্বাভাস দিয়ে বিবৃতিতে বলেছিল, বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ২০২২-২৩ অর্থবছরের শেষ নাগাদ ৩০ বিলিয়ন ডলারের ঘরে নেমে আসবে।
ঋণ সমঝোতার পর আন্তর্জাতিক এ সংস্থার পরামর্শ আসে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ গণনায় আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত বিপিএম৬ পদ্ধতি অনুসরণ করার।
আইএমএফের পদ্ধতিতে হিসাব করলে বৈদেশিক সম্পদ গণনায় সকল বৈদেশিক দায় ও ঋণ এবং রিজার্ভের অর্থ অন্য কোনো কাজে ব্যবহার করলে তা মূল রিজার্ভ থেকে বাদ যাবে।
বাংলাদেশ সরকার রিজার্ভের অর্থে ৭ বিলিয়ন ডলারের রপ্তানি উন্নয়ন তহবিল গঠন করেছিল, যা এখন ৪ বিলিয়ন ডলারের নিচে নামিয়ে এনেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
এটি ছাড়াও রিজার্ভ থেকে বাংলাদেশ বিমান ও শ্রীলঙ্কাকে কিছু অর্থ ঋণ দেওয়া হয়। আবার ইডিএফ ছাড়া আরও দুটি তহবিল গঠন করে পরিচালনা করছে বৈদেশিক মুদ্রায়। সব মিলিয়ে এর পরিমাণ ৭ বিলিয়ন ডলারের উপরে হবে। সেই হিসাবে তহবিল ও ধার দেওয়া অর্থ বাদ দিলে রিজার্ভ ২৩ বিলিয়ন ডলারের ঘরে নেমে আসে।
বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৩ মাসের আমদানি দায় পরিশোধ করার সক্ষমতা থাকা প্রয়োজন বলে ২০২২ সালের নভেম্বরে ঋণ সমঝোতা করার সময়ে জানিয়েছিল আইএমএফ।
নানা কারণে গত জুলাই থেকে আমদানি নিয়ন্ত্রণ করে আসার পর গত মে শেষে গড়ে প্রতি মাসে ৬ দশমিক ১২ বিলিন ডলার আমদানি দায় পরিশোধ করছে বাংলাদেশ। এ হিসাবে তিন মাসের আমদানি দায় মেটাতে বাংলাদেশের নিট রিজার্ভ প্রয়োজন ১৮ বিলিয়ন ডলার।