জুলাইতে আমদানি ৬ বিলিয়নে নেমেছে, ডলার সংকটে ‘কিছুটা স্বস্তি’: সালমান

ডলার শক্তিশালী হওয়া পশ্চিমা অর্থনীতির জন্য সহায়ক মনে হলেও ভবিষ্যতে ‘হিতে বিপরীত’ হতে পারে বলে মনে করেন সালমান এফ রহমান।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 29 July 2022, 04:35 PM
Updated : 29 July 2022, 04:35 PM

বাংলাদেশ ব্যাংকের আমদানি কমানোর উদ্যোগ কাজে আসতে শুরু করেছে জানিয়ে সালমান এফ রহমান বলেছেন, জুলাই মাসে আমদানি ছয় বিলিয়ন ডলারে নেমেছে, যা ডলার সংকটের বিদ্যমান ‘সমস্যার কিছুটা সুরাহা’ করবে।

বিপুল বাণিজ্য ঘাটতির কারণে বাংলাদেশে যেভাবে ‘ডলারের টান’ পড়েছিল সরকারের উদ্যোগের ফলে তা অনেকটাই কমে এসেছে বলেও দাবি করেন প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক এই উপদেষ্টা।

শুক্রবার রাজধানীর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে উজবেকিস্তানের সফররত প্রতিনিধিদলের সঙ্গে বৈঠকের পর বাংলাদেশের চলমান ডলার সংকট, রিজার্ভ ও পুঁজিবাজার নিয়ে তাকে প্রশ্ন করেন সাংবাদিকরা।

তখন তিনি বলেন, "কোভিডের সময় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যেভাবে প্রো-অ্যাকটিভ উদ্যোগগুলো নিয়েছিলেন, এখানে ডলারের ক্ষেত্রেও তিনি আগেভাগে পদক্ষেপ নেওয়া শুরু করেছেন। বাংলাদেশ ব্যাংক যথাসময়ে আমদানি কমাতে উদ্যোগগুলো নিয়েছে।

“মাসে ৮ বিলিয়ন ডলার আমদানি করা হত, সেটা গত মাসে ৭ বিলিয়ন এবং এ মাসে ছয় বিলিয়নে নেমে গেছে। ফলে এই জায়গায়ও আমাদের সমস্যাটা একটু সলভ হবে।"

কোভিড মহামারীর পরিস্থিতির উন্নতি হলে অর্থনীতি গতিশীল হলে আমদানি বাড়তে শুরু করে। চাহিদা বাড়ায় বিশ্ববাজারে পণ্যের দামও বাড়ে। এরসঙ্গে ইউক্রেইন-রাশিয়া যুদ্ধে আমদানি ব্যয় আরও বেড়ে যায়। এতে আমদানি ব্যয় বেড়ে মাসে আট বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যায়। বাড়তি ব্যয় মেটাতে গিয়ে রিজার্ভে চাপ পড়ে এবং ডলারের দাম বাড়তে থাকে।

এরপর এপ্রিলের মাঝামাঝিতে বাংলাদেশ ব্যাংক আমদানিতে কড়াকড়ি করে। সরকারও ব্যয় সাশ্রয়ের পথে যায়।

বাংলাদেশ ব্যাংকের আমদানির পরিসংখ্যান বলছে, গত জুনে পণ্য আমদানির এলসি খোলা হয়েছে ৭৩৮ কোটি ডলার। মে মাসে যা ছিল ৮২০ কোটি ডলার। যদিও জুনে এলসি নিষ্পত্তি প্রায় ১৮ শতাংশ বেড়ে ৮৫৫ কোটি ডলারে ওঠে। তবে এসব নিষ্পত্তি এলসির বড় অংশই আগের মাসগুলোতে খোলা। আর এলসি খোলা কমে যাওয়া মানে সামনের দিনে আমদানি ব্যয় কমবে।

সম্প্রতি আইএমএফের কাছ থেকে সাড়ে চার বিলিয়ন ডলার ঋণ চেয়ে দেওয়া প্রস্তাবকেও পরিস্থিতি সামলাতে সরকারের আগাম পদক্ষেপের অংশ বলে মনে করছেন প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান।

ডলারের দাম বেড়ে যাওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, শুধু বাংলাদেশে নয়, যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় ব্যাংক সুদহার বাড়িয়ে দেওয়ায় সব দেশের মুদ্রার বিপরীতেই ডলারের মূল্যমান শক্তিশালী হচ্ছে।

আপাতদৃষ্টিতে তা পশ্চিমা অর্থনীতির জন্য সহায়ক মনে হলেও ভবিষ্যতে এটি ‘হিতে বিপরীত ফল’ বয়ে আনতে পারে বলেও মনে করেন তিনি।

তিনি বলেন, মূল কারণটা হল ফেডারেল রিজার্ভ সুদের হার বাড়িয়ে দিয়েছে। বৃহস্পতিবার বলেছে, আরও বাড়াবে। যখনই ফেডারেল রিজার্ভ সুদের হার বাড়ায়, তখন ডলার আকর্ষণীয় হয়ে যায়। লোকজন ডলারে বিনিয়োগ করতে চায়।

এভাবে আন্তর্জাতিকভাবে ডলারের চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় বিশ্বজুড়ে ডলারের বিপরীতে স্থানীয় মুদ্রার মান কমছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।

তিনি বলেন, "আমি মনে করি ফেডারেল রিজার্ভ যেভাবে ডলারের ইন্টারেস্ট রেট বাড়াচ্ছে, এটা তাদের এন্টিতেও যেতে পারে। ইনফ্লেশনটা নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য তারা ইন্টারেস্ট রেটটা বাড়াচ্ছিল। কিন্তু ভিতরে ভিতরে তাদের ইনফ্লেশন বেড়ে যাচ্ছে তারা প্রকাশ করছে না।

“এই ইন্টারেস্ট রেট বাড়ানোতে ওরা রিসেশনে (মন্দা) চলে যেতে পারে। সেটার লক্ষণ আমরা ইতোমধ্যেই দেখতে পাচ্ছি। চলতি বছরের শেষদিকে জিনিসটা স্থিতিশীল হয়ে যাবে।"

বিশ্বব্যাপী পণ্য মূল্যের অস্থিতিশীলতার কারণে বাংলাদেশের রপ্তানি বাজার আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কাও করছেন সালমান।

তার মতে, মূল্যস্ফীতি বাড়তে থাকলে ইউরোপ ও আমেরিকায় মন্দা দেখা দিতে পারে। তখন বাংলাদেশের রপ্তানি বাধাগ্রস্ত হবে। এজন্য তিনি বিকল্প বাজার খোঁজার পরামর্শ দেন।

টানা পতন ঠেকাতে পুঁজিবাজারে ফ্লোর প্রাইস বেঁধে দেওয়ার পদক্ষেপকে ‘সময়োপযোগী’ মন্তব্য করে তিনি বলেন, বিশ্বের অন্যান্য শেয়ারবাজারের মত বাংলাদেশেও অস্থিতিশীল পরিস্থিতি বিরাজ করছে। এখন যে ফ্লোর প্রাইসটা বেঁধে দেওয়া হয়েছে সেটা ‘খুবই ভালো’ হয়েছে।

“বিশ্বের অন্যান্য শেয়ারবাজারের মত বাংলাদেশের শেয়ারবাজারের ওই ধরনের ডেপথ নেই। কারণ হচ্ছে একটা পরিপূর্ণ মার্কেটে ৮০ শতাংশ থাকে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী, বাকিরা থাকেন খুচরা বিনিয়োগকারী। কিন্তু আমাদের মার্কেটে ঠিক এর উল্টো। এ কারণে আমাদের শেয়ারবাজারের স্থিতিশীলতা বা গভীরতা নেই। যেকোনো পরিস্থিতিতে খুচরা বিনিয়োগকারীরা তাড়াতাড়ি পেনিকড হয়ে যান,” যোগ করেন তিনি