৪ হাত ঘুরে চলে ডিমের কারবার

ডিমের কারবারে যুক্ত সবাই দাম বৃদ্ধির জন্য একে অন্যকে দেখাচ্ছেন।

শাহরিয়ার নোবেলবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 6 Oct 2022, 07:27 PM
Updated : 6 Oct 2022, 07:27 PM

দামের অস্থিরতায় আবার আলোচনায় ডিম, যা দেশে প্রাণীজ আমিষের সহজলভ্য উৎস। আর সেই কারণে এই দামের হেরফের ভাবায় সব শ্রেণির মানুষকেই।

মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২০-২১ অর্থবছরে দেশে ডিম উৎপাদন ছিল মোট ২ হাজার ৫৭ কোটি।

আর তাতে বছরে প্রতিজন নাগরিকের ডিমের প্রাপ্যতা দাঁড়ায় ১২১টি। যেখানে আগের বছর তা ছিল ১০৪টি।

গত অগাস্ট মাসে ডিমের দাম চড়তে চড়তে ১৬০ টাকায় উঠে গিয়েছিল, এরপর নানা উদ্যোগে ১২০ টাকায় নেমে আসে দাম। এখন আবার তা বেড়ে দেড়শ ছুঁয়েছে।

দিন এনে দিন খাওয়া মানুষ সেলিনা বেগম গত রোববার ঢাকার মিরপুরের দুই নম্বর বাজারে এসেছিলেন মুরগির ডিম কিনতে। হালি ৪৮ টাকা আর ডজন ১৪০ টাকা শুনে দমে যান তিনি। শেষে ভাঙা ডিম ৩০ টাকা হালিতে কিনে রওনা হন বাসার দিকে।

একই দিন মহাখালী কাঁচাবাজারে ডিমের ডজন ছিল কমপক্ষে ১৫০ টাকা। একই দাম ছিল মিরপুরের শাহ স্মৃতি মার্কেটেও। প্রতিটি মুরগির ডিম কিনতে লাগছিল প্রায় ১২ টাকা আর হাঁসের ডিম ১৭ টাকা।

বাজারের বাইরে বিভিন্ন কোম্পানির প্যাকেটজাত ডিম বিভিন্ন সুপারশপ ও অনলাইনে বিক্রি হচ্ছে প্রতি ডজন ১৭৫ থেকে ২২০ টাকা পর্যন্ত।

দাম বাড়ছে কীভাবে?

ডিমের দামের নতুন করে বেড়ে যাওয়ার পেছনের কারণ খুঁজতে গিয়ে দেখা যায়, চার হাত বদলে এই পণ্য আসছে ভোক্তার কাছে।

খামারি থেকে ডিম কেনে এক শ্রেণির সরবরাহকারী বা এজেন্ট, তাদের কাছ থেকে কেনে আড়তদাররা, তাদের কাছ থেকে ডিম যায় পাইকারি দোকানে, সেখান থেকে যায় খুচরা দোকানে।

মুরগির খামারিদের কাছ থেকে আসা ডিম হাত বদলে প্রতিটিতে দাম দুই টাকার মতো বেড়ে যায়।

তবে তার লাভ খানিকটাই পান বলে দাবি করছেন খামারিরা। আড়তদাররা বলছেন, মধ্যস্বত্বভোগী সরবরাহকারীরাই লাভ কুড়িয়ে নিচ্ছে। সরবরাহকারীরা আবার দুষছেন বড় কোম্পানিগুলোকে। বড় কোম্পানিগুলো আবার সেই অভিযোগ অস্বীকার করছে।

Also Read: একটা ডিমের দাম ১৩-১৪ টাকা হতে পারে না: কৃষিমন্ত্রী

Also Read: ডিমের হালি ৫০ টাকার উপরে, খামারিরা বলছেন, মুরগি ‘কমেছে বলে’

Also Read: ‘ডিম-মুরগির হঠাৎ দাম বাড়িয়েছে মধ্যস্বত্ত্বভোগী’

খামারিরা দেখাচ্ছেন ফিডের দাম

ঢাকায় আসা ডিমের বড় অংশই আসে পাশের জেলা ময়মনসিংহ ও গাজীপুর থেকে।

ময়মনসিংহের ভালুকার উথুরা এলাকার খামারি মো. রাশেদ ডিমের দাম বাড়ার জন্য পোলিট্র ফিডের দাম বাড়াকে কারণ দেখান।

রাশেদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমার খামারে ডিমের উৎপাদন খরচই পড়ে যায় ১০ টাকা ৪০ পয়সা। আমি হয়ত ৫ থেকে ১০ পয়সা বেশি দাম পাচ্ছি।”

লাভ হচ্ছে না দাবি করে তিনি বলেন, “সব মুরগি ডিম পাড়ছে না। খাদ্যের দাম দুই বছরে দ্বিগুণ হয়েছে। এই অবস্থায় এত কম লাভ পেলে নতুন করে মুরগি বসিয়ে আর এই খাতে ব্যবসা করা সম্ভব না।”

দুই মাস আগে ডিমের দাম বেড়ে যাওয়ার পর কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক এক অনুষ্ঠানে বলেছিলেন, ডিমের দাম ১৩-১৪ টাকা হওয়া অযৌক্তিক।

“একটা ডিমের উৎপাদন করতে খরচ পড়ে ৫-৬ টাকা। এটা ৮ টাকা নেওয়া যেতে পারে, কিন্তু ১৩-১৪ টাকা কেন হবে?”

তবে বাংলাদেশ পোল্ট্রি ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলাম সম্প্রতি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেছিলেন, গত কয়েক মাস ধরে মুরগির খাদ্য তৈরির সামগ্রীর দাম বেড়ে গেছে আন্তর্জাতিক বাজারে, সেই সঙ্গে বেড়েছে জ্বালানি তেলের দাম, তার প্রভাব পড়েছে ডিমের বাজারে।

কয়েক মাসের ব্যবধানে ফার্মের মুরগি ও ডিম উৎপাদন খরচ প্রায় ২৫ শতাংশ বেড়ে গেছে বলে দাবি করেন তিনি। লোকসানে পড়ে অনেক খামার বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ডিম-মুরগি উৎপাদনও কমে গেছে বলে তার দাবি।

নজরুল হিসাব কষে দেখান, বর্তমান উৎপাদন খরচ হিসাবে খামারি পর্যায়ে একটি ডিমের দাম সাড়ে ৯ টাকা থেকে ৯ টাকা ৮০ পয়সা হওয়া উচিৎ।

খামারের ডিম খুচরায় যেতে বাড়ে ২ টাকা

খামারিরা যে ডিম ১০ টাকা ৫০ পয়সায় বিক্রি করেন, সেই ডিম ঢাকার খুচরা দোকানে প্রতিটি বিক্রি হয় ১২ থেকে ১২ টাকা ৫০ পয়সা টাকা দরে। অর্থাৎ মাঝের স্তর পেরিয়ে প্রতিটি ডিমে দাম বাড়ে দেড় থেকে দুই টাকা। 

ঢাকার খুচরা বিক্রেতারা বলছেন, তারা প্রতিটি ডিমে ২০ থেকে ৩০ পয়সার বেশি লাভ রাখেন না।

মহাখালীর পুষ্প জেনারেল স্টোরের মালিক হায়দার আলী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ‘আমরা তো আর লসে বিক্রি করব না। আমাদের কেনা দাম খরচসহ ১১ টাকা ২০ পয়সা থেকে সাড়ে ১১ টাকা পড়ে যায়। তাই ১২ টাকার কমে বিক্রি করলে আমাদের লাভ হচ্ছে না।”

খুচরা বিক্রেতাদের অভিযোগ, আড়তদার ও পাইকারী ব্যবসায়ীরা বেশি দামে ডিম সরবরাহ করায় ডিমের বাজারে এই অস্থিরতা।

আড়তদার আর পাইকাররা দেখাচ্ছেন এজেন্টদের

অনুসন্ধানে দেখা যায়, খামারি থেকে সরবরাহকারীর হাত ঘুরে পাইকারি বাজারে আসতে আসতেই ডিমের দাম প্রতিটিতে ৫০ থেকে ৬০ পয়সা বেড়ে যায়। এরপর তেজগাঁওয়ের আড়ত থেকে ঢাকার অন্যান্য পাইকারি বাজার থেকে খুচরায় গিয়ে ডিমের দাম আরও ১ টাকা বেড়ে যায়।

রাজধানীতে ডিমের সবচেয়ে বড় আড়তের একটি তেজগাঁওয়ে গিয়ে দেখা যায়, প্রতি একশ ডিম বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৫৫ থেকে ১ হাজার ৬০ টাকায়।

অর্থাৎ এই হিসাবে প্রতিটি ডিমের দাম পড়ে ১০ টাকা ৬০ পয়সা। তাদের কাছ থেকে পাইকার ও খুচরা বিক্রেতারা নিয়ে ডিম বিক্রি করেন আরও কিছু বেশি দামে।

তেজগাঁওয়ে ডিমের আড়তদার মেহেদী হাসান সবুজ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ‘মিডিয়া (সরবরাহকারী) আমাদের কাছে একশ ডিমের দাম ১০৪৫ টাকা চায়। ফলে আমাদের শ প্রতি ডিম বিক্রি করতে হয় ১০৫৫-১০৬০ টাকায়।”

ডিমের সরবরাহ কমে গেছে জানিয়ে তিনি বলেন, “আগে ৮০ হাজার থেকে এক লাখ ডিম আসত। এখন ৫০ হাজারও আসে না।”

আড়তদারদের অভিযোগ, স্থানীয় পর্যায়ে ডিম উৎপাদনকারী খামারিদের ঋণ দিয়ে নিজেদের কাছে জিম্মি করে রাখে কিছু ব্যক্তি, যাদের মিডিয়া, এজেন্ট, কালেক্টর এমন নামে ডাকা হয়। ডিম বিক্রির ক্ষেত্রে তাদের কাছেই বাঁধা থাকে খামারিরা।

মিরপুর ও তেজগাঁও এলাকার আড়তদাররা জানান, সারাদেশের বিভিন্ন এলাকার খামারিদের কাছ থেকে এভাবে ডিম সংগ্রহ করে পাইকারি বাজারে সরবরাহ করে ‘মিডিয়া’ বলে পরিচিত কিছু ব্যক্তি। তারা খামারের দামের চাইতে প্রতি একশ ডিমে ২০-৩০ টাকা বেশি দাম নিচ্ছে।

তেজগাঁওয়ের আরেক ডিমের আড়ৎ মালিক নাসির হোসেন বলেন, “খামার থেকে এক হাতে ডিম পাওয়া যায় না। চার-পাঁচ হাত ঘুরে ডিম আসে। চট্টগ্রাম, নারায়ণগঞ্জ, মুন্সিগঞ্জ, টাঙ্গাইল, সাভারে এসব জায়গায় কিছু মধ্যস্বত্বভোগী তৈরি হয়েছে, যারা ডিম সংগ্রহ করে ফেলে এবং বেশি দামে বিক্রি করে ডিমের দাম বাড়িয়ে রাখে। যে কারণে, আমরা কম দামে বাজারে ডিম পাই না।”

খামারে মুরগির খাবারের অতিরিক্ত দাম, গরমসহ বিভিন্ন অজুহাতে ডিমের উৎপাদন কমে যাওয়ার কথা বলে এসব ‘মিডিয়া’ ডিমের বাড়তি দাম হাঁকে বলে জানান মিরপুরের শাহ স্মৃতি মার্কেটের আড়তদাররা।

সেখানকার ডিম ব্যবসায়ী লোকমান ট্রেডার্সের মালিক মো. রাজীব বলেন, “লোকাল কালেক্টররা নানা অজুহাতে বাজারে ডিম ছাড়ছে না। ছাড়লেও দাম অনেক বেশি বলছে। আমরা মার্কেটে বিক্রি করতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছি।”

বাজারে ডিম ও মুরগির দাম হঠাৎ বেড়ে যাওয়ার পেছনে মধ্যস্বত্বভোগীদের ‘কারসাজি ছিল’ বলে সম্প্রতি দাবি করে বাংলাদেশ পোল্ট্রি ইন্ডাস্ট্রিজ সেন্ট্রাল কাউন্সিল- বিপিআইসিসি।

অগাস্টে দাম বৃদ্ধির পর তাদের এক বিবৃতিতে বলা হয়, “এ অনাকাঙ্ক্ষিত মূল্যবৃদ্ধির কারণ হিসেবে ডিমান্ড-সাপ্লাই গ্যাপ ও সুযোগ সন্ধানী মধ্যস্বত্বভোগীদের মুনাফা লোফার অপপ্রয়াস প্রধানত দায়ী।”

এজেন্টদের অস্বীকার

শুধু ঢাকা ও চট্টগ্রামের অন্তত ৩১টি স্থান থেকে ডিম নিয়ে খামারি ও আড়তদারের মাঝে বসে ব্যবসা করে নিচ্ছে এমন ৬৯ জনের নাম পাওয়া যায় অনুসন্ধানে।

তাদের মধ্যে খামারিদের কাছ থেকে ডিম সংগ্রহ করে ঢাকার পাইকারি আড়তে সরবরাহ করা একজন টাঙ্গাইলের সাগরদীঘি এলাকার আব্দুল জব্বার।

দাম বেশি নির্ধারণের বিষয়টি অস্বীকার করে তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “মূলত, ডিমের উৎপাদন কম বিধায় দাম বেশি। আমরা দাম বাড়াচ্ছি ব্যাপারটি এমন না। গত রাতেও আমি ১০৩০ টাকা প্রতি শ হিসেবে ঢাকায় ডিম দিয়েছি। আমরা শ প্রতি হয়ত ৫-১০ টাকা রেখে খামারিদের দাম দিই।”

টাঙ্গাইলের আরেক ব্যবসায়ী মো. ইলিয়াস বলেন, “আমরা খামার থেকে ডিম সংগ্রহ করে পাইকারি ও খুচরা হিসেবে বিক্রি করি। সাধারণত বিকালে দাম জানা যায়। আজ আমরা ছেড়েছি ১০২০-৩০ টাকা শ হিসেবে। খামারিরা প্রতি একশ ডিমে ১০০০ থেকে ১০১০ টাকা পাবে।”

এদিকে টাঙ্গাইল থেকে ডিম কিনে মুন্সিগঞ্জের আড়তে নিয়ে আসা ব্যবসায়ী আব্দুল মতিনের এক সহকারী বলেন, প্রতি ১০০ ডিমে ২০-৩০ টাকা লাভ করেন তারা।

এই মধ্যস্বত্বভোগীদের পাঁচজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, অনেক সরবরাহকারী এখন বড় কোম্পানিগুলোর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে। কোম্পানির দামের সঙ্গে তাল মিলিয়ে নির্ধারিত হয় ডিমের দাম।

প্রশ্নবিদ্ধ এক নিলাম

সাধারণত ডিমের দাম নির্ধারণ হয় নিলাম ডাকের মাধ্যমে। রাতে ঢাকার তেজগাঁওয়ের পাইকারি আড়তে ঢাকার চারপাশের জেলাগুলো থেকে ডিম আসে।

সেখানে নিলাম ডাকের মাধ্যমে ডিম কেনেন আড়তদাররা। নিলামে যে দামে ডিম কেনা হয়, তার উপর পরদিন খুচরা পর্যায়ে ডিমের বাজার নির্ভর করে।

তবে তেজগাঁওয়ের এই বাজারে আকারে ছোট খামারের ডিমগুলো আসে। ডিমের বড় বাজারের নিয়ন্ত্রণ কাজী ফার্ম, প্যারাগন আর ডায়মন্ডের মতো বড় খামারিদের হাতে। তাদের ডিমের নিলাম হয় অনলাইনে। সাধারণত ভিত্তিমূল্যের চেয়ে ২০ থেকে ৩০ পয়সা বেশি দরে শেষ হয় নিলাম। 

ডিম উৎপাদনকারী বিভিন্ন কোম্পানি ও খামার দাম নির্ধারণের ক্ষেত্রে আগের দিন বেলা ১১টা থেকে ১২টার মধ্যেই মোবাইলে এসএমএসের মাধ্যমে ডিমের একটি ভিত্তিমূল্য ঘোষণা করে বলে জানান তেজগাঁওয়ের দুজন ডিলার।

সেই ডিলার বা ডিস্ট্রিবিউটরদের কাছ থেকে পরে তারা দর নিয়ে থাকে, যা এ খাতে নিলাম হিসেবে পরিচিত। এরপর ডিলারদের দর শোনার পর কোম্পানিগুলো নিজেরা একটি দর নির্ধারণ করে দেয়।

তাদের এই নিলামকে ‘অদ্ভুত’ বলছেন বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশনের চেয়ারপারসন মো. মফিজুল ইসলাম।

কমিশন কার্যালয়ে গত ২৬ সেপ্টেম্বর এক শুনানিতে তিনি ডিমের নিলাম পদ্ধতির কথা শুনে বলেন, ‘আপনাদের বিজনেস পলিসি আমার পক্ষে বোঝা কঠিন। আমরা আশ্চর্য হয়ে যাচ্ছি।

“নিলামে সাধারণত সর্বোচ্চ দরদাতার দরের ওপর ভিত্তি করে দাম ঠিক হয়। কিন্তু আপনারা যেটা করছেন তাতে মনে হচ্ছে নিলাম শেষে নিজেরাই দাম ঠিক করছেন। এটা অদ্ভুত।’

খামারি ও পাইকাররাও বড় কোম্পানিগুলোর এই নির্ধারিত দরকে অনুসরণ করে থাকেন বলে জানা যায়।

তেজগাঁও এলাকার এক ডিম ব্যবসায়ী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ডিমের বাজারের বড় কোম্পানিগুলো অয়্যার হাউজে, অনলাইন নিলামের মাধ্যমে ডিম বিক্রি করে। তারা দুপুরে ডিমের দাম দিয়ে দিলে ফোনে ফোনে সব মিডিয়ারা (এজেন্ট) জেনে যায়। সে অনুযায়ী সবাই ডিমের দাম নির্ধারণ করে ফেলে।”

অভিযোগ মানতে নারাজ বড় কোম্পানিগুলো

দেশের ডিমের বিপণনে যুক্ত হয়েছে বড় কয়েকটি ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান। তাদের বেশিরভাগের নিজস্ব খামার আছে, আবার নির্দিষ্ট খামারির কাছ থেকেও ডিম সংগ্রহ করে তারা। পাশাপাশি ঢাকার আশপাশের সব ডিমের বাজারে তাদের পরিবেশকও রয়েছে।

তাদের দেওয়া সর্বনিম্ন দামেই ডিমের পুরো বাজার আটকে যাওয়ার অভিযোগ প্রসঙ্গে পিপলস গ্রুপের একটি ডিপোর ম্যানেজার নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এমন অভিযোগের কোনো ভিত্তি নেই, খামারি পর্যায়ে যে দাম থাকে, আমরা সেই দামেই বিক্রি করি।”

অন্যদিকে কাজী ফার্মসের একজন ব্যবস্থাপক বলেন, “আমরা বাজার অনুযায়ী সর্বনিম্ন একটা রেট দেই। নিলামে এসে ক্রেতাদের কেউ কেউ তার ডিম নিশ্চিত করে উঁচু রেট দিয়ে দেয়। এই দায় তো আমাদের না।”

বাজার নিয়ন্ত্রণের অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “আমরা সারাদেশের ডিমের বাজারের সর্বোচ্চ ২.৫ থেকে ৩ শতাংশ ধারণ করি। ফলে, আমরা বেশি দামে বিক্রি করে বাজারে দাম বাড়িয়ে ফেলব এটি সঠিক নয়।”

বাংলাদেশ পোল্ট্রি খামার রক্ষা জাতীয় পরিষদের মহাসচিব খন্দকার মো. মহসিন বলেন, “কোনো কোম্পানি বা সিন্ডিকেটের কথায় দাম নির্ধারিত হয় না। সাধারণ খামারিরা যেদিন যে দাম ডিম ছাড়ে আমরা সেই দামটাই নিজেদের নেটওয়ার্কের মাধ্যমে জেনে সবাইকে জানিয়ে দেই। গতকাল দাম ছিল প্রতি শ ১০৫৫ টাকা, আজ আরও ২০ টাকা কমেছে।”

কী বলছে কর্তৃপক্ষ

ডিমের বাজারে মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্ম্যের বিষয়ে জানতে চাইলে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) এ এইচ এম সফিকুজ্জামান বলেন, “মাঝে আগাস্টে যখন দাম বাড়ে তখন আমরা ব্যাপক অভিযান চালিয়েছি। তখন কমে এসেছিল দাম। সেই সাথে আমরা ডিমের দাম নিয়ন্ত্রণে সরকারের কাছে কিছু সুপারিশও করেছি।

“সেখানে এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলা আছে। সেই সাথে একটি বড় কোম্পানির বিরুদ্ধে প্রতিযোগিতা কমিশনে মামলা হয়েছে।”

নতুন করে ডিমের বাজার উর্ধ্বমুখী হওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “আমি জানতে পেরেছি সংশ্লিষ্টরা বলছে খাবারের দাম, বাচ্চার দাম বাড়ায় ডিমের দাম বাড়ছে। এখন আমাদের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে দেখতে হবে কীভাবে এসব বিষয় নিয়ন্ত্রণ করে পোল্ট্রি খাতকে নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়।”

বাজার নিয়ন্ত্রণের বিষয়ে বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশনের সদস্য জি এম সালেহ উদ্দিন বলেন, “ডিম নিয়ে ব্যাবসা করা বড় প্রতিষ্ঠানগুলো যে অস্বাভাবিক প্রতিযোগিতা করছে, এ ব্যাপারে আমাদের কমিশন থেকে মামলা হয়েছে, মামলার শুনানি চলছে।”