এ দুই সংগঠনের নেতারা বলছেন, ডলারের বাজার পর্যবেক্ষণ এবং আমদানি-রপ্তানি পরিস্থিতি বুঝতে তাদের আরও সময় প্রয়োজন।
Published : 08 Sep 2022, 08:28 PM
মুদ্রাবাজারে অস্থিরতা কমাতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সিদ্ধান্ত মেনে বিদেশি এক্সচেঞ্জ হাউজ থেকে অভিন্ন দরে ডলার কেনাবেচা করতে আরও সময় চাইল ব্যাংক নির্বাহীদের সংগঠন এবিবি এবং বাংলাদেশ ফরেইন এক্সচেঞ্জ ডিলারস অ্যাসোসিয়েশন-বাফেদা।
এ দুই সংগঠনের নেতারা বলছেন, ডলারের বাজার পর্যবেক্ষণ এবং আমদানি-রপ্তানি পরিস্থিতি বুঝতে তাদের আরও সময় প্রয়োজন।
ডলারের অভিন্ন দর নির্ধারণে গত ১৪ অগাস্ট হওয়া বৈঠকের অগ্রগতি জানতে বৃহস্পতিবার বিকালে বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর আহমেদ জামালের সভাপতিত্বে বৈঠক শুরু হয়।
অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স, বাংলাদেশের (এবিবি) নির্বাহী কমিটির সদস্য এবং বাংলাদেশ ফরেইন এক্সচেঞ্জ ডিলারস অ্যাসোসিয়েশনের (বাফেদা) নেতারা বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে ওই বৈঠকে অংশ নেন।
বিকেল ৪ টাকা থেকে দেড় ঘণ্টা ওই বৈঠক চলে। শেষ দিকে বৈঠকে যোগ দেন গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার।
বৈঠক শেষে বাফেদার চেয়ারম্যান ও সোনালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আফজাল করিম বলেন, “আজকের বৈঠকে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। ডলারের বাজার পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। গভর্নর জানিয়েছেন, লেনদেন ভারসাম্য অনেকটা স্বাভাবিক হয়ে আসছে। অর্থাৎ, আমদানি-রপ্তানির ব্যবধানে চলতি হিসাবের ঘাটতি কমে আসতে শুরু করেছে।”
ডলারের দর নির্ধারণের বিষয়ে এবিবি ও বাফেদা রোববার বৈঠক করবে জানিয়ে তিনি বলেন, “সেই বৈঠকে সিদ্ধান্ত নিয়ে সবাইকে জানিয়ে দেওয়া হবে। ডলারের বাজার দর যেখানে যায়, সেটি দেখেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। গভর্নরও তাই বলেছেন।”
সরবরাহে টান পড়ে চাহিদা বাড়লে গত বছরের মাঝামাঝি থেকে ডলারের দর বাড়তে থাকে। আর চলতি বছরের মার্চের পর থেকে সংকট তীব্র হলে ক্রমে আকাশচুম্বী হতে থাকে প্রধান এ বিদেশি মুদ্রার দর। এরপর অস্থিরতা কমাতে নীতি সিদ্ধান্তসহ বেশ কিছু পদক্ষেপ নেয় বাংলাদেশ ব্যাংক।
ধারাবাহিক এসব উদ্যোগের অংশ হিসেবে গত ২৬ মে বাংলাদেশ ব্যাংক বৈঠক করে বাফেদা ও ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীদের সংগঠন এবিবির সঙ্গে। ওই বৈঠকে নির্দিষ্ট একটি ‘সিলিংয়ের’ মধ্যে আন্তঃব্যাংকে লেনদেনে ডলারের একক দর নির্ধারণের সিদ্ধান্তে সম্মতি দিয়েছিল বাফেদা।
বাংলাদেশ ব্যাংক এর আগে আন্তঃব্যাংক লেনদেনে ডলারের দর নির্ধারণের বিষয়টি বাজারের ওপর ছেড়ে দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছিল। নিয়মিত টাকার মান কমানোর পাশাপাশি চাহিদা মেটাতে বড় অঙ্কের ডলারও বিক্রি করে আসছিল।
তখনই আলোচনা শুরু হয়েছিল, একক দর নির্ধারণ করবে বাফেদা। ব্যাংকগুলো নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে ডলারের বিনিময় হার কেমন হবে সেটির প্রস্তাব দেবে। আর বাংলাদেশ ব্যাংক সেই দর বাস্তবায়নে তদারকি করবে।
ওই বৈঠকের পর মে মাসের শেষ সপ্তাহে বাফেদা একটি প্রস্তাবও জমা দেয়। সে অনুযায়ী কিছু সিদ্ধান্ত এলেও পরের কার্যক্রম ঝিমিয়ে পড়ে।
এর মধ্যে ডলারের সংকট আরও বাড়লে এবং আন্তঃব্যাংকে কোনো নির্দিষ্ট দর না থাকায় বাড়তি মুনাফা করতে কিছু ব্যাংক ডলার লেনদেন একেবারে কমিয়ে দেয়। এতে আন্তঃব্যাংক লেনদেন অনেকটাই স্থবির হয়ে পড়ে।
সংকটে থাকা ব্যাংকগুলো দেশের অন্য ব্যাংকে ডলার না পেয়ে আমদানি দায় মেটাতে বিদেশি এক্সচেঞ্জ হাউস থেকে বা অন্য ব্যাংকের কাছ থেকে উচ্চ দরে ডলার কিনতে বাধ্য হয়। কখনও কখনও গ্রাহককেও ডলার সংগ্রহ করতে হয়।
এ সময়ে ব্যাংকে নগদ ডলারের দর ওঠে ১০৭ টাকা, আর খোলা বাজারে এক পর্যায়ে তা রেকর্ড ১২১ টাকায় ওঠে।
মাঝে কিছুটা কমে এলেও বৃহস্পতিবার খোলাবাজারে ডলারের দর কিছুটা বেড়ে সর্বোচ্চ ১১৪ টাকায় বিক্রি হয়েছে, যদিও কেন্দ্রীয় ব্যাংক ডলার বিক্রি করছে ৯৫ টাকা দরে।
বাংলাদেশ ব্যাংকে বৈঠকের পর এবিবি চেয়ারম্যান ও ব্র্যাক ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সেলিম আর এফ হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, বৈদেশিক বাণিজ্যে লেনদেন ঘাটতি ‘কমে আসায়’ আগামী দু মাসের মধ্যে ডলারের বাজার স্থিতিশীল হয়ে আসবে বলে তারা আশা করছেন।
“আমরা বাজার পরিস্থিতি বোঝার চেষ্টা করছি। আজকের বৈঠকে বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে এ বিষয়ে তথ্য-আদান প্রাদন করা হয়েছে।”