পিআরআই মনে করে, বড় ধরণের হস্তক্ষেপের মুখোমুখি না হলে আগামী মাসের মধ্যভাগে আইএমএফ বাংলাদেশের অনুকুলে দ্বিতীয় কিস্তির ৬৮ কোটি ১০ লাখ ডলার ছাড় করতে পারে।
Published : 21 Nov 2023, 08:00 PM
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) শর্ত পূরণে ব্যক্তি পর্যায়ের করের আওতা সম্প্রসারণ করে রাজস্ব আহরণ বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট (পিআরআই)।
এছাড়াও স্থিতিশীল রিজার্ভের জন্য ডলারের বিনিময় হার নির্ধারণ বাজারের ওপর ছেড়ে দেওয়ার পরামর্শও এসেছে প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে।
পিআরআই মনে করে, বড় ধরণের হস্তক্ষেপের মুখোমুখি না হলে আগামী মাসের মধ্যভাগে আইএমএফ বাংলাদেশের অনুকুলে দ্বিতীয় কিস্তির ৬৮ কোটি ১০ লাখ ডলার ছাড় করতে পারে।
মঙ্গলবার বনানীতে পিআরআই কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে ‘আইএমএফ ও বাংলাদেশ’ শীর্ষক এক সংবাদ সম্মেলন হয়।
পিআরআইয়ের গবেষণা পরিচালক এম এ রাজ্জাকের স্বাগত বক্তব্য দিয়ে শুরু হওয়া এই সংবাদ সম্মেলনে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর।
তিনি বলেন, “সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশের অর্থনীতি এমন এক সন্ধিক্ষণে, এক বছরের বেশি সময় ধরে উচ্চ মূল্যস্ফীতি সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রার ব্যয় বাড়াচ্ছে। রাজস্ব আহরণে কম প্রবৃদ্ধি এবং বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ নিয়ে সংকটের মুখোমুখি হয়েছে।
আইএমএঢের সাবেক এই কর্মকর্তা বলেন, “তবে আশার কথা হচ্ছে গত মাসে আইএমএফ প্রতিনিধি দলের সঙ্গে দ্বিতীয় কিস্তি ছাড়ে বাংলাদেশ ব্যাংক ও এনবিআরসহ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে ধারাবাহিক যেসব বৈঠক হয়েছে তাতে বাংলাদেশ শর্তপূরণে কিছুটা পিছিয়ে থাকলেও যে অগ্রগতি করেছে, তাতে আইএমএফ প্রতিনিধি দল সন্তুষ্ট বলে আমাদের মনে হয়েছে।
“বড় ধরণের কোনও হস্তক্ষেপের মুখোমুখি না হলে আগামী মাসের মধ্যভাগে আইএমএফ বাংলাদেশের অনুকুলে দ্বিতীয় কিস্তির ৬৮ কোটি ১০ লাখ ডলার ছাড় করতে পারে বলে আমাদের মনে হচ্ছে।”
তিনি বলেন, আইএমএফ এর শর্তের মধ্যে অন্যতম ব্যালান্স অব পেমেন্টের স্থিতি এখন মাসে মাসে রিপোর্ট করা হচ্ছে। এছাড়াও জিডিপির ত্রৈমাসিক হিসাব করা হচ্ছে।
অভিজ্ঞ এই অর্থনীতিবিদ মনে করেন, দেশের অর্থনীতির জন্য এখন প্রধান চ্যালেঞ্জ হচ্ছে সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা আনতে কর ব্যবস্থার সংস্কার এবং রাজস্ব বৃদ্ধি করা।
দেশে বর্তমানে সামষ্টিক অর্থনীতিতে চলমান চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা ও সামষ্টিক অর্থনৈতিক অবস্থার আরও অবনতি এড়াতে কিছু নীতি সংস্কারের ওপর গুরুত্বারোপ করেন তিনি।
সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা এবং আইএমএফের শর্তপূরণে ব্যক্তি পর্যায়ে আয়কর আহরণ জিডিপির ২ শতাংশ বাড়াতে হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, “পিআরআইর গবেষণায় দেখা গেছে, জিডিপির ২ শতাংশ আয়কর বৃদ্ধি করা গেলে ০.৫১ শতাংশ দারিদ্র্যের হার হ্রাস করা সম্ভব হবে।
“অর্থাৎ চলতি অর্থবছরে আয়কর খাত থেকে রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে ১ লাখ ৫৯ হাজার কোটি টাকা। এর সাথে জিডিপির ২ শতাংশ অতিরিক্ত রাজস্ব আহরণ করতে হলে এই খাত থেকে মোট ২ লাখ ৬০ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব আয় করতে হবে।”
এই অতিরিক্ত রাজস্ব আহরণের জন্য তিনি এনআইডি সিস্টেমের সঙ্গে সংযুক্ত একটি সর্বজনীন নিবন্ধন ব্যবস্থার মাধ্যমে টিআইএন নিবন্ধন বৃদ্ধির পরামর্শ দেন।
ব্যক্তি আয়কর দাতার আওতা বাড়াতে রাজস্ব বোর্ড কোম্পানি এবং সকল চাকরিজীবীর একটি কেন্দ্রীয় ডেটাবেস তৈরি করতে পারে বলে মত দেন তিনি।
রাজস্ব আহরণ বাড়ানোর জন্য রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন কোম্পানিগুলোর সংস্কারের পরামর্শও রাখেন তিনি।
আহসান এইচ মনসুর বলেন, “দেশে ইতিমধ্যেই ভ্যাট আইনের প্রয়োগ শুরু হয়েছে। বেসরকারি পর্যায়ে ইলেক্ট্রনিক্স ফিসক্যাল ডিভাইস স্থাপন শুরু হয়েছে। ইতিমধ্যেই ৬০ হাজার ইএফডি মেশিন স্থাপন করা হয়েছে। এই কার্যক্রমের পর্যবেক্ষণ করে রাজস্ব আহরণ শক্তিশালী করা যায়।”
এসময় তিনি দেশি-বিদেশি ঋণের সুদ ও ঋণ পরিশোধের জন্য রপ্তানি আয় বৃদ্ধি, রেমিট্যান্স আহরণ বাড়াতে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণের ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
ড. মনসুর বলেন, “বর্তমানে আমাদের অন্যতম প্রধান সমস্যার একটি বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ও ডলারের বিনিময় হারে অস্থিরতা।”
নির্বাচনের আগে তেমন কিছু করা সম্ভব হবে না উল্লেখ করে তিনি বলেন, রিজার্ভ ও ডলারের বিনিময় হারে স্থিতিশীলতার জন্য মধ্য ও দীর্ঘ মেয়াদি নীতি গ্রহণ করতে হবে।
বিশেষ করে ডলারের বিনিময় হার বাজারের ওপর ছেড়ে দেয়া উচিত বলে তিনি মনে করেন।
সংবাদ সম্মেলনে ড. আব্দুর রাজ্জাক এক প্রশ্নের উত্তরে বলেন, বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো অর্থনৈতিক অস্থিতিশীলতার সাথে রাজনৈতিক অস্থিরতা। এমন পরিস্থিতিতে প্রথম জাতীয় নির্বাচন।
“এই কঠিন পরিস্থিতিতে দেশের সামষ্টিক অর্থনীতি স্থিতিশীল রাখতে হবে।”
তিনি বলেন, আইএমএফ এর শর্ত পূরণে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে রাজস্ব আহরণ বাড়ানো। তবে এ ক্ষেত্রে নতুন করদাতা যুক্ত করতে হবে।
যারা কর দিয়ে যাচ্ছেন তাদের ওপর আরও চাপ দেওয়া ভালো ফল বয়ে আনে না বলে উল্লেখ করেন তিনি।